পালকিতে চড়ে মর্ত্যে এলেন দেবী দুর্গা, সকালে ষষ্ঠী
৮ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:০২
ঢাকা: এক বছরের অপেক্ষার পালা শেষ। শারদোৎসবের আগমনী সুর এখন বাঙালি সনাতন সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অবারিত মঙ্গলধ্বনির বার্তা নিয়ে যে দেবী দুর্গা পা রাখছেন মর্ত্যলোকে। দেবীতে লোকালয়ে বরণ করে নিতেই এখন ব্যস্ত ভক্তকূল। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কোনো কিছুতেই যেন কমতি না থাকে দেবীকে এক বছর পর ঘরে পাওয়ার আনন্দের মুহূর্তে— তা নিয়েই সচেষ্ট সবাই।
এমন সাজ সাজ রবের মধ্য দিয়েই মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) পঞ্চমীর সন্ধ্যায় হয়ে গেছে দেবী দুর্গার বোধন। বুধবার (৯ অক্টোবর) সকালে ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠনিকতা। শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দ-উল্লাস।
বোধন কী?
বোধন শব্দের অর্থ চৈতন্যপ্রাপ্তি বা জাগরণ। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অন্যতম আচার। সাধারণত শুক্লাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন হয়ে থাকে। তবে এবার তিথি অনুযায়ী পঞ্চমীতেই বোধন হয়েছে।
শাস্ত্রমতে, শরৎকাল যেকোনো দেবদেবীর নিদ্রাকাল। পৃথিবীর এক বছরের সমান স্বর্গের একদিন। তাই সূর্যের উত্তরায়নকে বলা হয় দেবতাদের দিন, দক্ষিণায়নকে বলা হয় দেবতাদের রাত। সূর্যের এই উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন উভয়ই চলে ছয় মাস করে।
ধারণা করা হয়, উত্তরায়ণের সময় সব দেবদেবী জাগ্রত অবস্থায় থাকেন বলে সেই সময় সব দেবদেবীর পূজা করা হয়। বিপরীতক্রমে দক্ষিণায়নের সময় দেবদেবীরা নিদ্রায় মগ্ন থাকেন বলে এই সময়ে তাদের পূজা-অর্চণা খুব একটা করা হয় না। শরৎকাল সেই দক্ষিণায়নের অংশ।
পুরাণ অনুযায়ী, রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করতে সেই শরতেই দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান করে পূজা করেছিলেন ভগবান রামচন্দ্র। দক্ষিণায়নে মা দুর্গার পূজা বলে এর আগে বোধন করে দেবীর ঘুম ভাঙাতে হয়েছিল ভগবান শ্রী রামকে। দেবীকে নিদ্রা থেকে জাগিয়ে এই পূজা করার পদ্ধতিকেই বলা হয় ‘বোধন’। দক্ষিণায়নের ‘অকালে’ বোধন হওয়ার কারণেই দেবী দুর্গার আহ্বানকে অকালবোধনও বলা হয়ে থাকে।
রাত পোহালে ষষ্ঠী
এ বছর বুধবার (৯ অক্টোবর) হবে ষষ্ঠী পূজা। তিথি অনুযায়ী আগের দিন আজ মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়ে গেছে এই পূজার বিভিন্ন রীতি। ষষ্ঠীতে কল্পারম্ভ ও দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস শেষে মাতৃরূপে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ঠাঁই করে নেবেন বিশ্বব্যাপী মঙ্গল ধ্বনি দিয়ে কৈলাশ ছেড়ে মর্ত্যে আসা মা দুর্গা।
ষষ্ঠী পূজার আনুষ্ঠানিকতা প্রসঙ্গে রমনা কালীমন্দিরের প্রধান পুরোহিত হরি চাঁদ চক্রবর্তী বলেন, ষষ্ঠী পূজায় বিল্ব বৃক্ষের নিচে মাকে ষষ্ঠাধী কল্পারম্ভ, ষষ্ঠীবিহিত পূজা করা হয়। এর মাধ্যমে মাকে মন্দিরের আঙিনায় স্থাপন করা হয়। পরদিন বিল্ব বৃক্ষের নিচে মাকে স্নান করে মন্দিরে স্থাপন করা হবে।
ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমেই দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় উল্লেখ করে হরি চাঁদ বলেন, মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা, মা তুমি বিশ্বের সব জীবকে শান্তি দাও। সবাইকে তুমি ভালো রাখো, সুস্থ রাখো।
ষষ্ঠী থেকে দশমী— কোন সময় কী পূজা
মহালয়াতে দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজে। আর বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। দশমী শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার দুর্গাপূজায় মহাষষ্ঠী আগামীকাল বুধবার (৯ অক্টোবর, ২২ আশ্বিন)। মহাসপ্তমী পড়েছে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর, ২৩ আশ্বিন)।
আগামী শুক্রবার (১১ অক্টোবর, ২৪ আশ্বিন) পড়েছে মহাঅষ্টমী। মহানবমী পড়েছে শনিবার (১২ অক্টোবর, ২৫ আশ্বিন)। আর পঞ্জিকামতে শনিবার (১২ অক্টোবর, ২৫ আশ্বিন) রাতে শুরু হয়ে বিজয়া দশমী চলবে রোববার (১৩ অক্টোবর, ২৬ আশ্বিন) সকাল পর্যন্ত।
এ বছর দেবী দুর্গা আগমন ঘটছে দোলায় চড়ে। দোলায় দেবীর আগমনকে অশুভ বলে মনে করা হয়। বলা হয়, এতে পৃথিবীর ওপর খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে এ বছর দেবী দুর্গা কৈলাশে ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে, যেটিও অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। সে হিসাবে এ বছর মহামারি বা মড়ক, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধ, অতিমৃত্যুর মতো দুর্যোগের শঙ্কা রয়েছে।
পূজা মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
রাজধানীসহ সারা দেশেই বিভিন্ন সর্বজনীন পূজা মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দুর্গাপূজা ঘিরে মূর্তি কারিগরদের কাজ শেষ। প্রতিমা গড়ার কাজ তারা শেষ করেছেন আগেই। রঙ-তুলির কাজও শেষ হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার বোধনের আগে শেষ তুলির আঁচড়সহ অলংকার পরানোর কাজও শেষ করেছেন তারা। তাদের নিপুণ হাতে দেবী দুর্গা কেবল নয়, লক্ষ্মী-সরস্বতী, গণেশ-কার্তিকসহ অন্য দেবতারাও যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছেন মণ্ডপে মণ্ডপে।
পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন থিম নিয়ে শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত বিশাল বিশাল প্যান্ডেলের কাজে থাকা কারিগররাও। কাজের দক্ষতা দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের পাশাপাশি ডেকোরেটররা এখন ব্যস্ত আলোকসজ্জা নিয়েও।
ভক্তরাও বসে নেই। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে চলছে মুড়ি-নাড়ু, মিষ্টি বানানোর ধুম। প্রতিটি বাড়িতেই উৎসবের আবহ, দশভূজা মাকে বরণের আয়োজনে যেন কমতি না থাকে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর