প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব
১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৪৭ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৫২
ঢাকা: প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গাপূজা। বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে পাঁচ দিন বাপের বাড়ি অর্থাৎ মর্ত্যলোকে কাটিয়ে দেবী ফিরলেন দেবালয়ের (স্বর্গ) কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে।
রোববার (১৩ অক্টোবর) বিকেল থেকে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর ওয়াইজ ঘাটে শুরু হয় এই প্রতিমা বিসর্জন।
এদিন বিসর্জন ঘিরে নেওয়া হয় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনী, নৌ-পুলিশ, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন টিম ও সোয়াট দল সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিসর্জন ঘাট, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, সনতনী স্বেচ্ছাসেবক ফাউন্ডেশনের সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
এদিন বিকেল ৪টার পর রাজধানীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে বুড়িগঙ্গা তীরের ওয়াইজ ঘাটে আসেন পুণ্যার্থীরা। ঢাকার বিভিন্ন পূজা উদযাপন পরিষদ হাজারো মানুষের শোভাযাত্রা নিয়ে বুড়িগঙ্গা তীরে আসে।
এদিকে, রাজধানীতে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সময় বেঁধে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর ঢাকার ১১টি জায়গায় প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। স্থানগুলো হলো- লালবাগের ওয়াইজ ঘাট, লালকুঠি ঘাট, ওয়ারীর পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট, আলমগঞ্জ ঘাট, শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাট ও বালু নদের ঘাট, উত্তরার আশুলিয়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট, রায়েরবাজার, মিরপুর আমিনবাজার ব্রিজের উত্তর পাশ, মতিঝিলের শ্রীশ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের পাশের পুকুর এবং মতিঝিলের মান্ডা আমিন মোহাম্মদ লেক।
এদিন বুড়িগঙ্গা তীরের ওয়াইজ ঘাটে বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকেশ্বরী পূজা মন্দিরের ঘট ও কলাবৌ বিসর্জন দেওয়া হয়। আজ এখানে ১০৮টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। গত বছর এখানে ৯২টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে, বিকেল ৪টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা বের হয়। প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রাটি পলাশী মোড়-জগন্নাথ হল-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট বটতলা-সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল-পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স-নগর ভবন-গোলাপশাহ মাজার-বঙ্গবন্ধু স্কয়ার-গুলিস্থান-নবাবপুর লেভেল ক্রসিং-নবাবপুর রোড-মানসি হল ক্রসিং-রথখোলার মোড়-রায়সাহেব বাজার মোড়-শাঁখারীবাজার-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-সদরঘাট বাটা ক্রসিং-পাটুয়াটুলি মোড়/সদরঘাট টার্মিনাল মোড় হয়ে ওয়াইজঘাট গিয়ে শেষ হয়।
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন দেবীদুর্গা। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
মহালয়ার মধ্য দিয়ে ২ অক্টোবর এবারের দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছিল। ওইদিন থেকেই দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। এরপর গত বুধবার ষষ্ঠী থেকে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, রোববার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এ আয়োজন।
মাঝে বৃহস্পতিবার নবপত্রিকায় প্রবেশ ও স্থাপনে হয় মহাসপ্তমী। পর দিন শুক্রবার সকালে কুমারী পূজার পাশাপাশি মহাঅষ্টমীর বিহিত পূজা এবং সন্ধিপূজা হয়। আজ সিঁদুর খেলা, মাকে মিষ্টি দান, শোভাযাত্রা এবং প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ জানিয়েছে, এবার ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, গত বছর ২৪৮টিতে পূজা হয়েছিল। এ বছর দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আর গতবছর হয়েছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম