Thursday 17 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শোকবার্তায় ‘অগ্নিকন্যা’কে স্মরণ

সারাবাংলা ডেস্ক
১৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৫

ঢাকা: বর্ষীয়ান রাজনীতিক মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বাম ঘরানার কয়েকটি দল ও ব্যক্তি শোক প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুর পর পরই বিভিন্ন দল, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন। সেইসব দল ও ব্যক্তিদের শোক বার্তা তুলে ধরছে সারাবাংলা-

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শোক

আমরা শোকাহত, ‘অগ্নিকন্যা’ মতিয়া চৌধুরী আর নেই…

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজধানীর একটি হাসপাতালে আজ বুধবার দুপুরে তিনি মারা গেছেন। ৮২ বছর বয়সী মতিয়া চৌধুরী বেশ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিত মতিয়া চৌধুরীর জন্ম পিরোজপুরে ১৯৪২ সালের ৩০ জুন। তিনি সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৬০–এর দশকে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়, তাতে মতিয়া চৌধুরী সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। আইয়ুব খানের আমলে চারবার কারাবরণ করেন। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন।

স্বাধীনতার পর মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর বিভিন্ন আন্দোলনে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সামরিক বিভিন্ন সরকারের সময় কারাবরণ করেন।

১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন।

এছাড়াও শোক জানিয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

সিপিবির শোক

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি। সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে এ শোক জানান।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে বলা হয়, ষাটের দশকে পাকিস্তানি শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংঘটিত উত্তাল ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব এবং ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বিবৃতিতে নেতারা মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অংশগ্রহণ ও অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তারা বেগম মতিয়া চৌধুরীর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কমরেড নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে দেশের পাকিস্তানী স্বৈরাশাসক আইয়ুব খান বিরোধী লড়াই, বাষাট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নিবেদিত আজীবন লড়াকু জাতীয় রাজনীতিবিদ বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

নেতারা বলেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী ব্যক্তিজীবনে একজন স্বজ্জন মানুষ ছিলেন এবং এ দেশের রাজনীতিতে তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার সংগ্রাম ও লড়াই করে গেছেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন সৎ-নির্লোভ পরোপকারি রাজনীতিবিদকে হারাল।

জাসদের শোক

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের সই করা এক বার্তায় শোক জানায় দলটি।

জাসদের শোক বার্তায় বলা হয়, দেশ, জাতি, জনগণের প্রতি বেগম মতিয়া চৌধুরীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং অবদানের জন্য তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-স্বজন-সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।

নকলা-নালিতাবাড়ীর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের শোক

শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।

নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হো‌সেন বলেন, ‘মতিয়া চৌধুরী নকলা-নালিতাবাড়ীর উন্নয়নের রূপকার ছিলেন। নালিতাবাড়ী-নকলা উপজেলায় দৃশ্যমান যত উন্নয়ন হয়েছে, সবকিছু তাঁর হাত দিয়েই হয়েছে। তিনি দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভিভাবক ছিলেন। অভিভাবকের মৃত্যুতে তাঁরা গভীরভাবে শোকাহত।’

নালিতাবাড়ী শহর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শ‌ফিকুল ইসলাম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বলেন, ‘বর্ষীয়ান এই নেত্রীর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের শোক

ষাটের দশকের সামরিক শাসন- বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অগ্নিকন্যা নামে খ্যাত মতিয়া চৌধুরী প্রতিষ্ঠাপর্ব থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অকৃত্রিম সুহৃদ ছিলেন। ইতিহাসের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সম্পৃক্তি গড়তে তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য বজলুর রহমান স্মৃতি পদক’ প্রবর্তনের নিমিত্তে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরী শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সরল অনাড়ম্বর জীবন যাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও কর্মীরা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছে।

খেলাঘরের শোক

সাবেক সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. মাখদুমা নারগিস রত্না ও সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা।

শোকবার্তায় খেলাঘরের নেতারা বলেন, মতিয়া চৌধুরী ছিলেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাবেক চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের সহধর্মিণী। তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সক্রিয় সংগঠক ও সাহসী নেত্রী। তার প্রয়াণে খেলাঘর পরিবারের সকল ভাই-বোন ও সংগঠক শোকাহত। আমরা প্রয়াতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের শোক

দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়া চৌধুরীর প্রয়াণে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গভীর শোক এবং স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এক বিবৃতিতে এ শোক জানান।

আরও শোক প্রকাশ করলেন যারা

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নূহ উল আলম লেনিন ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘মতিয়া আপা চলে গেলেন। ১৯৬৫ সাল থেকে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপে আমাদের নেত্রী ছিলেন। চলেও গেলেন আমাদের নেত্রী হিসেবেই। তার প্রজন্মে সবচেয়ে নির্লোভ, সৎ, সাহসী ও তেজস্বী নেত্রী ছিলেন তিনি। তার স্মৃতি চির অম্লান।’

সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এক শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।

এদিকে, বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কৃষিমন্ত্রী অগ্নিকন্যা খ্যাত বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু বাংলাদেশর রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। গণতন্ত্র, রাজনীতি ও সমাজ উন্নয়নে তার অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদের সাবেক উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় সুরকার প্রিন্স মাহমুদ। এদিন বিকেল ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন তিনি। প্রিন্স মাহমুদ লেখেন, ‘মতিয়া চৌধুরী আপা নাই। আপা গত তিন মাস ধরে বেশ অসুস্থ ছিলেন। আমার দেখা খুব কম সংখ্যক সৎ মানুষের ভেতর একজন। সবাই আপাকে শ্রদ্ধায় এবং দোয়ায় রাখবেন…’

সাংবাদিক কাশেম হুমায়ুন লিখেছেন, ‘মতিয়া চৌধুরী আপা আর নেই! তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’

সারাবাংলা/পিটিএম

টপ নিউজ মতিয়া চৌধুরী মৃত্যু শোকবার্তা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর