রাবিতে লালনের তিরোধান দিবসে সেমিনার
১৭ অক্টোবর ২০২৪ ২২:২০
রাবি: মরমী সাধক লালন সাঁইজির ১৩৪ তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে `চিরায়ত লালনের সন্ধানে’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজি ভবনের ১৩১ নম্বর কক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে বক্তারা দেশ-বিদেশে লালনকে নিয়ে গবেষণা, দর্শন চিন্তা, ধ্যান-ধারণা ও গানে ব্যবহৃত ভাষার ইতিহাস বিষয়ে আলোচনা করেন।
এসময় বিশিষ্ট লালন গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘লালন শুধু একজন বাঙালি দার্শনিক নন, তিনি বিশ্ব দার্শনিক। দেশে-বিদেশে এখন লালনকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। লালনকে জানার জন্য, তার দর্শন বুঝার জন্য বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ লালন মেলায় আসেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মাঝে একটা কথা প্রচলিত আছে লালন নাকি নাস্তিক। লালন নাকি ধর্ম বিদ্বেষী। আসলে লালন ছিলেন মানবতাবাদী মানুষ। তৎকালীন ধর্মে, গোত্রে যেসব বৈষম্য বিদ্যামান ছিলো, লালন সেসবের বিরোধীতা করেছেন। অসহায়দের নিজের আশ্রয়ে ঠাঁই দিয়েছেন। লালন মানুষের স্থানটা সবার উপরে দিয়েছেন। মানুষকে জানার মধ্য দিয়ে তিনি স্রষ্টাকে খুঁজেছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, ‘লালনকে জানতে হলে আগে তার ভাষা বুঝতে হবে। আমরা জানি লালন কোনো কিছু লিখে যাননি। তিনি শুধু সুর সাধনা করেছেন। তার গানে সমাজের বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। কিন্তু তার উচ্চারিত ভাষা আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না। আমাদের এই বাংলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসনের ফলে আমরা মিশ্রভাষী হয়ে গিয়েছি। বৌদ্ধ শাসনামলে পালি ভাষা, হিন্দু শাসনামলে সংস্কৃত ভাষা, মুসলিম শাসনামলে ফারসি ভাষা ও ইংরেজ শাসনামলে ইংরেজি ভাষায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। সেজন্য লালনের গানের ভাষায়ও বিভিন্ন ভাষার সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। তাই লালনকে জানতে, বুঝতে হলে আগে তাঁর ভাষা বুঝতে হবে। আমি লালনের গানে ব্যবহৃত দশ সহস্রাধিক শব্দের একটা পান্ডুলিপি তৈরি করেছি। সেটা প্রকাশ করবো। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এধরনের ব্যক্তিদের সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখা, তাদের ধ্যান ধারণা, চিন্তা-চেতনাকে বুঝার চেষ্টা করা।’
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এইচআই