ডিসেম্বরেই আসছে আমার দেশ, লড়াই হবে ফ্যাসিষ্টবিরোধী
১৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:২০
ঢাকা: আগামী ডিসেম্বরেই মধ্যেই দৈনিক `আমার দেশ পত্রিকা’ বাজারে নতুন করে আসছে বলে জানিয়েছেন পত্রিকাটির সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমার দেশ আবার আসবে। আমাদের যতই কষ্ট হোক, আল্লাহ যদি চান ডিসেম্বরে মধ্যে আপনাদের হাতে এই পত্রিকা তুলে দেবো । হাতে আড়াই মাসেরও কিছু কম সময় রয়েছে। এর মধ্যেই সব কাজ শেষ করবো।’
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সোয়া ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলন তিনি এই কথা জানান।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমার দেশ স্বাধীনতার কথা বলেবে, ভারতীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে, গুম-সন্ত্রাসীর বিপক্ষে আওয়াজ তুলবে। লড়াই হবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। শুধু সরকারের কাছে চাওয়া, এই পত্রিকা চালুর ব্যাপারে যেন আইনি বাধায় না পড়তে হয়, সেই সহযোগিতা করা।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমার বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের হাতিয়ার আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা ধ্বংস করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। আমাকে টুকরো টুকরো করতে না পেরে ছাপাখানাটিকে টুকরো টুকরো করেছে, এটাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী চরিত্র। অথচ বড় কোনো সম্পাদকের মুখে এর কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি, আর এটাই মিডিয়ার চরিত্র।’
একমাত্র আমার দেশই করপোরেট এবং দলীয় মিডিয়া না দাবি করে তিনি বলেন, ‘একটি শক্তিশালী মিডিয়া দরকার, যা করেপোরেট স্বার্থে কিংবা দলীয় স্বার্থে দাঁড়াবে না, অধিকার আদায় এবং গণমানুষের জন্য দাঁড়াবে।’
আমার দেশের এই প্রকাশক বলেন, ‘আমার কোনো ব্যবসা নাই। এই পত্রিকা চালাবো আর লিখালিখি করবো। এটিকে দাঁড় করিয়ে অবসরে যাবো। আমাদের কোনো টাকা নাই। আপাতত অন্য প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপানোর বিষয়ে চূড়ান্ত হয়েছে। তবে পত্রিকা বের করার জন্য অফিস দরকার, কম্পিউটার দরকার এবং টেকনোলিজি দরকার। এগুলো সেটাপ করতে হবে। যারা এখানে কাজ করবেন তাদের সেবার মানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। মেধা অনুযায়ী যে বেতনভাতা দেওয়া উচিত, সেটা আমার দেশের নেই। তবুও আমার ধারণা লড়াই করতে পারবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘যেদিন প্রেসে আগুন দিয়ে লুট করা হয়েছিল সেদিন পর্যন্ত যারা ছিলেন তাদের প্রত্যেককেই আহ্বান জানাবো, তারা সবাই যেন আমার দেশের সাথে যুক্ত হয়। আগামী এক বছর আমার সাথে লড়াইয়ে যেন শামিল হয়।’
আমার দেশের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রেসে যেভাবে লুট করা হয়েছে তাতে অন্তত ওই সময়ের ২৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। সেটি ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ছিল। আর আগুন দেওয়ার কয়েকদিন আগে একটি বড় ইমপোর্টের চালান এসে ঢুকেছিল। সেগুলোও ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে ফিক্সড অ্যাসেটের মূল্য ছিল ১০ কোটি। মোট ৩৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। ওই সময় আমি একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করেছিলাম সেটি পুনরায় চালুর জন্য উচ্চ আদালতে আপীল করবো। অন্যদিকে নতুন করে আরও একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করবো।
তিনি বলেন, ‘দেখুন আমাকে যখন জেলে যেতে হলো। জেলে গিয়েই জামায়াতের এটিএম আজহার ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি, আমার দেশ পুড়ছে। এ নিয়ে কোন সম্পাদক কিংবা কোন পত্রিকা একটি কথাও বলেনি। শুধু তাই নয়, দৈনিক সংগ্রামের বর্ষীয়ান সম্পাদক আবুল আসাদকে টেনে হিঁচড়ে ছাত্রলীগের গুন্ডারা বের করে নিয়ে গেলো, দাঁড়ি ধরে তাকে টানা হেঁচড়া করেছেন তবুও কেউ কোন কথা বলেনি। এটা কি ফ্যাসিবাদের পক্ষ নেওয়া নয়, এটা কি ফ্যাসিষ্ট সরকারকে সহযোগিতা করা ছিল না।’
কুষ্টিয়ার আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আমার ওপর যে হামলা হয়েছিল সে বিষয়ে আমি একটি মামলা করেছি। আশা করছি, সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে সরকার। আর দেশে আসার পর আমাকে কারাগারে যেতে হয়েছে আইনি প্রক্রিয়ায়। তবে এই সরকার আসার পরপরই মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিলে জেলে যেতে হতো না। এছাড়া দন্ড মওকুফ করার বিষয়ে একটি আবেদন করতে হয় সেই আবেদন আমি করিনি। এ ব্যাপারে সরকারের তেমন দোষ দেখছি না।
গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংস্কার কমিশন হয়েছে এটি ভালো। গণমাধ্যম সংস্কারের আগে পত্রিকা মালিক ও সম্পাদকদের সংস্কার প্রয়োজন। আর সংস্কার কমিশনে কারা রয়েছেন তাদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। কমিশনে ফ্যাসিষ্টদের দোষর বা ফ্যাসিষ্ট সরকারের হয়ে কাজ করেছে এমন কেউ থাকলে তাহলে তো সংস্কার হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, ডিইউজে সভাপতি খুরশিদ আলম, আমার দেশের সিটি এডিটর ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্টের মহাপরিচালক এম আব্দুল্লাহ, বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, ইউনিট চীফ বাছির জামালসহ অনেকে।
সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই