Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বাস্থ্য অধিদফতরে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের সংঘর্ষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৫৬

ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকসহ (প্রশাসন) বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে বিএনপিপন্থি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও জামায়াতপন্থি ন্যাশনাল ডক্টর ফোরাম (এনডিএফ)।

এই দুই চিকিৎসক সংগঠনের মধ্যকার এই দ্বন্দ্ব সংঘর্ষেও রূপ নেয়। সংঘর্ষে তিনজন চিকিৎসক আহত হওয়ার অভিযোগ  ওঠেছে। আহত চিকিৎসকরা হলেন— ডা. ইমরান, শাহরিয়ার ও যোবায়ের।

সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর মহাখালী টিবি গেটের স্বাস্থ্য ভবনে সকাল থেকেই পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয় বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব ও বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক ব্যানারে জামায়াতপন্থি এনডিএফ।

একদিকে, অধিদফতরে নতুন নিয়োগ পাওয়া পরিচালক, লাইন ডিরেক্টরসহ সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য প্রশাসকদের ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে সকাল থেকেই গেটের সামনে মিছিল-সমাবেশ করে ড্যাবের চিকিৎসকরা।

অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক আন্দোলনের ব্যানারে অধিদফতরের ভেতরে অবস্থান নিয়ে স্বাস্থ্যখাত সচল রাখতে বর্তমান নিয়োগপ্রাপ্তদের কাজের পথ সুগম করার দাবি জানায় এনডিএফসহ অন্যান্য সাধারণ চিকিৎসকরা।

এ সময় দুপক্ষ পরস্পর বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে চিকিৎসকদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, এমনকি তা এক পর্যায়ে হাতাহাতি পর্যায়ে পৌঁছায়। এ সময় রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনজন আহত হন।

বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক আন্দোলনের ব্যানারে আসা চিকিৎসকদের দাবি, ড্যাবের সঙ্গে থাকা বহিরাগত সন্ত্রাসীরা রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর, তার পাঁজরের হাড় ভেঙে গেছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ড্যাবপন্থীরা।

বিজ্ঞাপন

সংঘর্ষের পরপরই ড্যাবপন্থি চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনের সিঁড়িতে অবস্থান নেন। সেখানে সংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ড্যাব নেতারা। ড্যাবের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ডা. মেহেদী হাসান বলেন, ‘এখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। আপনারা জানেন, এখানে আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল, আমরা কর্মসূচি পালন করতে এসে দেখি আরেক দল চিকিৎসক এখানে বসা। তখন তাদের সাথে আমাদের কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে কোনো ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি।’

এ সময় ড্যাব সদস্য ডা. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সমাবেশে বহিরাগত কেউ আসেনি। এখানে যারা আছে প্রত্যেকেই চিকিৎসক, নার্স এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। বরং আমাদের বিপরীতে যারা এখানে আন্দোলন করতে এসেছে, তারাই বহিরাগতদের নিয়ে এসেছে।’

ড্যাবের চিকিৎসকরা যখন বাইরে অবস্থান নেন তখন অধিদফতরের কনফারেন্স রুমের সামনে ও বিভিন্ন ফ্লোরে বিক্ষোভ করে এনডিএফ। এ সময় সংবাদিকদের ব্রিফ করেন সংগঠনের নেতারা।

সংগঠনটির প্রকাশনা সম্পাদক ডা. মো. আহাদ হোসেন বলেন, ‘ভ্রাতৃপ্রতীম দুই সংগঠনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দেখে ফ্যাসিবাদীরা দূরে বসে মুচকি হাসে। তারা চায় বাংলার মাটিতে এই বৈষম্য চালু থাকুক। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রধান লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশের প্রধান দুটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে দুই মেরুতে পাঠিয়ে দেওয়া। তারা সেই ষড়যন্ত্রে সফল হয়েছিল। কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরে থেকেছি।’

তাদের লক্ষ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকদের চাওয়া খুবই কম। আমরা চাই, আমাদের পোস্টিং ও পদোন্নতিটা ঠিকমতো হোক। যারা বৈষম্যের শিকার হয়েছে তাদের সঠিক জায়গায় নিয়ে আসা হোক। ফ্যাসিবাদী স্বাস্থ্য প্রশাসন পুরো ঢাকায় তাদের লোকজন দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে। আমরা তা সাফ কর‍তে চাই। এটা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ড্যাবের ভাইয়েরাও চায়। বর্তমান সরকার যাদের নিয়োগ দিয়েছেন তারা আমাদের দলীয় লোক নন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের অতীত রেকর্ড বলে, তারা প্রতিটি মানুষ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে একজন ডা. জয়নাল আবেদিন টিটো। সারাদেশের ডাক্তারদের মাঝে তিনি সৎ ও নিষ্ঠাবান হিসেবে পরিচিত। অথচ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, তিনি ফ্যাসিবাদের দোসর। স্বাস্থ্যখাতে অনেক সংস্কার বাকি রয়েছে। কেন আমাদের বন্ধুপ্রতীম সংগঠনের ভাইয়েরা তা বুঝতে পারছেন না, আমরা জানি না।’

কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ঘোষণা দিয়ে এনডিএফ নেতা বলেন, ‘আমরা আজ চাইলে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে এবং আমাদের যে উপস্থিতি ছিল তাতে বড় সংঘাতে জড়াতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি। আমরা সংঘাতে যেতে চাই না। কিন্তু নিয়োগ অর্ডার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরে অবস্থান করব। আমাদের কর্মসূচি চলবে।’

প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন নিয়োগ পাওয়া পরিচালক, লাইন ডিরেক্টরসহ সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য প্রশাসকদের ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন ড্যাবের চিকিৎসকরা।

রোববার (২০ অক্টোবর) তাদের বাধার মুখে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফ অধিদফতরে প্রবেশ করতে পারেননি। আজ সোমবার তিনি যোগদান করার জন্য অধিদফতরে আসেন। এ সময় আবারও তাকে যোগদানে বাধা প্রদান করে ড্যাব। ড্যাবের সদস্যরা পরিচালককে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ হিসেবে আখ্যা দেয়।

তবে এদিন আগে থেকেই বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক আন্দোলনের ব্যানারে অধিদফতরের ভেতরে অবস্থান নিয়ে স্বাস্থ্যখাত সচল রাখতে বর্তমান নিয়োগপ্রাপ্তদের কাজের পথ সুগম করার দাবি জানান এনডিএফ’র চিকিৎসকরা। তাদের অভিযোগ, নিজ দলের না হলেই ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিচ্ছে বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

চিকিৎসক টপ নিউজ সংঘর্ষ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ট্রেনে কাটা পড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু
২১ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৫২

সম্পর্কিত খবর