নিজ্জার হত্যার জের: এবার কানাডা থেকে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রত্যাহার
১৪ অক্টোবর ২০২৪ ২২:৩৬
শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডা কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের জের ধরে ফের ভারতের সঙ্গে দেশটির কূটনীতিতে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কানাডার বক্তব্যের প্রতিবাদে এরই মধ্যে অটোয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করছে নয়া দিল্লি। কানাডা থেকে আরও কিছু কূটনীতিককেও প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, পাঞ্জাবিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র খলিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় চলমান তদন্তে অটোয়ায় ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মাসহ একাধিক ভারতীয় কূটনীতিককে ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে কানাডা। এর জের ধরেই ভারত দেশটি থেকে কূটনীতিকদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, কানাডা সরকারের তদন্ত সংস্থা নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয়কুমার ভার্মাকে ‘স্বার্থ সম্পর্কিত ব্যক্তি’ বলে উল্লেখ করে রোববার (১৩ অক্টোবর)। তবে কূটনৈতিক রক্ষাকবচ থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এরপর সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করা হয়। বলা হয়, ‘বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কানাডা সরকার নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।’ পরে সন্ধ্যায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হাইকমিশনারকে প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়।
এ দিন সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতে অবস্থিত কানাডার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলবও করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বার্তায় বলছে, ‘এটি স্পষ্ট যে কট্টরপন্থি ও সহিংস এই পরিস্থিতিতে ট্রুডো সরকারের কার্যক্রম তাদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কানাডার বর্তমান সরকারের যে প্রতিশ্রুতি, তাতে আমাদের কোনো আস্থা নেই। এ অবস্থায় হাইকমিশনারসহ তাদের লক্ষ্যের মধ্যে থাকা অন্য কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের ভারত সরকার প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কানাডায় অভিবাসী শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হারদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় কানাডা শুরু থেকেই ভারতকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। হাইকমিশনার সঞ্জয়সহ বিভিন্ন কূটনীতিকদের দিকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার ইঙ্গিত তারই বহির্প্রকাশ।
নিজ্জার ভারতের শিখ অধ্যুষিত পাঞ্জাব রাজ্যের প্রদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছিলেন। প্রদেশটিকে স্বাধীন করে ‘খালিস্তান’ গঠনের আন্দোলনে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৯৭ সালে কানাডায় অভিবাসী হন তিনি। ২০১৫ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান।
নিজ্জার ও তার সমর্থকরা নিজেদের স্বাধীনতাকামী দাবি করলেও ভারত তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। সন্ত্রাসবাদ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নিজ্জারকে ভারত সরকার ‘খুঁজছিল’। ২০২৩ সালের জুনে কানাডার ভ্যাংকুভারে একটি শিখ মন্দিরের পার্কিং লটে নিজ্জারকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চার ভারতীয় নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়।
শুরু থেকেই এ হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়ে আসছে কানাডা। তবে ভারত সরকার বরাবরই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। পরে সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। এবার ফের নিজ্জার হত্যার তদন্ত নিয়েই দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হলো।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কানাডা সরকার যে মিথ্যা অভিযোগের গল্প তৈরি করছে, তার প্রতিক্রিয়ায় ভারত উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে।’
কানাডাকে কড়া জবাব দিয়ে মন্ত্রণালয়টি বলছে, আজেবাজে ও অবাস্তব অভিযোগ না করে এবং নিজেদের তদন্তকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করে তারা বরং অভিযোগের উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল করুক। ভারত জানিয়েছে, ট্রুডো সরকার যা করছে, তা নিছক ভোটব্যাংকের রাজনীতি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, প্রমাণ দিতে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। অথচ তা দিতে তারা ব্যর্থ। এবারের এই সরকারি চিঠিতে যা বলা হয়েছে, সেসবেরও কোনো প্রমাণ নেই। কোনো সন্দেহ নেই, তদন্তের নামে তারা ভারতকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর সেটা করা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে।
ভারতের পাঞ্জাব মূলত শিখ অধ্যুষিত রাজ্য। এর বাইরে শিখ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করেন কানাডায়। এই শিখরা স্বাধীন রাষ্ট্র খলিস্তানের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। কানাডাতেও তারা নিয়মিতই খলিস্তানের দাবিতে মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকেন। খলিস্তানের দাবিতে আন্দোলনরত তেমনই এক সংগঠন ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্সের’ (কেটিএফ) প্রধান ছিলেন নিজ্জার।
আরও পড়ুন-
- কানাডা ভ্রমণে সতর্কতা জারি ভারতের
- শিখ নেতা হত্যা: কানাডা থেকে ‘র’ প্রধান বহিষ্কার
- কানাডায় শিখ নেতা নিজ্জার হত্যা: ৩ ভারতীয় গ্রেফতার
- এবার কানাডার জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে বহিষ্কার করল ভারত
- নিজ্জার হত্যাকাণ্ড তদন্তে ভারতের সহযোগিতা চায় কানাডা
- খলিস্তানপন্থি নিজ্জার হত্যা: ভারত নিয়ে সুর পাল্টালেন ট্রুডো
- শিখ নেতা হত্যার গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা
- শিখ নেতা হত্যার বিষয়ে কানাডার কাছে ‘নির্দিষ্ট’ তথ্য চেয়েছে ভারত
সারাবাংলা/এইচআই/টিআর