Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দানার প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টি শুরু, চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ অক্টোবর ২০২৪ ২১:১১

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগরে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। সারাবাংলা ফাইল ছবি

ঢাকা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানা ক্রমেই এগিয়ে চলেছে স্থলভাগের দিকে। এখন পর্যন্ত এর গতিপথ বলছে, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং ওড়িশার পুরি উপকূলের মাঝামাঝি স্থলভাগে আঘাত করতে পারে। তবে এর প্রভাবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগ অতিক্রম করা পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি চলতে থাকবে। দানার প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে ভারতেও।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আবহাওয়া অধিদফতর থেকে ৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় দানা সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছি। একই সময় মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ছিল এর অবস্থান।

বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড়টি এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের উপকূলে ঝড়-বৃষ্টি দেখা দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত শুরু হয় কক্সবাজারে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে তীব্র বাতাসের সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। পরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত ছিল আরও প্রায় আধা ঘণ্টা। সন্ধ্যার পর বৃষ্টির তথ্য পাওয়া গেছে বরিশাল অঞ্চলেও। চট্টগ্রামে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে রাত সাড়ে ৮টার দিকে। খুলনা এলাকায় এখন পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টির তথ্য মেলেনি। সেখানে থমথমে আবহাওয়া বিরাজ করছে।

আরও পড়ুন- পায়রা থেকে ৫৫৫ কিমি দূরে ‘দানা’, বাড়ছে বাতাসের গতি

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবেই ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সারা রাত তো বটেই, আগামীকালও (বৃহস্পতিবার) দিনভর বৃষ্টিপাত অব্যাত থাকবে। চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী এলাকায় বৃষ্টি বেশি হবে। এ ছাড়া খুলনা বিভাগের খুলনা-সাতক্ষীরা ও বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী-ভোলা জেলায় ঝড়-বৃষ্টির প্রভাব বেশি থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয় জানিয়েছে, জেলার কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় চার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে নগরী ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাতের তথ্য নেই। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রুবেল হাওলাদার বলেন, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় দানা অবস্থান করছে। এর প্রভাবে মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে উপকূলে বৃষ্টি হচ্ছে। বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’: হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান মেঘের অগ্রবর্তী ভারী বৃষ্টিযুক্ত একটি অংশ বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে রাত ৩টার মধ্যে বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। এর প্রভাবে বুধবার প্রায় সারা রাত খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে।

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, বিশেষ করে খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ ও নড়াইল; বরিশাল বিভাগের সব জেলা; এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশার দিকেই যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় দানা

আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বিভিন্ন মডেল থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং ওড়িশার পুরি উপকূলের মাঝামাঝি স্থলভাগেই ঘূর্ণিঝড় দানার আঘাত হানার সম্ভাবনা প্রবল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ভোরের মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

আরও পড়ুন- পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূলের দিকে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’

সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ স্থলভাগে উঠে যেতে পারে। কেন্দ্রটি হয়তো স্থলভাগে উঠবে মধ্যরাত নাগাদ। ঘূর্ণিঝড়ের লেজের অংশ স্থলভাগে উঠতে আরও কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূলের দিকেই এর গতিমুখ। অনেক সময় বাড়তি গতির কারণে স্থলভাগে আঘাত হানার আগে গতিপথ বদলও হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এর গতিমুখ বদলে বাংলাদেশের দিকে ঘুরলে খুলনা অঞ্চলে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়টির খুলনা উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা কম।’

ভারতের আবহাওয়া অফিস মৌসুম ভবনও জানিয়েছে একই ধরনের তথ্য। বুধবার মধ্যরাত নাগাদ এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে জানিয়ে আলিপুর আবহাওয়া দফতর বলছে, মধ্যরাতের পর থেকে সমুদ্রে বাতাসের গতি বেড়ে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। বৃহস্পতিবার সকালে তা ছাড়িয়ে যেতে পারে ১০০ কিলোমিটার।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য আরও বলছে, রাত ৮টা নাগাদ ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্ব ও ধামারা থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে রয়েছে ঘূর্ণিঝড় দানা। সাগরদ্বীপ থেকে পুরি এবং আরও সুনির্দিষ্টভাবে ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যে এটি স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে।

আরও পড়ুন- গভীর নিম্নচাপ রূপ নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’য়

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলেও স্থলভাগে আঘাতের পর দানার শক্তি কমে যাবে বলে পূর্বাভাসে বলছে আলিপুর আবহাওয় অফিস। তাদের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সমুদ্রে ঝড়ের গতি থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়া আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। শুক্রবার সকালে ঝড়ের বেগ কমে ৯৫ থেকে ১০৫ কিলোমিটারে নেমে আসতে পারে। রাতে ঝড়ের গতি আরও কমে ৬৫ থেকে ৭৫ কিলোমিটারে নেমে আসবে। স্থলভাগে আঘাত করার পর শক্তি হারিয়ে শনিবারের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি আবার নিম্নচাপে পরিণত হবে।

বন্দরে সতর্ক সংকেত

এদিকে ঘূর্ণিঝড় দানার গতিমুখ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশার দিকে থাকলেও দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণপশ্চিম ও পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দেওয়া হয়েছে নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। এসব নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের মধ্যে ঘণ্টায় একটানা সর্বোচ্চ ৬২ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে বাতাস বইছে। দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া আকারে এই গতিবেগ ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। এর প্রভাবে সাগর অত্যন্ত উত্তাল। ঝড় বা বৃষ্টি কেবল নয়, উপকূলীয় জেলাগুলোতে এর কারণে জোয়ারের সময় পানির উচ্চতাও কিছুটা বেশি হবে।’

আরও পড়ুন-

লঘুচাপ এখন সুস্পষ্ট, ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

অক্টোবরেও বাড়তি বৃষ্টি, থাকছে ঘূর্ণিঝড়-বন্যার শঙ্কাও

গভীর নিম্নচাপে সাগর উত্তাল, ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশায়

সারাবাংলা/টিআর

ঘূর্ণিঝড় ঘূর্ণিঝড় দানা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর