Thursday 07 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নতুন বাংলাদেশে’ও পুরানো ঢঙে ছাত্রদল

আরফাতুল ইসলাম নাইম, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১০ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৩৯

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনর জেরে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ফের রাজনীতিতে সচল হয়েছে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সেইসঙ্গে সচল হয়েছে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলোও। এরই মধ্যে অধিকাংশ ছাত্রসংগঠন রূপরেখা প্রণয়ন করে নতুনভাবে রাজনীতি শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের বড় ছাত্রসগংঠনগুলোর অন্যতম হয়েও এখনো রাজনীতির নতুন রূপরেখা ও ঢাবিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এমনকি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত ঢাবি ছাত্রদলের সাত জনের কেউ-ই বর্তমানে শিক্ষার্থী ছাত্র নন বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সেই পুরানো পদ্ধতিতেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। প্রতিদিন মধুর ক্যান্টিন কিংবা টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করলেও তাদের শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি। সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক কোনো দিকনির্দেশনা নেই। তাই, সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম চালাচ্ছি না। ক্যাম্পাসে আসছি, আমাদের নেতাকর্মীরা আসছেন। তারা দেখা করছেন, চলে যাচ্ছেন। এর বাইরে আমাদের আপাতত কোনো কার্যক্রম নেই।’

বিজ্ঞাপন

বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের পদধারী এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম হিসেবে সাপ্তাহিক একটা পাঠচক্র শুরু করেছি। প্রতি সোমবার পাঠচক্রটা করে থাকি। এর বাইরে আপাতত কোনো কার্যক্রম নেই।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিগত দুই মাসে আমাদের বিভাগে তেমন কোনো কাজ করতে দেখিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা কোনো কাজ করেছে- এমন কিছু আমার চোখে পড়েনি।’

ঢাবি জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাহমিদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের নিয়ে বা তাদের জন্য তেমন কোনো কাজ করছে বলে আমার মনে হয় না। ছাত্রদের জন্য বা তাদের নিয়ে কাজ করতে হলে সবসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকতে হবে। কিন্তু তারা নিজেরাই তো শিক্ষার্থী না। আমাদের সঙ্গে মিশবে কিভাবে? এ কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠছে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার পতন নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে একটি সংবাদ সম্মেলনেও করেছি আমরা। এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী দিনে ছাত্ররাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের বার্তা আমরা দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী বৃহৎ সংগঠন হিসেবে ছাত্রদল সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা অবগত আছেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ এরই মধ্যে সারাদেশে তাদের সাংগঠনিক সফর করছে। এর মাধ্যমে তারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। এই মতবিনিময় শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে ছাত্রদল আনুষ্ঠানিক রূপরেখা প্রকাশ করবে।’

ঢাবিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই ছাত্রদলের

জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে প্রতিটি ছাত্রসংগঠনই নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছে রাজনীতিতে। তার পরিপ্রেক্ষিতে, প্রতিটি ছাত্রসংগঠন নতুনভাবে কমিটি প্রণয়ন করলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাবি শাখা।

যদিও চলতি বছরের মার্চে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা দুটি ভিন্ন ভিন্ন চিঠিতে সাত সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় ও সাত সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। এর পর মার্চে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলেও সাত মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশের ব্যাপারে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রদলের ঢাবি শাখার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রস্তুতি অনেকটা শেষ করেছিলাম। কিন্তু জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে সেই কার্যক্রম থেমে যায়। এখন পরিবর্তিত এই রাজনৈতিক বাস্তবতায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন করব। এর মধ্য দিয়ে আমরা তাদের নতুন বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রস্তুত করে তুলব।’

ছাত্রত্ব নেই ছাত্রদল নেতাদের

মার্চে কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রদলের আংশিক কমিটি প্রণয়ন করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাত জন ও ঢাবি ছাত্রদলের সাত জনসহ মোট ১৪ জনের কারও ছাত্রত্ব নেই। ফলে অছাত্র দিয়ে রাজনীতি চালানোর সেই পুরানো অভ্যাস থেকে বের হতে পারেনি তারা।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে। সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আফসান ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে, জাহাঙ্গীর আলম ২০০৭-০৮ এবং শরিফ প্রধান ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।

এছাড়া, ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহসের শিক্ষাবর্ষ ২০১০-২০১১ এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনের শিক্ষাবর্ষ ২০১১-২০১২। কমিটির অন্যান্যদের মধ্যে সিনিয়র সহসভাপতি মাসুম বিল্লাহ ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে, সহসভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন শাওন ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শামীম আক্তার শুভ ২০১১-১২ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভুইয়া ইমন ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

টেন্ডার-চাঁদাবাজির অভিযোগ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে

এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলসহ বর্তমান ও সাবেক অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডারের খোঁজ নিচ্ছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা’ এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, কলাবাগান, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলসহ স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে পানি বিক্রি করেন সোহেল রানা। সারাবাংলাকে তিনি জানান, তাকে পানি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী। অথচ সেখানে তিনি দুই বছর ধরে পানি বিক্রি করছেন। এছাড়াও, ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে চার শিক্ষার্থীকে মারধর ও রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। যদিও নির্যাতনকারীরা তাদের নেতাকর্মী না বলে জানিয়ে দিয়েছে ছাত্রদল।

এ বিষয়ে জানতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম

ছাত্রদল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর