শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ঘোষণা
২১ অক্টোবর ২০২৪ ০০:০৮
ঢাকা: এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনরায় প্রকাশের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি জানিয়েছেন, আগামীকাল সোমবার (২১ অক্টোবর) তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।
অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের একাংশের রোববার (২০ অক্টোবর) দিনভর বিক্ষোভের পর রাতে বোর্ড চেয়ারম্যান এ ঘোষণা দিয়েছেন।
অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা এখনো অবরুদ্ধ। তারা (শিক্ষার্থীরা) আমার পদত্যাগ চেয়েছে। আমি বলেছি, ঠিক আছে, যদি আমি পদত্যাগ করলে তোমরা অটোপাস পাও, তাহলে আমি কালই পদত্যাগ করব। আমি কাল (সোমবার) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেবা।’
এর আগে রোববার সকাল ১১টার দিকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের একাংশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন অভিভাবকও ছিলেন। বিক্ষোভ করতে করতে শিক্ষার্থীরা বোর্ডের মূল ফটকে তালা দেয়। একপর্যায়ে বোর্ড চেয়ারম্যানের কক্ষে প্রবেশ করেও বিক্ষোভ করে তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রেজাল্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে তা বৈষম্যমূলক। তারা সবগুলো বিষয়ের ওপর সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফলাফল চান। এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই সেই সাবজেক্ট ম্যাপিং করার দাবি জানায় তারা।
বোর্ড চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সন্ধ্যার পর সারাবাংলাকে বলেছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বাতিল হওয়া পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল তৈরি করা হয়েছে। এখানে কেউ বঞ্চিত বা বৈষম্যের শিকার হওয়ার প্রশ্ন আসে না। তারপরও তারা দাবি জানিয়েছে। তাদের কথা বা দাবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আমরা অবগত করব।
বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো আশ্বাসেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ বন্ধ করেনি। বরং বোর্ড চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। একপর্যায়ে তারা বোর্ড চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই অধ্যাপক তপন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেছে, বিক্ষোভের সময় দুপুরে বোর্ড কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে তাদের অন্তত ছয়জন আহত হয়েছে। তবে বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভবনের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে। ফলে তারা প্রতিরোধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
এর আগে গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। প্রথম দফায় প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী আট দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।
পরীক্ষার সূচি অনুযায়ী মোট ৬১ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া বাকি ছিল। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা স্থগিত এবং পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তা বাতিল করা হয়। এতে কারও পাঁচ বিষয়, আবার কারও ছয় বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। সেগুলোতে এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলো খাতা মূল্যায়ন করে নম্বর ও গ্রেড পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়।
গত ১৫ অক্টোবর চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
সারাবাংলা/জেআর/টিআর