প্রোটিন নিয়ে গবেষণায় রসায়নে নোবেল ৩ বিজ্ঞানীর
৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৩১
প্রোটিনের গঠন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে প্রোটিনের গঠন নির্ণয়ের প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তিন বিজ্ঞানীকে রসায়নে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করেছে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস। মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার এবং দুই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ডেমিস হাসাবিস ও জন এম জাম্পার যৌথভাবে পেয়েছেন এই পুরস্কার।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইনের জন্য এই পুরস্কারের অর্ধেক পেয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার। অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে প্রোটিনের গঠন অনুমানের প্রযুক্তির জন্য বাকি অর্ধেক যৌথভাবে পেয়েছেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ডেমিস হ্যাসাবিস ও মার্কিন বিজ্ঞানী জন এম জাম্পার।
প্রোটিন একটি বড় ও জটিল অণু, যা শরীরের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর গাঠনিক একক অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা অসংখ্য পরিমাণে দীর্ঘ শৃঙ্খলের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রোটিন গঠন করে। ২০ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে, যেগুলো কোন ক্রমানুসারে সাজানো হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে প্রোটিনের গঠন ও কার্যকারিতা নির্ধারিত হয়।
রসায়নে নোবেল পুরস্কার বাছাই কমিটির চেয়ার হেইনার লিনকে বলেন, এ বছর যে উদ্ভাবনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা হলো প্রোটিনের গঠন। অন্য যে বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সেটিকে ৫০ বছরের স্বপ্নপূরণ বলা যায়— অ্যামাইনো অ্যাসিডের ক্রম থেকে প্রোটিনের গঠন অনুমান করা। দুটি উদ্ভাবনই অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।
নোবেল কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২০০৩ সালে ডেভিড বেকার অ্যামাইনো অ্যাসিডের ব্লক ব্যবহার করে একটি নতুন প্রোটিনের নকশা তৈরি করতে সক্ষম হন, যা প্রচলিত সব প্রোটিনের চেয়ে আলাদা। এরপর থেকে তার গবেষণা দল একের পর এক প্রোটিন তৈরি করে গেছে, যেগুলো কি না ওষুধশিল্প ও ভ্যাকসিনসহ ন্যানোম্যাটেরিয়অল ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেন্সরেও ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে অ্যামাইনো অ্যাসিডের ক্রম বিবেচনায় নিয়ে প্রোটিনের গঠন অনুমানের চেষ্টা বিজ্ঞানীরা গত শতকের সত্তরের দশক থেকে করে আসছেন। তবে তাতে শেষ পর্যন্ত সাফল্য মিলেছে মাত্র চার বছর আগে— ডেমিস হাসাবিস ও জন জাম্পারের হাত ধরে। এই দুই বিজ্ঞানী আলফাফোল্ড২ নামে এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল তৈরি করেন যেটি দিয়ে এখন পর্যন্ত গবেষকদের খুঁজে পাওয়া ২০ কোটি প্রোটিনের সবগুলোর গঠনই অনুমান করা সম্ভব হয়েছে। এরপর থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই মডেলটি বিশ্বের ১৯০টি দেশে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ ব্যবহার করে আসছেন। এর মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মতো বিষয়গুলো নিয়ে মানুষের বোঝাপড়া আরও স্পষ্ট হয়েছে, প্লাস্টিককে পচানোর মতো এনজাইমের প্রতিরূপ পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে।
নোবেল কমিটি বলছে, প্রোটিন ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব অসম্ভব। মানবজাতির জন্য জন্য সেই প্রোটিনের গঠন অনুমান করার পাশাপাশি নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রোটিন তৈরির মতো উদ্ভাবনের চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না।
এর আগে গত বছর রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান ফ্রান্সের মুঙ্গি বাওয়েন্ডি, যুক্তরাষ্ট্রের লুই ব্রুস ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আলেক্সি ইয়াকিমভ। ‘কোয়ান্টাম ডট আবিষ্কার ও সংশ্লেষণে’র জন্য এই তিন বিজ্ঞানীকে রসায়নে নোবেল দেওয়া হয়।
১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এই পুরস্কার। নোবেল পুরস্কার হিসেবে পদক ও সনদপত্রের পাশাপাশি ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা বা ১০ লাখ ৬৭ হাজার ডলার (ডলার ১২০ টাকা দরে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার টাকা) দেওয়া হয়।
অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয় সোমবার। গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়েছে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার। আজ ঘোষণা করা হলো রসায়নের নোবেলজয়ীদের নাম। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সাহিত্য ও শুক্রবার শান্তিতে এ বছরের নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। সবশেষে আগামী ১৪ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম।
সারাবাংলা/এমপি/টিআর