নোবিপ্রবিতে সক্রিয় ছাত্রদল, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
১৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:১৬
নোবিপ্রবি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ সত্ত্বেও কার্যক্রম পরিচালনা করায় সমালোচনা এবং প্রতিবাদের মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। সম্প্রতি নোবিপ্রবি ছাত্রদলের ব্যানারে কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের দলীয় কার্যক্রম প্রচার করায় শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পড়ে তারা।
গত ১৩ অক্টোবর ‘নোবিপ্রবি ছাত্রদল’ এবং ‘নোবিপ্রবি ছাত্রদল অফিসিয়াল’ এই দুইটি ফেসবুক পেজে ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে করা পোস্টগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গ্রুপগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়।
ছাত্রদলের পেজ থেকে করা পোস্টে দেখা যায়, গত ৭ অক্টোবর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতনে নিহত শহিদ আবরার ফাহাদের ৫ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নোয়াখালী শহর মাইজদী এবং ক্যাম্পাসের বাহিরে নোবিপ্রবি ছাত্রদলের ব্যানারে মিছিল ও স্মরণ সভা করে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আড্ডা এবং শোডাউনের পোস্ট দিতেও দেখা যায়। ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ সত্ত্বেও এমন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোবিপ্রবির সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গ্রুপে বলেন, ছাত্রদল রীতিমতো ক্যাম্পাসে শোডাউন দিচ্ছে। মাইজদী শহিদ মিনারের সামনে আর ভার্সিটির গেটের বাহিরে ব্যানার নিয়ে কর্মসূচি পালন করতেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে আর শহিদ মিনারের সামনে ছবি তুলতেছে। একজন তো স্ট্যাটাস’ই দিলো ‘ক্যাম্পাসের নিয়মিত আড্ডায়’। একটা ছবিতে দেখলাম রীতিমতো হলের গেস্ট রুমে বসে আছে। তাইলে আপনারা রাজনীতির আর কি বাকি রাখলেন?’
যারা রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও নোবিপ্রবির নামকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক এক্টিভিটি চালানো এইটা বিশ্ববিদ্যালয় চলমান আইনকে লঙ্ঘন করা। নোটিশে উল্লেখ ছিলো, যারা এই আইনকে লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। এবার দেখার পালা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কথা এবং কাজে কতটা বদ্ধপরিকর।’
হুমাইরা তাসনীম নেহা নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘রাজনীতি সবার ব্যাক্তিগত অধিকার, কিন্তু রাজনীতি ক্যাম্পাসে না। রাজনীতি করলে ক্যাম্পাসের ১০১ একরের বাহিরে করবে। কোনো পোস্টার, ব্যানারে নোবিপ্রবির নামে রাজনীতি করা যাবে না। ১০১ একরের বাহিরের যা ইচ্ছা সে ব্যানারের রাজনীতি করুক কোনো মাথা ব্যাথা নাই আমাদের। দরকার হলে লিখুক ‘বাংলাদেশ ছাত্রদল, সেলিম মামার টং দোকান শাখা’। কিন্তু নোবিপ্রবির ব্যানারো কোনো রাজনীতি চলবে না।’
মুকতার এলাহি নামের আইসিই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী হুশিয়ারি দিয়ে লিখেন, ‘জুলাই বিপ্লবের ৯ দফা দাবির ১ দফা ছিলো ক্যাম্পাসে সকল ধরনের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ভার্সিটির রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক ক্যাম্পাসে সকল ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করাও হয়েছে। এখন ইনিয়েবিনিয়ে কেউ যদি ক্যাম্পাসে দলীয় পলিটিক্স ঢুকিয়ে বিপ্লবের স্পিরিট নষ্ট করার সাহস দেখায় বা প্রশাসনিক আইন ভঙ্গ করতে চায় তাকে কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে।’
এমন সব সমালোচনার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক নূর হোসেন বাবু বলেন, ‘রাজনীতি করা প্রত্যেক মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। সেই জায়গা থেকে আমরা রাজনীতি করে যাবো। সাধারণ ছাত্ররা যেন নির্যাতিত না হয় এবং তাদের অধিকার নিশ্চিতের লক্ষে ছাত্রদল কাজ করে যাবে। আমরা চাই নোবিপ্রবি বিগত সময়ে আওয়ামী শাসনামলে তৈরি হওয়া রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বাতিল করবে।’
নোবিপ্রবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব শাহারাজ উদ্দিন জিহান বলেন, ‘আওয়ামীলীগের দোসরদের দ্বারা গঠিত রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে হওয়া প্রজ্ঞাপন দিয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে যে, এটা কার সাথে আলোচনা করে করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাবো, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারায় ছাত্র রাজনীতির বৈধতা দিতে হবে। ছাত্রদলের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এই নেতা বলেন, আমরা কাজ করে যাবো তবে এমন কোনো কাজ করবো না যেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। আমরা আদর্শিক রাজনীতি করবো, কাউকে শক্তি প্রয়োগ করা হবে না। আমাদের আদর্শ পছন্দ হলে আসবে আর না হলে নাই।’
বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদলের ব্যানারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদলের ভূমিকা ছিলো অনেক। আমাদের অনেক নেতা কর্মী শহীদ হয়েছে। সেই জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির চর্চা করার অধিকার আমাদের রয়েছে। ছাত্রদল যদি কোনো খারাপ কাজ করে তাহলে শিক্ষার্থীরা তা চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিক। শিক্ষার্থীদের সমালোচনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় একটি মুক্ত বুদ্ধি চর্চার জায়গা, এখানে রাজনীতি চর্চা করার অধিকার সবার আছে।
রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিসহ সকল ধরণের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এবং ব্যানার ব্যবহার করে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যারা আইন অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনীতি চালুর করার বিষয়েও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে বসবো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি দাবি নিয়ে আসে তখন সেটা আমরা বিবেচনা করবো।’
সারাবাংলা/এইচআই