Tuesday 19 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খাল উদ্ধারে বাধা, চসিককে দুষলেন ম্যাজিস্ট্রেট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:১৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ এলাকার কালির ছড়া খাল উদ্ধারে অভিযান করেছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা। তবে নোটিশ ছাড়া উচ্ছেদ অভিযানের অভিযোগ তুলে স্থানীয় বাসিন্দারা কর্মকর্তাদের উচ্ছেদে বাধা দেন এবং বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত এ কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) খালের সীমানা বিবেচনায় না নিয়ে প্লট বরাদ্দ দেওয়ায় এরকম ঘটনা ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকালে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি লিংক রোডের সুপারি বাগান ও লেক সিটি এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের কাট্টলী ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনার আরাফাত সিদ্দিকী।

গত ১৭ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯তম সভায় লেক সিটি এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।

বুধবার সকালে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের কাছে বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তাদের স্থাপনা ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। এরপর সহকারী কমিশনার আরাফাত সিদ্দিকী তাদের পাহাড় কমিটির নির্দেশনা ও পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশ অধিদফতরের আইন সম্পর্কে জানান।

জানতে চাইলে আরাফাত সিদ্দিকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনারা প্রথমে বাধা দিলেও আমাদের উচ্ছেদ অভিযানে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা ৩৫টির বেশি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। রাস্তায় এখন হাত দিচ্ছি না। তাহলে মানুষ চলাফেরা করতে পারবে না।’

বিজ্ঞাপন

আরাফাত সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কালিছড়া খালটি সীতাকুন্ড পাহাড় থেকে এসে সরাসরি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলেছে। সময়ে বিবর্তনে এ খাল নাব্যতা হ্রাস, অবৈধ দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে এখন এর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। কিছু কিছু জায়গায় সরু নালায় পরিণত হয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা আছে পরিবেশের আর কোনো ক্ষতি করা যাবে না। যতটুকু ক্ষতি হয়েছে আমরা সেগুলোকে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ খালের পাশে ঘর-বাড়ি, ডেইরি ফার্ম, রাস্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা, ধর্মীয় স্থাপনাসহ নানাকিছু নির্মাণ করা হয়েছে। মানুষ যে এসব জেনে-বুঝে করেছে এমনও না।’

পাহাড়ে অবৈধ গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি যারা নিয়েছে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ব্যবস্থা নেবে। পাহাড়ে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি না নিয়ে যারা বসবাস করছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।

যাদের কাছে জায়গার কাগজপত্র আছে সে বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের যে লেকসিটি হাউজিং সেটাতে কালিছড়া খালের সীমানাকে বিবেচনায় না নিয়ে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে একজন সাধারণ মানুষ তার বরাদ্দ পাওয়া প্লট পেয়ে সেখানে বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে রেখেছে। বিএস নকশা অনুযায়ী এটা একদম খালের মাঝখানে। এই যে ভুল বোঝাবুঝির বিষয়টি তৈরি হয়েছে এটা সিটি করপোরেশন ও প্লট গ্রহীতা একসঙ্গে বসলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রোকসানা বেগম নামে এক বাসিন্দা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাগজপত্র সব ঠিক আছে। আমাদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। আমরা তো জানিও না। আমাকে বাইরের মানুষ কল দিয়ে বলছে আপনার দেয়াল ভেঙ্গে ফেলছে। জায়গা নিয়ে কোনো মামলা থাকলে বা সমস্যা থাকলে আমাদের আগে জানাতে হবে। আমরা সাধারণ মানুষ লাখ লাখ টাকা দিয়ে জায়গাগুলো কিনেছি। সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে চারপাশে দেয়াল দিয়ে বাউন্ডারি দিয়েছি। সেটাও ভেঙ্গে ফেলল। এভাবে কোনো আইনি নোটিশ ছাড়া দেয়াল ভেঙ্গে দেওয়া আইনের আওতায় পড়ে না।’

খালেদ বিন আনোয়ার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘উনারা নাকি ছড়ার জায়গা নিতে এসেছেন। কিন্তু তারা যে দেয়াল ভাঙলো এটা কোনো নোটিশ ছাড়াই। তারা আমাদের আগেও বলেনি। কোনো সরকারি নোটিশ ছাড়াই উনারা আমাদের জায়গায় কীভাবে হাত দেবে। তিনি ম্যাজিস্ট্রেট বা যেই হোক। আমি তো সাধারণ নাগরিক। জায়গার কাগজপত্র না থাকলে তাহলে তারা হাত দিতে পারবে। আমাদের সব ডকুমেন্টস আছে। বৈধ কাগজপত্র আছে। প্রতিবছর খাজনাও দেই আমরা।’

প্রসঙ্গত, বায়েজিদ লিংক রোডের সুপারি বাগান ও লেক সিটি এলাকায় পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ আছে চসিকের স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে। উত্তর পাহাড়তলী এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় কাটার অভিযোগে জসিমের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১০ আগস্ট আকবর শাহ থানায় মামলা হয়। তার আগে ২০১৫ সালেও কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে পরিবেশ অধিদফতর।

২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি পাহাড় কেটে কালির ছড়া খাল ভরাট দেখতে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ওইসময় তার ওপর চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের নেতৃত্বে হামলার করার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নগর পুলিশের আকবর শাহ থানায় একটি মামলাও করেন।

সারাবাংলা/আইসি/এইচআই

খাল উদ্ধারে অভিযান চসিক ম্যাজিস্ট্রেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর