Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের ‘দ্বৈত নীতি’ কতটা কাজে আসবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৫৩

আন্তর্জাতিক: একদিকে যুদ্ধাস্ত্র সহায়তা, অন্যদিকে গাজায় মানবিক বিপর্যয় এড়াতে ত্রাণ প্রবেশ বাড়াতে আলটিমেটাম— ক্ষমতার শেষ মাসে এসে ইসরায়েলের প্রতি এমন দ্বৈত নীতি প্রয়োগ করে চাপ তৈরির চেষ্টা করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইরান ও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে শেষ সময়ে এসে ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের এই ‘ক্যারট-অ্যান্ড-স্টিক’ নীতি কতটা কাজে আসবে, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জো বাইডেনের এই নীতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ওয়াশিংটনের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এই নীতি সীমান্ত সংঘাত প্রতিরোধসহ গাজায় মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে নমনীয় করতে কতটা ভূমিকা রাখবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

‘স্টিক-অ্যান্ড-ক্যারট পলিসি’ বলতে মূলত এক ধরনের দ্বৈত নীতি বোঝানো হয়, যেখানে সহায়তামূলক সম্পর্কের কারণে একদিকে যেমন থাকে পুরস্কৃত করার প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে কথা না শুনলে তার জন্য অপ্রীতিকর পরিণতির হুমকিও দেওয়া হয়ে থাকে।

গত রোববার বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে, ইসরায়েলে তারা উন্নত মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী ব্যবস্থাসহ প্রায় ১০০ সেনা পাঠাবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন ইরানের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলার দিকে যাচ্ছেন, ঠিক তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এদিকে রোববারই বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে একটি চিঠিও দিয়েছে। ওই চিঠিতে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, গাজায় মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির উন্নতি করতে মানবিক সহায়তা পাঠানোর সুযোগ বাড়াতে হবে ইসরায়েলকে। ৩০ দিনের মধ্যে এই সহায়তা না দিলে সামরিক সহায়তা বন্ধের হুমকিও দেওয়া হয় চিঠিতে।

একদিকে ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী কৌশলসহ সেনা সহায়তা, অন্যদিকে সামরিক সহায়তা বন্ধের হুমকি— বাইডেন প্রশাসনের এমন দ্বৈত নীতিকেই বিশেষজ্ঞরা ইসরায়েলের প্রতি ‘ক্যারট-অ্যান্ড-স্টিক’ নীতি বলে অভিহিত করছেন।

বিজ্ঞাপন

মার্কিন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী এই নীতি মূলত মার্কিনিদের দীর্ঘদিনের নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যার মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা যায়। তবে মার্কিন প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেছেন, এসব কারণে বাইডেনের বিদায়ের মুখেও ইসরায়েলের কৌশল নির্ধারণে মার্কিন সংশ্লিষ্টতা আগের চেয়ে বেড়েছে।

ইসরায়েল এর আগে অনেকবারই মার্কিন পরামর্শ উপেক্ষা করে এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে যার কারণে বাইডেন প্রশাসনকে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উদারপন্থি কর্মী-সমর্থকদের কাছে এর জন্য বাইডেনকে চাপেও পড়তে হয়েছে। বিদায়ের আগে আগে ‘ক্যারট-অ্যান্ড-স্টিক’ নীতিমালা হয়তো এসব কারণেই ইসরায়েলকে চাপে ফেলার জন্য বাইডেন প্রশাসনকে নিতে হয়েছে।

কার্নেগি এনডোউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো অ্যারন ডেভিড মিলার বলেন, বাইডেন প্রশাসনের ‘ক্যারট-অ্যান্ড-স্টিক’ নীতি এমন এক সময়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে যখন প্রশাসন এখন পুরোপুরি সক্রিয় বা তারা স্পষ্টভাবে ভাবতে ও কাজ করতে পারছে— এমনটি হয়তো নয়। তবে ইরানের সঙ্গে বিরোধ যদি আর বাড়ে, সেক্ষেত্রে ইসরায়েলকে দেওয়া সামরিক সহায়তার পরিমাণ কমানোর সম্ভাবনা কম— এমনই মনে করছেন তিনি।

