মহাসপ্তমীতে চট্টগ্রামের মণ্ডপে-মণ্ডপে পূজার্থীদের ভিড়
১০ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৫২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর প্রথমদিন মহাসপ্তমীতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ভক্তদের সমাগমে মুখর হয়ে ওঠে। নতুন পোশাক গায়ে জড়িয়ে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা সকাল থেকে মণ্ডপে-মণ্ডপে ঘুরছেন। দেবীর দর্শন শেষে দুপুরে বিভিন্ন মণ্ডপে সমবেত হয়ে পুষ্পাঞ্জলী নেন সর্বস্তরের ভক্তরা।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকেই চট্টগ্রাম নগরীর বড় বড় পূজামণ্ডপগুলো উৎসবমুখর দেখা যায়। নববস্ত্র, ফুল-ফল, দ্বীপ-ধূপে দেবীর পূজার পর অনেক মণ্ডপে দুপুরে প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রসাদ নেন শত, শত, ভক্ত নরনারী। শাস্ত্র অনুযায়ী, মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে দেবী দুর্গা পূজিত হয়েছেন।
বিকেল থেকে সন্ধ্যারতি এবং দেবী দর্শনের জন্য মণ্ডপগুলোতে ভিড় আরও বাড়তে শুরু করে।
সন্ধ্যায় নগরীর জেএম সেন হল, রামকৃষ্ণ মিশন, কৈবল্যধাম, হাজারীগলি, গোসাইল ডাঙা, কুসুমকুমারী উচ্চ বিদ্যালয়, চেরাগি পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপে ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি চলছে সন্ধ্যার পূজা অর্চনাও।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেলা ১২টার দিকে পূজা মণ্ডপগুলোতে অঞ্জলি প্রদান করা হয়েছে। তখন মণ্ডপে ভক্তদের বেশ ভিড় ছিল। নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত আছে। এছাড়া প্রতিটি মণ্ডপ সিসি ক্যামরার আওতায় আছে। সন্ধ্যা থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় আরও বেড়েছে।’
এর আগে দুপুরে নগরীর কুসুমকুমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পূজামণ্ডপ সিটি করপোরেশনের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। এসময় বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তা দেখতে বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর চান্দগাঁও এলাকার কয়েকটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ।
এবারের দূর্গাপূজা ও উৎসবের নিরাপত্তায় নগরীতে প্রায় দুই হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছেন বলেন জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে কমিশনার মহোদয় চান্দগাঁও এলাকার বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন। এবার চট্টগ্রাম নগরীতে ১ হাজার ১০০ জন পুলিশ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। ২৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তা সাদা পোশাকে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া থানায় কর্মরত পুলিশরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন।’
চট্টগ্রামে এবার শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২ হাজার ৪৫৮টি মণ্ডপে। এর মধ্যে নগরীতে ২৯৩টি ও জেলার ১৫টি উপজেলায় পূজামণ্ডপ আছে ২ হাজার ১৬৫টি। জেলার ১৫টি উপজেলায় ২ হাজার ১৬৫টি মণ্ডপের মধ্যে প্রতীমা পূজা ১ হাজার ৫৯৪টি বাকিগুলো ঘটপূজা।
পূজামণ্ডপের মধ্যে আনোয়ারা উপজেলায়া ২৯৯, কর্ণফুলীতে ২৮, মিরসরাইয়ে ৯০, সীতাকুণ্ডে ৬৭, সন্দ্বীপ ৩০, ফটিকছড়িতে ১২৩, হাটহাজারীতে ১১৪, রাউজানে ২২৮, রাঙ্গুনিয়ায় ১৬১, বোয়ালখালীতে ১৪৬, পটিয়ায় ১৯৫, চন্দনাইশে ১২৮, সাতকানিয়ায় ১৮৪, লোহাগাড়ায় ১১১ ও বাঁশখালীতে ২৫০টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে।
শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে তিনটি স্থানে এবারও প্রতিবছরের মতো শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীতে কুমারী পূজার আয়োজন হয়েছে। মণ্ডপগুলো হলো- নগরীর পাথরঘাটায় হরেশচন্দ্র মুন্সেফ লেইনে শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দির,রাজাপুর লেইনে শ্রী শ্রী পঞ্চমাতা বিগ্রহ মন্দির এবং সীতাকুণ্ড উপজেলায় ভোলানাথগিরি সেবাশ্রম। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করাই কুমারী পূজা। শাস্ত্র মতে, এদিন মা দুর্গার অন্য কোনো নামে কুমারীর নামকরণ করা হবে।
সারাবাংলা/আইসি/এসআর