বেরোবিতে ২ শিক্ষকের কারণে সম্মাননা প্রত্যাখান উপদেষ্টা নাহিদের
১৩ অক্টোবর ২০২৪ ০০:০৭
রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখ্যান করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী দুই ডিনকে সম্মাননা দেওয়ায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১২ অক্টোবর) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৬ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রশাসনের আমন্ত্রণে ক্যাম্পাসে আসেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এর পর প্রধান ফটক উদ্বোধন, র্যালি শেষে দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এ সময় অভিযোগ ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনবিরোধী দুই শিক্ষককেও সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়েছে। এ কথা জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখ্যান করেন নাহিদ ইসলাম।
আলোচনা সভায় প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোচনা সভায় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যখন প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন একাধিক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে দাঁড়ানো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র রায়কে এবং আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সাবেক সভাপতি ও শিক্ষার্থী আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত কলাম লেখক কলা অনুষদের ডিন ড. শফিক আশরাফকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়েছে। আমরা এর বিরোধিতা করছি। তাদের সম্মাননা দেওয়া মানে আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা।’
শিক্ষার্থীদের এমন বক্তব্যের পর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্মাননা স্মারকটি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যে অভিযোগ তুলেছেন, আমি তা জানতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি মহোদয় যেন আপনাদের অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। হয়তো একদিন ফ্যাসিবাদমুক্ত বেরোবিতে এসে আপনাদের দাবি পূর্ণ করতে পারব। সেদিন প্রকৃত সম্মাননা গ্রহণ করব।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শাওকত আলী বলেন, ‘আবু সাঈদ হত্যাসহ হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে খুব দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করার অভিযোগ অস্বীকার করে তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুকে পোস্ট দেন কলা অনুষদের ডিন ও নীলদলের সাবেক সভাপতি ড. শফিক আশরাফ। তিনি ওই পোস্টে লেখেন, ‘আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর সর্বপ্রথম কলা অনুষদ শোক প্রস্তাব জানিয়েছিল। আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর কলা অনুষদের ডিন জানাজায় ছুটে গিয়েছিল। আজকে কলা অনুষদের ডিনের দিকে আঙুল তুলে অসম্মান করা হলো।’
তিনি আরও লেখেন, ‘ব্যক্তি আর অনুষদের ডিন দুইটা আলাদা বিষয়। অনুষদের ডিনকে অসম্মান করা মানেই গোটা অনুষদকে অসম্মানিত করা। আজকে কলা অনুষদকে মঞ্চে তুলে অসম্মানিত করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর বক্তব্য শুনে কোনোরূপ যাচাই-বাছাই ছাড়াই উপদেষ্টা নাহিদের সম্মাননা স্মারক প্রত্যাখান করা অত্যন্ত শিশুসুলভ কাজ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অনুষদের এই অসম্মানে আমি ভীষণ মর্মাহত।’
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তার একাংশ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা। ১৬ জুলাই বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন; সেদিনও ছাত্র আন্দোলনে বিরোধী শিক্ষক কর্মকর্তা ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন, কেউ ঢিল ছুড়েন, কেউ ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেন, আবার কেউ পুলিশকেও আক্রমণ করতে বলেন। এসব ঘটনা সূক্ষ্ম তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সারাবাংলা/পিটিএম