শিল্প এলাকা ছাড়া রাজশাহীতে সব পয়েন্টে শব্দ মানেই দূষণ
১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৫৫
রাজশাহী: রাজশাহীতে আবাসিক বা বাণিজ্যিক সব এলাকাতেই শব্দের ঘনমাত্রা সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। আবাসিক এলাকায় নির্মাণ ও সড়কে পরিবহণ শব্দদূষণের অন্যতম নিয়ামক। নগরীতে ট্রাফিক এলাকা, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, এমনকি নীরব এলাকাতেও এখন শব্দের মাত্রা উদ্বেগজনক। কেবল শিল্প এলাকায় দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজশাহী নগরীর ছয়টি পয়েন্টে যন্ত্রের সাহায্যে শব্দের ঘনমাত্রা পরিমাপ করে এমন তথ্য জানিয়েছে। তালাইমারি, রেলগেট, সপুরা, লক্ষ্মীপুর, সাহেববাজার, ভদ্রা এলাকায় শব্দদূষণ পরীক্ষা করে সংগঠনটি জানিয়েছে, তিন বছর আগের তুলনায় তারা শব্দদূষণ বেশি পেয়েছে এই নগরীতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তীব্র শব্দ মানব শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আর প্রশাসন বলছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে আইনি পদক্ষেপ।
বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সহযোগী অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন খান বলেন, ধারাবাহিকভাবে তিন বছর ধরে নগরীর শুধু রেলগেট এলাকায় শব্দের মাত্রা পাওয়া যায় ৯০ ডেসিবল। এবার সেখানে শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে ৯০ দশমিক ৬ ডেসিবল। অথচ সরকারের আইন অনুযায়ী বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা হওয়া উচিত ৭০ ডেসিবল।
পরিমাপের তথ্য জানিয়ে ড. জাকির হোসেন বলেন, নীরব এলাকায় দিনে ও রাতে শব্দের সর্বোচ্চ ঘনমাত্রা থাকতে হবে যথাক্রমে ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু রাজশাহীর ঘোষিত নীরব এলাকাতেও দিনে শব্দের ঘনমাত্রা পাওয়া গেছে ৮৪ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ শব্দের ঘনমাত্রা থাকতে হবে যথাক্রমে ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল। তবে রাজশাহীর বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে শব্দের ঘনমাত্রা পাওয়া যায় ৮৮ থেকে ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে। এভাবে সব ক্যাটাগরিতেই শব্দের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে।
রাজশাহীতে কেবল শিল্প এলাকায় শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে স্বাভাবিক। শিল্প এলাকায় দিনে ও রাতে সর্বোচ্চ শব্দের ঘনমাত্রা যথাক্রমে ৭৫ ও ৭০ ডেসিবেল থাকতে হয়। সেখানে রাজশাহীর শিল্প এলাকায় শব্দের ঘনমাত্রা পাওয়া যায় ৭৪ ডেসিবেল। প্রাপ্ত মানগুলো থেকে দেখা যায়, শিল্প এলাকা ছাড়া অন্যসব জায়গায় শব্দের নির্ধারিত মানমাত্রা অতিক্রম করেছে, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
এর কারণ হিসেবে ড. জাকির হোসেন দায়ী করেছেন অটোরিকশার উচ্চ মাত্রার হর্ন, বাস-ট্রাকের অযথা হর্ন বাজানোসহ ক্রমাগত বড় বড় গাছ কেটে ফেলাকে। পরিবেশ সহনীয় করতে অটোরিকশায় উচ্চ মাত্রার হর্নের পরিবর্তে ভেঁপু হর্ন লাগানো এবং প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগানোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। নগরীতে যানজটকেও শব্দ দূষণের একটি বড় কারণ বলে উল্লেখ করেন।
শব্দের মানমাত্রা নির্ণয়ের সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) অধ্যাপক ইকবাল মতিন। পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেন প্রকৌশলী জাকির হোসেন খান। তাকে সহযোগিতা করেন পিএইচডি গবেষক অলি আহমেদ, শেখ ফয়সাল আহমেদ, মো. ওবায়দুল্লাহ, শামসুর রাহমান, তারেক আজিজসহ অন্যরা।
এর আগে গত বছর জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপি এক বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই প্রতিবেদনে শব্দদূষণে বিশ্বের শীর্ষ নগরী হিসেবে উঠে আসে ঢাকার নাম, চতুর্থ অবস্থানে ছিল রাজশাহী।
সারাবাংলা/টিআর