সাহিত্যে নোবেল পেলেন কোরিয়ান লেখিক হান কাং
১০ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৩৫ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:২৫
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিক হান কাং। ‘মানুষের ওপর নিপীড়নের ইতিহাসের পাশাপাশি মানবজীবনের ভঙ্গুরতার অনবদ্য কাব্যময় গদ্যে’র জন্য তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সুইডেনের স্থানীয় সময় বিকেল ১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। নোবেলজয়ী কাং এর আগে ২০১৬ সালে ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাসের জন্য ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছিলেন।
দ্য সুইডিশ একাডেমি বলছে, হান কাংয়ের সৃষ্টিকর্মে বিস্তৃতভাবে উঠে এসেছে ঐতিহাসিক সেইসব নিপীড়নের কথা, যার অভিঘাতে ভুগতে হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। তুলে ধরেছেন সেইসব অদৃশ্য নিয়মকে, যা মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে চলে। কাংয়ের লেখায় উঠে এসেছে মানবজীবনের ভঙ্গুরতার কথা।
একাডেমি আরও বলছে, শরীর ও আত্মা এবং জীবিত ও মৃত সত্তার মধ্যে এক গভীর সংযোগের কথা অনন্য সচেতনভাবে ধারণ করেন কাং। কাব্যময় ও নিরীক্ষাধর্মী গদ্যকাঠামো দিয়ে কাং সমসাময়িক গদ্যের জগতে এক উদ্ভাবকে পরিণত হয়েছেন।
হান কাংয়ের জন্ম ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গুয়াংজোতে। তবে ৯ বছর বয়সেই তিনি পরিবারের সঙ্গে রাজধানী সিউলে চলে যান। হান কাংয়ের বাবা হান সিউং-ওন দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত ঔপন্যাসিক। ভাই হান ডং রিমও একজন লেখক।
ওনসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যের শিক্ষার্থী কাং প্রথম সাহিত্য জগতে পরিচিতি পান ২৩ বছর বয়সে, ১৯৯৩ সালে ত্রৈমাসিক লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটিতে পাঁচটি কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে। ওই পাঁচটি কবিতার মধ্যে ‘উইন্টার ইন সিউল’ বিশেষভাবে সমাদৃত হয়। গদ্যে আত্মপ্রকাশ দুই বছর পর— ১৯৯৫ সালে, গল্প সংকলন ‘লাভ অব ইয়েওসু’ প্রকাশের মাধ্যমে।
২০০২ সালে ‘ইওর কোল্ড হ্যান্ডস’-এর মাধ্যমে উপন্যাসের জগতেও সাড়া ফেলেন তিনি। তবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম স্বীকৃতি পান ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাসের মাধ্যমে। তিন খণ্ডের এই উপন্যাসের মূল চরিত্রে থাকা তরুণীটি সব ধরনের মাংস খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তাকে পরিবর থেকে শুরু করে সবখানে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে হয় এবং শেষ পর্যন্ত একটি মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি হতে হয়। ব্যক্তিমানসের এই করুণ আর্তনাদ প্রস্ফূটিত হওয়া সেই আখ্যান তাকে ম্যান বুকার পুরস্কার এনে দিয়েছিল।
এর আগে ২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান নরওয়ের লেখক ও নাট্যকার ইয়োন ফসে। ২০২২ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন ফরাসি লেখক আনি এরনো। আর ২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেল পান তানজানিয়ান-ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক আবদুলরাজাক গুরনাহ।
১৯০১ সাল থেকে প্রতিবছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এই পুরস্কার। নোবেল পুরস্কার হিসেবে পদক ও সনদপত্রের পাশাপাশি ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা বা ১০ লাখ ৬৭ হাজার ডলার (ডলার ১২০ টাকা দরে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৪০ হাজার টাকা) দেওয়া হয়।
অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও চিকিৎসায় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয় সোমবার। মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয় পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার, বুধবার রসায়নে নোবেলজয়ীদের নাম। আজ বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা হলো। আগামীকাল শুক্রবার ঘোষণা করা হবে শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম। সবশেষে আগামী ১৪ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম।
সারাবাংলা/এনজে/টিআর