মাল্টা চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন
১৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৫
খুলনা: মাল্টার আবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন খুলনার রূপসা উপজেলার ৪ নম্বর টিএসবি ইউনিয়নের কাজদিয়া গ্রামের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ফকির। তিন বছর আগে প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তিনি মাল্টা চাষ শুরু করেন। বর্তমানে প্রতিটি গাছে অসংখ্য মাল্টায় তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে ২০ থেকে ৩০টি করে মাল্টা ঝুলছে। মাল্টার ওজনে নুয়ে পড়েছে বেশির ভাগ গাছ। ভালো ফলন হওয়ায় তার বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসছেন।
মাল্টা চাষি জাহাঙ্গীর ফকির সারাবাংলাকে বলেন, ‘একসময় বেকার জীবন কাটানোর পর কৃষিতে যুক্ত হলেও সফলতা পাইনি। একপর্যায়ে চুয়াডাঙ্গা বেড়াতে গিয়ে প্রচুর দেশি মাল্টার গাছ দেখতে পাই। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, মাল্টা চাষ করে তারা লাভবান। আমিও ফল বাগান করতে আগ্রহী হয়ে পড়ি। ওই জেলা থেকে মাল্টার চারা সংগ্রহ করে শুরু করি মাল্টা বাগান।’
জাহাঙ্গীরের মাল্টার বাগান শুরু ২০২১ সালে। পাঁচ বিঘা জমিতে বারি-১, ভিয়েতনামি ও ইয়োলোকিং জাতের মাল্টার চারা রোপন করেছিলেন। মাল্টা গাছে ফলনের জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে জাহাঙ্গীরের। এ বছরই গাছগুলোতে প্রথম ফল এসেছে। এ ছাড়া কমলা ও আঙুরের চারাও রোপণ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে তার খরচ পাঁচ লাখ টাকা।
জাহাঙ্গীর জানালেন, মাল্টা গাছে ফুল আসে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। বারি-১ জাতের দেশি মাল্টা নভেম্বর মাসে খাওয়ার উপযোগী হয়। কমলা হয় নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে। নভেম্বর যখন আসি আসি করছে, জাহাঙ্গীরও তখন মাল্টা বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মাল্টা চাষি জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এ বছর অর্ধ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। দেশি মাল্টা আমাদের দেশে পূর্ণাঙ্গ ফলন দেবে এবং অনেক চাষি ভাইয়ের ভাগ্য বদলাতে সহায়তা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরাও রূপসার মাটিতে এ ধরনের সফলতা দেখাতে চাই।
জাহাঙ্গীর ফকির আরও বলেন, ‘একসময় সবুজ মাল্টা ক্রেতারা কিনতে চাইত না। তবে বর্তমানে বাজারে দেশি মাল্টার ব্যাপক চাহিদা। এটি একটি ফরমালিনমুক্ত ফল। অনেকে বাড়ি থেকেই ফলটি কিনে নিয়ে যাচ্ছে।’
রূপসা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাজদিয়া বাজারের ফল বিক্রেতা খোকন বলেন, ‘ফলটি খুব সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে দেশি মাল্টার চাহিদা ব্যাপক। আমি প্রতি কেজি মাল্টা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’
খুলনা মহানগরীর পশ্চিম রূপসা ঘাট এলাকায় দেশি জাতের মাল্টা কিনতে আসা তাসফিয়া বেগন বলেন, ‘এই মাল্টা বাজারের অন্য মাল্টার চেয়ে ভালো। দেখতে কাঁচা হলেও এই ফল খুব সুস্বাদু। বাজারে যেখানে আফ্রিকার মাল্টা বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সেখানে দেশি এই মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।’
অন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চাষি ভাইদের যাদের জমি ফাঁকা পড়ে আছে, তারা সেই জমিতে আমার মতো ফল বাগান করতে পারেন। একই সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে কাঁচামরিচ, উস্তা, করলা, বেগুন, ঝাল, আদাসহ অনেক মসলাজাতীয় ফসল চাষ করা সম্ভব। গত বছর একই জমিতে কাঁচামরিচ চাষ করে এক লাখ ২০ হাজার টাকার বিক্রি করেছি।’
পোকার আক্রমণ কেমন— জানতে চাইলে এই মাল্টা চাষি বলেন, ‘দেশি মাল্টা ও কমলা গাছে পোকার আক্রমণ খুবই কম। এরপরও গাছে পোকামাকার আক্রমণ করলে সিডিউল স্প্রে করতে হয়।’ তার অভিযোগ, প্রায় দুই বছর ধরে রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসের কোনো ধরনের সেবা তার কপালে মেলেনি। যিনি ওই ব্লকের দ্বায়িত্বে আছেন, তিনি কোনো খোঁজখবর নেন না।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘জেলার রূপসা উপজেলা ছাড়াও ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা উপজেলায় দেশি মাল্টার চাষ হচ্ছে। বাজার থেকে কম মূল্য ক্রেতারা ফলটি কিনতে পারছেন। সম্ভাবনাময় এই ফলের আবাদ বিস্তারে আমরা কাজ করছি।’
এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ বছর জেলায় ৭৫ হেক্টর জমিতে দেশি মাল্টা চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে বারি মাল্টা-১। মাল্টা চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি অফিস মাল্টা চাষিদের পাশে থেকে সবসময় সেবা দিয়ে যাচ্ছে।’
সারাবাংলা/এসডব্লিউআর