খেলে গলা চুলকায়— সেই কচুর লতির কেজি ১০০ টাকা
১১ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে প্রায় সব ধরনের শাকসবজির দাম গত সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে। আলু, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া— হাতেগোনা এ রকম কয়েকটি সবজি ছাড়া বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। বেগুন, কাকরোলসহ কিছু সবজির দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
শাকসবজি কিনতে গিয়ে নাকাল হতে হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষকে। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর হেমসেন লেইন কাঁচাবাজার থেকে এক আঁটি কচুর লতি ১০০ টাকায় কেনেন স্থানীয় বাসিন্দা সুদর্শন বড়ুয়া। লতির আঁটি হাতে নিয়ে হেসে বিক্রেতাকে আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন, ‘কচুর লতি, হাইলে গলা চুলকায়, কিনতাম গেইলে হাত চুলকায়।’ (কচুর লতি খেলে গলা চুলকায়, কিনতে গেলে হাত চুলকায়)।
নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার সবজির আড়ত ও পাইকারি বাজার হলেও গলির হেমসেন লেন কাঁচাবাজারের শাকসবজির দামের সঙ্গে এর তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
দামের ক্ষেত্রে কয়েকটি সবজি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে, কয়েকটি তো শতক পেরিয়ে দেড় শতকের দিকে ধাবমান। আর শীতের সবজি যেগুলো একটু আগেই বাজারে আসতে শুরু করেছে, সেগুলো দ্বিশত-ত্রিশতকের ঘরেও পৌঁছে গেছে।
সবজির মধ্যে বেগুন প্রতিকেজি মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, কাকরোল ১২০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, দেশি গাজর ১১০ টাকা, চায়না গাজর ১৬০ টাকা, বরবটি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত ফুলকপি মানভেদে ১৭০ থেকে ৩০০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, মূলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শিম ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যেসব সবজির দাম তুলনামূলক কম, সেগুলোর মধ্যে কচুরমুখী ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, আলু মানভেদে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০০ টাকার চেয়ে বেশি দাম বেড়ে কাঁচামরিচ ৪০০ টাকা ও ধনে পাতা ৩৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বৃহস্পতিবার।
শাকের দাম যদিও নাগালের মধ্যে বলছেন বিক্রেতারা, কিন্তু সেটাও কিছুটা বেড়েছে। লালশাকের আঁটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পাটশাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, পুঁইশাকের বিচি ১২০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মূলাশাক ৪০ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, হলুদ ফুল ৪০ টাকা, কলার মোচা প্রতি পিস ৮০ টাকা, কচুশাক ২৫ টাকা, কলমি শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা ও পালংশাক ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি কচুর লতি প্রতি আঁটি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় এবং সরু লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে নগরীর নন্দনকানন এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারের অবস্থা ভালো না। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়তি, মানুষের নাগালের বাইরে। করলা গত সপ্তাহে ৬০-৭০ টাকা কিনেছি, আজ দাম ডাবল। বাজার থেকে এক ডজন ডিম কিনেছি ১৭০ টাকা দিয়ে। বাসার পাশের দোকানে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। দুই হাজার টাকা নিয়ে বাজারে এসেছিলাম। সবজি আর ডিম কিনতেই টাকা চলে গেছে।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারের শাক বিক্রেতা মোহাম্মদ আসিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শাক আনি দোহাজারি থেকে। গত দুই সপ্তাহ ধরে সেভাবে শাক আসছে না। কেন আসছে না, আমরা জানি না। আমরা পাচ্ছি না। সেজন্য বাজারে মালের সংকট হয়েছে, দাম বেড়ে গেছে।’
একই বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে আড়তে সবজি আসে বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে। দুই মাস আগে একটা বন্যা গেছে। এখনো কয়েক জেলায় বন্যা চলছে। বৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিনি। এ জন্য আড়তে সবজি আসছে না। বাজারে সরবরাহ না থাকলে দাম তো বাড়বে।’
শাকসবজির মতো স্বস্তি নেই মাছ-মাংসের বাজারেও। প্রায় সব মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, যেগুলোর দাম মোটামুটি স্থিতিশীল আছে।
মুরগির ডিমের দামও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। রিয়াজউদ্দিন বাজারে মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। গত সপ্তাহের চেয়ে দাম অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া হাঁসের ডিম ডজনপ্রতি ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মাংসের দামও কিছুটা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকা, সোনালী মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৪০ টাকা, গরুর মাংস হাড় ছাড়া ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ৯৫০ টাকা এবং হাড়সহ ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডালসহ বিভিন্ন শুকনো পণ্যের দামও। নগরীর আসকার দিঘীর পাড়ে রাজীব স্টোরে বৃহস্পতিবার কাটারিভোগ আতপ ২৫ কেজির বস্তা দুই হাজার টাকা, বেতি আতপ ৩২০০ থেকে ৩২৫০ টাকা, হাফসিদ্ধ নাজিরশাইল ২২০০ টাকা, চিনিগুড়া ১৫০ টাকা ও পাইজাম আতপ ১৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে বলে জানালেন দোকানি রিপু নাথ।
একই দোকানে চিনি প্রতিকেজি ১৩৫ টাকা, মসুর ডাল বড় ১৫০ টাকা ও ছোট ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, চনার ডাল (বুটের ডাল) ১৫০ টাকা, পুষ্টি সয়াবিন তেল ৫ লিটার ৮১০ টাকা ও রূপচাঁদা ৮৪০ টাকা, পেঁয়াজ ১১০ টাকা, আদা ৩০০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা, মুড়ি প্রতিকেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দোকানি রিপু নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত সপ্তাহের চেয়ে চিনি কেজিতে পাঁচ টাকা, পেঁয়াজ ১০ টাকা, চনার ডাল ৩০ টাকা, সয়াবিন তেল পাঁচ লিটারে ৩০ টাকা, রসুন ২০ টাকা, আদা ৬০ টাকা ও মুড়ি ১০ টাকা বেড়েছে। কেন বেড়েছে, কোনো ব্যাখা নেই। কোম্পানি এসে তেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কেন বাড়াচ্ছে, সেটা আমাদের বলছে না। পাইকারিতে পেঁয়াজ, চিনি, ডাল সবকিছুর দাম বাড়ছে। কেন বাড়ছে, আমরা জানি না। আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে, বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
কাঁচাবাজার চট্টগ্রাম ডিমের দাম মাছের দাম মাংসের দাম মুরগির দাম সপ্তাহের বাজার সবজির দাম