অ্যারন ডেভিড মিলার বলেন, ইরানকে নিয়ে ইসরায়েল কী করবে এবং তার জবাবে ইরান কী পদক্ষেপ নেবে— এ ধরনের ঘটনাগুলো খুবই গুরুতর ও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এমন একটি সময়ে মার্কিন প্রশাসন ব্যাপকভাবে ইসরায়েলের ওপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করবে বা সামরিক সহায়তাকে শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ রাখবে, আমার কাছে মনে হয় সেটি সম্ভব।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবিও মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েলকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, সেটিকে হুমকি হিসেবে বোঝানো হয়নি। তবে ইসরায়েলিরা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা চিঠিটি পেয়েছেন এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এটি পর্যালোচনা করছেন।’

এরই মধ্যে ইসরায়েল বুধবার জানিয়েছে, জর্ডান থেকে উত্তর গাজায় ৫০টি মানবিক সহায়তার ট্রাক যেতে দেওয়া হয়েছে। গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর ‘হুমকি’ দিয়ে মার্কিন যে চিঠি, তার পরিপ্রেক্ষিতেই ইসরায়েল ট্রাকগুলোকে প্রবেশ করতে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষের হিসাবে, গাজার শসস্ত্র গোষ্ঠী হামাস প্রায় ১২০০ মানুষকে হত্যা করে যুদ্ধ শুরু করে। এরপর থেকেই মূলত বাইডেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এর মধ্যে যুদ্ধে গাজায় ৪২ হাজার মানুষ প্রাণহানির শিকার হলেও ইসরায়েলে অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করেনি বাইডেন প্রশাসন। একবার কেবল দুই হাজার পাউন্ড বোমার চালান ছাড় করা হয়নি।

এর মধ্যে গত এপ্রিলে মার্কিন প্রশাসন থেকে গাজায় বেসামরিক নাগরিক ও ত্রাণ কর্মীদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় ত্রাণ সহায়তার সরবরাহ বাড়াতেই ওই তাগিদ দেওয়া হয়েছিল। তবে গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর নেতানিয়াহুর সরকারের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা তাগিদ দিয়ে সবচেয়ে সুস্পষ্ট বার্তাটি ছিল গত রোববারের ওই চিঠিটিই। তাতে ৩০ দিনের মধ্যে ইসরায়েলকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বলা হয় এবং দিনে ত্রাণবাহী অন্তত ৩৫০ ট্রাক যেন গাজায় ঢুকতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে বলা হয়।

ওয়াশিংটনের এই চিঠির ফলে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সেন্টার ফর সিভিলিয়ান কনফ্লিক্টের অ্যাডভোকেসি ও লিগ্যাল অ্যাডভাইজর র‌্যামিং চ্যাপেল। তিনি বলেন, অনেক বড় পরিবর্তনের পথে এটি ছোট্ট একটি পদক্ষেপ।

গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়াতে আলোচনার জন্য নেতানিয়াহু অবশ্য বুধবার একটি জরুরি বৈঠক ডাকেন। ওই আলোচনায় অংশ নেওয়া তিনজন কর্মকর্তা বলেছেন, মানবিক সহায়তা শিগগিরই বাড়তে পারে।

তবে বাইডেন প্রশাসনের সময় ফুরিয়ে আসছে। ইসরায়েলকে তারা যে ৩০ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে, তার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে। ওই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে নেতানিয়াহু আলটিমেটাম মানা বা না মানার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

অ্যারন ডেভিড মিলার বলেন, নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কামালাকে হারিয়ে যদি রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প জিততে পারেন, নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত হবে ভিন্ন। কারণ ট্রাম্পের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় নেতানিয়াহুকে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সুবিধা করে দেবে।

সারাবাংলা/এমপি/টিআর

ইসরয়েল ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক জো বাইডেন দ্বৈত নীতি মার্কিন প্রশাসন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর