মৃত ঘোষণার পর অঙ্গদানের সময় জেগে উঠলেন রোগী!
১৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:২৪
বিশ্বজুড়ে অঙ্গদানকে একটি মহৎ কাজ হিসেবে গণ্য করা হলেও, সম্প্রতি আমেরিকায় অঙ্গদান প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেন্টাকিতে এক অঙ্গদাতা রোগীকে মৃত ঘোষণা (ব্রেইনডেড) করার পরও তার শরীরে প্রাণের চিহ্ন পাওয়া যায়। তবুও, অঙ্গ সংগ্রহের চেষ্টা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়, যা নিয়ে রোগীর পরিবার আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। ঘটনাটি অঙ্গদানের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে আমেরিকার কেন্টাকিতে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে, যখন টিজে হুভার নামের এক ব্যক্তি অতিরিক্ত মাদক সেবনের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। রিচমন্ডের ব্যাপটিস্ট স্বাস্থ্য হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে ব্রেইনডেড ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে তার অঙ্গগুলো প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত কি না তা পরীক্ষা করা হয়। তবে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ তিনি চোখ খুলে তাকান এবং ছটফট করছিলেন।
হাসপাতালের কর্মীদের উদ্বেগ
হাসপাতালের কর্মীরা এই পরিস্থিতি দেখে অবাক হয়ে যান এবং দুই চিকিৎসক অপারেশন থেকে সরে দাঁড়ান। তবে, কেন্টাকি অর্গ্যান ডোনার অ্যাফিলিয়েটস (কেওডিএ) এর কর্তৃপক্ষ থেকে অন্য চিকিৎসকদের দিয়ে কাজটি করতে বলা হয়। হুভারকে ওষুধ দিয়ে নিস্তেজ করার চেষ্টা করে তার শরীর থেকে অঙ্গ নেওয়ার পরিকল্পনা চলতে থাকে।
কর্মীদের মতানৈক্য এবং পদত্যাগ
নাতাশা মিলার, যিনি হুভারের অঙ্গ সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত ছিলেন তিনি বলেন, ‘রোগী তখনো জীবিত ছিলেন এবং তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।’ কেওডিএ-এর অন্য কর্মীরা ভয়াবহ এই ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, যার ফলে অনেকে পদত্যাগ করেন।
রোগীর পরিবারের প্রতিক্রিয়া
হুভারের বোন ডোনা রোরার জানান, আইসিইউ থেকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার সময় তার ভাই চোখ খুলেছিলেন। তখনই তাদের সন্দেহ হয়েছিলো বিষয়টি নিয়ে। পরিবারটি হাসপাতালে অভিযোগ করলে তাদের বলা হয়, এটি ছিল শুধুমাত্র একটি প্রতিক্রিয়া। ডোনা বলেন, ‘ও হয়তো আমাদের জানাতে চাইছিল যে সে তখনও বেঁচে ছিল।’
তদন্ত ও ভবিষ্যৎ
অবশেষে, হুভারের অঙ্গ সংগ্রহের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি তার বোনের সাথে আছেন। যদিও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি, তার স্মৃতিশক্তি বিঘ্নিত হয়েছে এবং তিনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে বা কথা বলতে পারছেন না। এ ঘটনায় কেন্টাকির অ্যাটর্নি জেনারেল তদন্ত শুরু করেছেন এবং কেওডিএ সহ অঙ্গদান প্রক্রিয়ার অন্যান্য সংস্থার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। অঙ্গদান প্রক্রিয়ার সুরক্ষা ও নৈতিকতা নিয়ে আরও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এনজিও (নন গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন) কাজ করছে।
সারাবাংলা/এনজে