চট্টগ্রাম আদালতে কর্মবিরতিতে ৬ বিচারক
২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:২৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যে বাকবিতণ্ডার জেরে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের ছয় বিচারক কর্মবিরতি পালন করেছেন। এতে সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা বিপাকে পড়েন।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে এ ঘটনার পর দিনভর আর বিচারকরা এজলাসে বসেননি বলে জানা গেছে।
আইনজীবী ও আদালতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যার ঘটনায় শোয়াইবুল হক চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে মামলা করার আবেদন করেন। মামলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস ছালামসহ ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
আবেদনের ওপর শুনানির সময় বিচারক তাকে আসামিদের নাম বলার জন্য বলেন। আবেদনকারী শোয়াইবের পক্ষে থাকা চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নবনিযুক্ত জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বিচারককে মামলা থানায় রেকর্ডের নির্দেশ দিতে বলেন।
এ নিয়ে বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বিচারক অলি উল্লাহ এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান।
এ ঘটনা জানার পর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতরর অন্য পাঁচ বিচারকও কার্যক্রম বন্ধ করে এজলাস ছেড়ে যান।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ১৭ জুলাই সারা বাংলাদেশেই গণহত্যা চালানো হয়েছে। চট্টগ্রামেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ওইদিনের ঘটনায় আহত এক শিক্ষার্থী আদালতে ১২৬ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলার আবেদন করেছিলেন অলি উল্লাহ মহোদয়ের আদালতে। বিচারক মহোদয়কে আমরা মামলাটি গ্রহণ করে থানায় ফাইল করতে দেওয়ার জন্য আবেদন করি।’
‘আদালতের বিচারক তাকে সব আসামির নামসহ তাদের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ সব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বলতে বলেন। পরে সে ১৮ থেকে ২০ জনের নাম বলেন। তখন আমি আদালতকে বলি, আমরা ভিডিও ফুটেজ এবং শোয়াইব যে আহত হয়েছে সেটার চিকিৎসা সনদ জমা দিয়েছি। এরপর তিনি পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সেটাকে সম্মান জানিয়ে চলে এসেছি। তার আগে তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তার আদালতে যাতে কোনোরকম জোর চালানো না হয়। এ ধরণের মামলা নিয়ে তার কোর্টে যেতেও নিষেধ করেন। এরপরই তিনি চেয়ার থেকে উঠে চলে যান। এরপরই আমি আমাদের সমিতির সভাপতি ও সাধারণ আইনজীবীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। এর আগে অলি উল্লাহ সাহেব অনেক সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে মিছিল করে তাকে প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।’
‘আমরা এর আগেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। বিচারবিভাগের প্রতি সম্মান রেখে বলছি উনাকে চট্টগ্রামের আদালতে আমরা সাড়ে আট হাজার আইনজীবী চাই না। আমরা তার কাছ থেকে মুক্তি চাই। যারা ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে মেনে নিতে চায় না, রক্তকে সম্মান করে না এরকম বিচারক আমরা চাই না।’
সারাবাংলা/আইসি