Sunday 13 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমুদ্র সৈকতে বালিয়াড়ি দখলের ‘মহোৎসব’

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৫৭

বালিয়াড়ি দখল করে স্থাপনা। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেখানে গিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে এলেও স্থাপনা সরেনি। ছবি: সারাবাংলা

কক্সবাজার: কক্সবাজারের পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত নাজিরারটেক দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি পল্লি। সেখানেই জিরো পয়েন্টে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি দখলের ‘মহোৎসবে’ মেতেছে প্রভাবশালী মহল। যে বালিয়ড়িতে পর্যটকের সমাগম, জেলেদের জাল বোনা, মাছ বাছাইসহ স্থানীয়দের খেলোধুলা চলত, সেই বালিয়াড়ি রাতের আঁধারে গ্রাস করে দোকানঘর বানিয়ে কেনাবেচা করছে দখলবাজরা।

প্রভাবশালীদের এমন কর্মকাণ্ডে ওই এলাকায় পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্যটি তাই নষ্ট হতে বসেছে। জেলে ও স্থানীয়দের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্যও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে বারবার হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও কঠোর পদক্ষেপ না থাকায় সে হুঁশিয়ারি কাজে আসছে না।

বিজ্ঞাপন

নাজিরারটেক জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, বালিয়াড়ির ওপর সারিবদ্ধভাবে তৈরি হচ্ছে দোকান ঘর। স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতন হওয়ার আগে আগে শুরু হয় বালিয়াড়ি দখলের এই তৎপরতা, যা থামেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও। বরং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময়টায় পুলিশ-প্রশাসনে অস্থিরতা ও নিষ্ক্রিয়তা দখলবাজারদের আরও বেপরোয়া করে তোলে। এই সময়ের মধ্যে নতুন-পুরনো মিলিয়ে প্রায় ৩০ একর খাস জায়গা দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা।

স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে বালিয়াড়ি দখলের তৎপরতা শুরু হয়। সরকার পতনের পর অনেকেই আশা করেছিলেন, এবার সেই দখলের অবসান ঘটবে। কিন্তু কার্যত সেটি হয়নি। উলটো নতুনভাবে বেড়েছে দখলবাজি। দখল ঠিকই চলছে, শুধু পালটে দেখে দখলকারীর পরিচয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, প্রকাশ্যে দখল বাণিজ্য করছেন ওই এলাকার মৃত সালেক আহাম্মদের ছেলে আতিক উল্লাহ, আবদু খালেকের ছেলে কাদের ও আরমান। কাদেরের অধীনে ৪০টিরও বেশি দোকান রয়েছে। আরেক প্রভাবশালী দখলবাজ মহেশখালীর মাহবুব (৩০)। তিনি মহেশখালী থেকে ভাড়াটে লোকজন এনে বালিয়াড়ি দখল করে দোকান ঘর তৈরি করেন।

বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীর নামে স্থানীয় এক জেলে বলেন, কয়েক বছর আগেও যে জায়গায় জাল বোনা হতো, ট্রলার থেকে মাছ ওঠানামা করা হতো, পর্যটকদের আনাগোনা চলত, সেই জায়গাই এখন দখলবাজদের কবলে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় বালিয়াড়িই হারিয়ে যাবে। আমরা আর কোনো দখল চাই না। নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা, উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলমুক্ত হোক বালিয়াড়ি।

স্থানীয় অধিবাসী লিয়াকত মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধভাবে বালিয়াড়ি দখল করেছে তাদের দলের নেতাকর্মীরা। অন্তবর্তী সরকার আসার পর সবার প্রত্যাশা ছিল, সেগুলো হয়তো দখলমুক্ত হবে। কিন্তু না, দখল প্রক্রিয়া বরং দ্বিগুণ গতিতে বেড়ে গেছে। এই জায়গা সরকারের। এটা কারও বাবার সম্পত্তি না। আমরা চাই, প্রকৃতির এই বালিয়াড়ি যেন দখলমুক্ত হয়। এতে জেলেরা যেমন তাদের পুরাতন জায়গা ফিরে পাবে, তেমনি প্রকৃতিও পাবে আপন রূপ।

নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ্ সারাবাংলাকে বলেন, রাতের আধাঁরে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে দোকানঘর তৈরি করছে প্রভাবশালীরা। এরই মধ্যে নতুন-পুরনো মিলিয়ে ৩০ একরের মতো খাস জায়গা দখল হয়ে গেছে। এসব জায়গা দখলবাজরা প্লট করে করে বিক্রি করছে। এতে প্রকৃতি ও সর্বস্তরের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত। এই দখলকে কেন্দ্র বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। তাই যত দ্রুতসম্ভব প্রশাসন যেন বালিয়াড়ি দখলমুক্ত করে।

বালিয়াড়ি দখলের খবর পেয়ে প্রশাসন এর আগে অভিযান চালিয়েছে সৈকতে। হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

এ রকম ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনাকারী সহকারী কমিশনায় (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, বালিয়াড়ি দখল করে অবৈধ স্থাপনা দেখা গেলেও ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। অবৈধ স্থাপনার কিছু অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, কেউ যেন দখলবাজি না করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজ দায়িত্বে স্থাপনাগুলো সরিয়ে ফেলার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। অপরাধ যেই করুক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। বালিয়াড়ি দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রশাসনের অভিযান-হুঁশিয়ারিকে সাধুবাদ জানালেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দখল থামবে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা দখলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দৃশ্যমান চান।

সারাবাংলা/টিআর

কক্সবাজার বালিয়াড়ি দখল সমুদ্র সৈকত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর