রাঙ্গামাটিতে এইচএসসিতে ফল বিপর্যয়
১৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৫
রাঙ্গামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে। ২০২৪ সালের ঘোষিত এইচএসসির ফলাফলে জেলায় পাসের হার এসেছে ৬০ দশমিক ৫১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০৮ শিক্ষার্থী।
এর আগে গত বছর জেলায় পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৩৬ জন। সে হিসাবে এ বছর পাসের হার কমেছে ৪ শতাংশেরও বেশি। জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ২৮ জন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১১টায় একযোগে দেশের সব শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। একই সময়ে জেলাগুলোর ফলাফলও জানা যায়। রাঙ্গামাটির ফল বলছে. জেলার পাঁচ হাজার ৬৭০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেয় পাঁচ হাজার ৬১৭ জন। এর মধ্যে পাস করেছে তিন হাজার ৩৯৯ জন।
রাঙ্গামাটির এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জেলার ৯টি উপজেলার ১৯টি কলেজের মধ্যে কেবল কাপ্তাই নৌ বাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাসের হার শতভাগ। এ কলেজের ১৬৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৩ জন, যা জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ।
জেলায় যে ১০৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে তার মধ্যে ৪৩ জন নৌ বাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের, তা আগেই বলা হয়েছে। এ ছাড়া রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে ৩৫ জন, লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১৮ জন, কাচালং সরকারি কলেজ ও শিজক কলেজে পাঁচজন করে এবং কাউখালী সরকারি কলেজ ও নানিয়ারচর সরকারি কলেজে একজন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
উপজেলা ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি সদরে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দুই হাজার ৩৭৯ জন। পাসের হার ৫৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩ জন। কাপ্তাই উপজেলায় পরীক্ষার্থী ছিল ৮৪৪ জন। পাসের হার ৪৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৩ জন।
কাউখালী উপজেলায় পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪৬২ জন। পাসের হার ৫৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে একজন। রাজস্থলী উপজেলায় পরীক্ষার্থী ছিল ৩১৩ জন। পাসের হার ৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ উপজেলায় কেউ জিপিএ-৫ পায়নি। বরকল উপজেলায় ৯৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। কেউ জিপিএ-৫ পায়নি এ উপজেলাতেও। জিপিএ-৫ না পাওয়া আরেক উপজেলা লংগদুতে পরীক্ষার্থী ছিল ৩২৭ জন, পাসের হার ৭৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।
নানিয়ারচর উপজেলায় পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৩৮ জন। পাসের হার ৫৪ দশমিক ৬২ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে একজন। বাঘাইছড়িতে পরীক্ষার্থী ছিল ৯০৫ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ জন। আর জুরাছড়িতে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫১ জন। এ উপজেলায় মাত্র একজন অকৃতকার্য হয়েছে। তবে উপজেলায় কেউ জিপিএ-৫ পায়নি।
এদিকে রাঙ্গামাটি জেলার ১৯টি কলেজের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কাপ্তাই নৌ বাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাসের হার শতভাগ, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজে ৬০ দশমিক ১৬ শতাংশ, লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৯০ দশমিক ৫৯ শতাংশ, কাউখালী সরকারি কলেজে ৫৪ দশমিক ১ শতাংশ, কাচালং সরকারি কলেজে ৮৪ দশমিক ৪০ শতাংশ, শিজক কলেজে ৯৫ দশমিক ১৯ শতাংশ, রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজে ৩৫ দশমিক ১৯ শতাংশ, রাঙ্গামাটি পাবলিক কলেজে ৩৩ দশমিক ১৯ শতাংশ ও মাউরুম কলেজে ৬২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এ ছাড়া কর্ণফুলী সরকারি কলেজে ৩৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ঘাগড়া কলেজে ৬৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, সৃজনী ট্রাস্ট্র স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, রাজস্থলী সরকারি কলেজে ৩৭ দশমিক ৩২ শতাংশ, বাঙ্গালহালিয়া সরকারি কলেজে ৩৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, বরকল রাগীব রাবেয়া কলেজে ৯৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ, লংগদু সরকারি মডেল কলেজে ৭৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ, গুলশাখালী বর্ডার গার্ড মডেল কলেজে ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ, নানিয়ারচর সরকারি কলেজে ৫৪ দশমিক ৬২ শতাংশ ও শলক কলেজে হার ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
রাঙ্গামাটিতে ২০২৪ সালের মাদরাসা বোর্ডের (আলিম) পরীক্ষায় পাসের হার ৯৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে আট জন। অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন জেলায় পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে কেউ জিপিএ-৫ পায়নি।
রাঙ্গামাটি সদরের রাঙ্গামাটি সিনিয়র মাদরাসায় পাসের হার শতভাগ হলেও কোনো জিপিএ-৫ নেই। আল-আমিন ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে দুজন। এ ছাড়া লংগদুর মাইনীমুখ ইসলামিয়া আলিম মাদরাসায় পাসের হার ৮৪ দশমিক ২৩ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ছয়জন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন রাঙ্গামাটি বি এম ইনস্টিটিউটের পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং রাজস্থলী সরকারি কলেজে পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।
রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ তুষার কান্তি বলেন, ‘এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় রাঙ্গামাটির ফলাফল কিছুটা খারাপ হওয়ার পেছনে পরীক্ষার্থীদের এসএসসির ফলাফলের প্রভাব রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে সব পরীক্ষা না হওয়ায় এসএসসির ফলাফলের সঙ্গে সমন্বয় করে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে করে ফলাফলে তার প্রভাব পড়েছে। সবগুলো বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হলে হয়তো আরেকটু ভালো ফলাফল হতো।’
একই কথা বলছেন এইচএসসিতে কৃতকার্য হওয়া অনেক শিক্ষার্থীও। তারা বলছেন, কিছু পরীক্ষার্থীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ‘অটোপাসে’র সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিই হয়েছে।
সারাবাংলা/এইচআই/টিআর