Friday 18 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাবির ছাত্র রাজনীতিতে অবস্থান হারাচ্ছে বাম সংগঠনগুলো

আরফাতুল ইসলাম নাইম, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৮ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:১২

ঢাকা: বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণের সঙ্গে যে প্রতিষ্ঠানটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত সেটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একসময় প্রচণ্ড প্রতাপ ও প্রগতিশীল চিন্তার পাওয়ার হাউজ ছিল এটি। এখান থেকেই ‘৫২, ’৬৯, ’৭১ ও ‘৯১ নামক সংখ্যাগুলো বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাস নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর এতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি বাম ধারার ছাত্রসংগঠনগুলোরও অংশীদারিত্ব রয়েছে।

আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি বাম ছাত্রসংগঠনগুলো ছিল প্রগতিশীল চিন্তা ও নতুন রাজনীতির ধারক-বাহক। কিন্তু বর্তমানে তারা সেই জায়গাটি হারাতে বসেছে। এমনকি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ পরবর্তী সময়েও তাদের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তনের চিহ্ন নেই। বরং, আন্তঃকোন্দলে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে যাচ্ছে ঢাবির বামধারার ছাত্র-সংগঠনগুলো।

বিজ্ঞাপন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজেদের এক হয়ে কাজ করতে দেখা গেলেও আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাদের সেই জোট আর নেই। জুলাই অভ্যুত্থানে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ব্যানারে এক হলেও তাদের সেই ঐক্যে ফাটল ধরেছে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে ঢাবির রাজনীতিতে জায়গা হারাতে বসেছে বাম ছাত্রসংগঠনগুলো।

সরেজমিনে দেখা যায়, আন্তঃকোন্দলে জড়িয়ে নিজেদের মধ্যে বিভক্তি, মতানৈক্য, আদর্শ থেকে সরে যাওয়ার অভিযোগসহ ইগো সমস্যাগুলো সামনে চলে এসেছে। ফলে তারা অধিকাংশ সময়ই এক হতে পারছে না। বিভিন্ন ইস্যুতে জোটের কর্মসূচিতেও কর্মী উপস্থিতি থাকছে হাতে গোনা কয়েকজন। যাদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। তাদের ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে নিয়ে আসা হয় বলে সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টির ফলে প্রতিটি বাম ছাত্রসংগঠনের দু’টি করে ধারা তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। ২০২১ সালে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংগঠনে বিদ্রোহ ও পরে পৃথক কাউন্সিলের মাধ্যমে দুই ভাগ হয়েছে সংগঠনটি। এখন দুই অংশের দু’টি কমিটি বিদ্যমান। ফলে আলাদাভাবে কর্মসূচিতে লোক হয় আট থেকে ১০ জন করে।

একই অবস্থা ছাত্র ফেডারেশনেরও। এই সংগঠনেরও অংশ দুটি। একটি জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলনপন্থী, অন্যটি বদরুদ্দীন উমরের জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলপন্থী। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টও দুই ভাগে বিভক্ত। ২০১৮ সালে ভাগ হওয়ার পর থেকে এই সংগঠনটির একটি মার্কসবাদী অংশ, আরেকটি অংশ খালেকুজ্জামানপন্থী হিসেবে পরিচিত।

একটা সময় ছিল যখন দাপুটে ছাত্র সংগঠনগুলোর মিছিলের স্লোগান শুরু হলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নিতেন। একটি সংগঠনের মিছিল মানেই কয়েক হাজার ছাত্রের জমায়েত। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন এসব ইতিহাস। বর্তমানে এই সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে লোক সমাগম হাতে গোনা। এগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসাহাসিও করেন অনেকে। সংগঠনগুলো এখনো গণ-কর্মসূচি বাদ দিয়ে নিজেদের সংকুচিত করে ফেলেছে ‘দেওয়াল লিখন’ আর ‘চিকা মারা’র মধ্যে।

নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে ভাঙন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কর্মসূচি থেকে দূরে যাওয়াসহ বেশকিছু কারণে সংগঠনগুলোর এমন দুরবস্থা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে বামপন্থী মতাদর্শের প্রতি অনেকের ঝোঁক থাকলেও রাজনীতিতে আসছেন না তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাবিতে এসে খুব ইচ্ছা ছিল বাম রাজনীতি করব। কিন্তু নিজেদের বাম দাবি করলেও আদতে তারা ডানপন্থী ও স্বার্থান্বেষী। তারা শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বললেও তাদের কথা বলার ধরন ও চিন্তার জায়গাগুলো কখনো মানুষের ভেতর জায়গা করে নিতে পারেনি।’

এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো আদর্শিক রাজনীতি করি। ২০১৩ সালে আমাদের আদর্শগত জায়গায় একটা পার্থক্য তৈরি হলে সেখানেই বিভক্ত হয়ে যাই। তবে আমাদের রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা, সংকট ও যেকোনো অন্যায় দেখলে সব বাম ছাত্রসংগঠন এক হয়ে কাজ করা।’

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘ মল্লার বসু তাদের বিভক্তি প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ফাটলটা আসে ২০২০ সালের দিকে। কেউ কেউ আমাদের নাম ভাঙিয়ে স্বার্থান্বেষী কাজ শুরু করেছিল। সেজন্য আমরা সেখান থেকে সরে আসি। আমরা আদর্শিক রাজনীতি করি। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ও সংকটে আমরা পাশে থাকি। তাই ছাত্র ইউনিয়নের নাম এলে মানুষ আমাদেরকেই চেনে।’

ডাকসু নির্বাচনে প্যানেল দেবে বাম ছাত্রসংগঠনগুলো

ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিগত সময়ে ডাকসুর জন্য আন্দোলন করেছি। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন আমাদের আন্দোলনের ফসল। তাই, আমরা এবারও চাই বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করুক। নির্বাচনে আমাদের প্যানেল থাকবে।’

ঢাবি ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আরমানুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শিগগিরই ডাকসু নির্বাচন চাই। নির্বাচনে অবশ্যই আমাদের প্যানেল থাকবে।’ এ ছাড়াও, বাম ধারার অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোও নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে জানিয়েছে।

নতুন কোনো রূপরেখা নেই বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর

জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির পট পরিবর্তন হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ এখন পর্যন্ত কোন আঙ্গিকে নিজেদের সাজাবে, কীভাবে রাজনীতি করবে, কীভাবে দলগত পরিকল্পনা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাবে- তার কোন রূপরেখা তৈরি করতে পারেনি ঢাবির বাম ছাত্রসংগঠনগুলো।

এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘ মল্লার বসু বলেন, ‘আমাদের কোনো নতুন রূপরেখা নেই। তবে, শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবিগুলো আদায়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের নতুন কোনো পরিকল্পনা বা রূপরেখা নাই। আমরা শিক্ষার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা ও সংকট নিয়ে কাজ করি। সেটা চলমান রাখব।’

এ ছাড়া ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসমাজসহ বেশ কয়েকটি বাম ছাত্রসংগঠনের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের নতুন কোনো রূপরেখা তৈরি হয়নি। তবে বাম রাজনীতির আদর্শকে ধারণ করে শিক্ষার্থী ও গণমানুষের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা।

সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম

ছাত্র রাজনীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাম ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর