নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার যে কারণ জানালো ঢাকা চেম্বার
১৭ অক্টোবর ২০২৪ ২১:১১
ঢাকা: উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনা, তথ্যের অসামঞ্জস্যতা, পণ্য পরিবহনের উচ্চ হার, বাজার আধিপত্য ও উৎপাদনকারীদের খুচরা বাজারে প্রবেশাধিকারসহ বিভিন্ন কারণে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। এছাড়া পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, যোগান ও আমদানির সমন্বয়হীনতার কারণেও পণ্যের দাম বেড় থাকে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি; নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণে গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রতিষ্ঠানটির করা এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়।
আয়োজকরা জানান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা পরিচালনা করে, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণের মূল্যের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণের লক্ষ্যে পণ্যের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় বাজার ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০ থেকে ২৯ আগস্ট দেশের ৮টি বিভাগের ৪৯টি জেলায় এ গবেষণা পরিচালিত হয়, যেখানে ৬০০ জনের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে উৎপদানকারী, আমদানিকারক, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছেন। গবেষণায় ২১টি খাদ্যপণ্যের উপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে ১২টি স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত, ৫টি আমদানিকৃত এবং বাকি ৪টি স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানি করা হয়। এটি একটি বেসলাইন সমীক্ষা হিসাবে পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে উৎপাদক, আমদানিকারক, পাইকারী বিক্রেতা এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, পণ্য উৎপাদন খরচের ক্রমাগত উচ্চ মূল্য, অদক্ষ বাজার ব্যবস্থা, পণ্য পরিবহনের উচ্চ হার, বাজার আধিপত্য এবং উৎপাদনকারীদের খুচরা বাজারে প্রবেশাধিকার স্বল্প সুযোগের কারণে স্থানীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের উপর প্রভাব ফেলে। এছাড়াও কৃত্রিম সংকট, ঋণপত্র খোলায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা, টাকার মূল্যমান হ্রাস, সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থায় অদক্ষতা প্রভৃতি বিষয়সমূহ পণ্য মূল্য ওঠানামায় ভূমিকা রাখছে। জরিপে দেখা যায়, উৎপাদন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির চাপ পড়ায় উৎপাদক পর্যায়ে মোটা চাল, মিহি চাল, পেয়াাঁজ, রুই মাছ ও আলু, মসুর ডাল, কাঁচা মরিচ, হলুদ, লাল মরিচ, আদা ও রসুনের মতো বেশির ভাগ পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়- পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন, যোগান এবং আমদানির সমন্বয়হীনতার কারণেও অনেকক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও অদক্ষ বাজার ব্যবস্থা, তথ্যের অসামঞ্জস্যতা, স্থানীয়ভাবে পণ্য উৎপাদন হ্রাস, সার, বীজ, তেল ও কীটনাশকের উচ্চ মূল্য এবং জেলা ভিত্তিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমও এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। মূল্যস্ফীতি রোধে সরকারকে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়ানোর মাধ্যমে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সময়মত পণ্য পরিবহন নিশ্চিতকল্পে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, পণ্য সংরক্ষণ বাড়াতে দেশের প্রতন্ত এলাকায় স্টোরোজ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য বলে মনে করে, ডিসিসিআই।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়লেও উৎপাদকরা ন্যায্য দাম পান না। কখনও কখনও, দাম বাড়ানোর জন্য পরোক্ষ খরচ জড়িত হয়। আমরা যদি স্টোরেজ, পরিবহন এবং পণ্য প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে উৎপাদন খরচ কমাতে পারি, তাহলে দাম তুলনামূলকভাবে কমে আসবে।’
ঢাকা চেম্বারের নির্বাহী সচিব (গবেষণা) একেএম আসাদুজ্জান পাটোয়ারী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. সায়েরা ইউনুস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্রেড সাপোর্ট মেজারস্ উইং-এর যুগ্ম-সচিব ড. সাইফ উদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারফি কমিশনের যুগ্ম প্রধান মো. মশিউল আলম এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-এর উপ-পরিচালক (সেনসাস উইং) স্বজন হায়দার প্রমুখ।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এসআর