Friday 13 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অক্টোবরেও বাড়তি বৃষ্টি, থাকছে ঘূর্ণিঝড়-বন্যার শঙ্কাও

তরিকুর রহমান সজীব, অ্যাডিশনাল নিউজ এডিটর
৩ অক্টোবর ২০২৪ ১২:২৯

সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি। বেশ কয়েকদিন তীব্র বৃষ্টিপাত দেখেছে রাজধানীবাসীও। গত ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে তোলা। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

ঢাকা: অক্টোবরের শুরু। বাংলায় আশ্বিনের মাঝামাঝি। বঙ্গাব্দ বর্ষপঞ্জিতে শরৎকাল হলেও আবহাওয়াবিদ্যার পরিভাষায় ‘মৌসুম’ তথা বর্ষাকাল এখনো কাটেনি। সেই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই চট্টগ্রাম-বরিশাল বিভাগে অক্টোবর মাস শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত দিয়েই। অক্টোবরের দ্বিতীয় দিনেও দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত টানা ঝরঝর করে বৃষ্টি ঝরছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশালে।

সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসের পুরোটা জুড়েই ছিল বৃষ্টির দাপট। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য বলছে, এ মাসে সারা দেশে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিতে শুরু হওয়া অক্টোবর মাসেও একই প্রবণতা বজায় থাকবে। এ মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারেই বলে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদফতর। পাশাপাশি রয়েছে একাধিক লঘুচাপের আশঙ্কা, যার মধ্যে একটি ঘুর্ণিঝড়েও রূপ নিতে পারে। আবার সেপ্টেম্বর মাসের গড় তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। বাড়তি তাপমাত্রার প্রবণতা বজায় থাকতে পারে অক্টোবরেও।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌসুমি বায়ুর বর্ধিতাংশ বছরের এই সময়টায় বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে এ বছর মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা বেশি বলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও বেশি। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও লঘুচাপ সেই বৃষ্টিপাতকে মাত্রাছাড়া করেছে। এ বছর গ্রীষ্মে যে তীব্র গরম পড়েছিল, তারও প্রভাব রয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাতের পেছনে।

সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাতের তথ্য

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে রংপুর বিভাগে বৃষ্টিপাত ছিল ৪৩৪ মিলিমিটার। এই বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ কম, যেটিকে প্রায় স্বাভাবিক বলা যায়। বেশি বৃষ্টিপাতের জন্য সুপরিচিত হলেও এ মাসে সিলেট বিভাগে বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৩২ শতাংশ কম, ২৭৭ মিলিমিটার (স্বাভাবিক ৪০৭ মিলিমিটার)। ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এ মাসে, যার পরিমাণ ছিল ২০০ মিলিমিটার (স্বাভাবিক ৩৭৮ মিলিমিটার)।

বিজ্ঞাপন

দেশের বাকি পাঁচ বিভাগেই বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি— চার বিভাগেই স্বাভাবিকের প্রায় দেড় গুণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে— ৫০৩ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের (৩১৯ মিলিমিটার) চেয়ে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বরিশাল বিভাগে, যা স্বাভাবিকের (৩২৬ মিলিমিটার) চেয়ে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

এ ছাড়া খুলনা বিভাগের ৪৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের (৩১৩ মিলিমিটার) তুলনায় ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ঢাকা বিভাগের ৩৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতও স্বাভাবিকের (২৬৫ মিলিমিটার) চেয়ে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে এ মাসে রাজশাহী বিভাগের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২৭১ মিলিমিটার হলেও বৃষ্টি হযেছে ৩৪৭ মিলিমিটার, যা ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

সার্বিকভাবে আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাবে সারা দেশে সেপ্টেম্বর মাসের জন্য স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩২৪ মিলিমিটার। সেখানে এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৪৩০ মিলিমিটার। অর্থাৎ স্বাভাবিকের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে এ মাসে।

প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেও ক্যাম্পাসে হাজির। ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায়। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

বাড়তি বৃষ্টির আভাস অক্টোবরেও

সেপ্টেম্বর মাসের মতো এত বেশি না হলেও অক্টোবর মাসেও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদফতর। আট বিভাগের জন্যই একই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশি বৃষ্টি হতে পারে সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগে। তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টি হতে পারে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগে।

আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস বলছে, ঢাকা বিভাগে অক্টোবর মাসে স্বাভাবিকভাবে ১৫ দিন বৃষ্টিপাত হলেও এ বছর বৃষ্টি হতে পারে ১৭ দিন। একইভাবে ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিক ১৬ দিনের জায়গায় ১৮ দিন পর্যন্ত, চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিক ১৪ দিনের জায়গায় ১৫ দিন, সিলেট বিভাগে স্বাভাবিক ১৮ দিনের জায়গায় ২০ দিন, রাজশাহী বিভাগে স্বাভাবিক ১৫ দিনের জায়গায় ১৭ দিন, রংপুর বিভাগে স্বাভাবিক ১৬ দিনের জায়গায় ১৮ দিন, খুলনা বিভাগে স্বাভাবিক ১৬ দিনের জায়গায় ১৮ দিন ও বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিক ১৭ দিনের জায়গায় ১৯ দিন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে এ মাসে।

এ মাসের শুরুটাই অবশ্য আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসের প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়েছে। মাসের প্রথম দিন থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সন্দ্বীপে ২৩ মিলিমিটার; বান্দরবানে ১০ মিলিমিটার; কুমিল্লায় ৯ মিলিমিটার; ফেনী, রাঙ্গামাটি ও কুতুবদিয়ায় ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২২ মিলিমিটার। অন্যদিকে খেপুপাড়ায় ১৭ মিলিমিটার ও ভোলায় ৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

বুধবার (২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টি বেড়ে গেছে অনেকটাই। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, সোমবার (৩ অক্টোবর) সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে চট্টগ্রামে— ১২০ মিলিমিটার। এ ছাড়া কক্সবাজারে ১১৪ মিলিমিটার, মাইজদী কোর্টে ১০৮ মিলিমিটার, রামগতিতে ৭৪ মিলিমিটার, ফেনীতে ৫৪ মিলিমিটার ও বান্দরবানে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণেই এই বৃষ্টি হচ্ছে। আজও (বৃহস্পতিবার) ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’

মৌসুমি বায়ুর পাশাপাশি তাপমাত্রার প্রভাব

দেশে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে দেশের একদম পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের টেকনাফ দিয়ে। সেপ্টেম্বর থেকে এর প্রভাব কমতে থাকলেও অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকে। মৌসুমি বায়ুর উপস্থিতির কারণেই অক্টোবর পর্যন্ত সময়কেও আবহাওয়াবিদ্যার পরিভাষায় বর্ষাকাল বলা হয়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবই এই সময়ের বৃষ্টিপাতের মূল কারণ।

আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা সারাবাংলাকে বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে এমনিতেই মৌসুমি বায়ু যথেষ্ট সক্রিয় থাকে বাংলাদেশে। এর মধ্যে এ মাসে বঙ্গোপসাগরে বেশ কয়েকটি নিম্নচাপ ও লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে একটি লঘুচাপ ও একটি নিম্নচাপ অনেক বৃষ্টি ঝরিয়েছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় সপ্তাহে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল। এর প্রভাবে টানা প্রায় পাঁচ দিন বৃষ্টি হয়েছে। এসব লঘুচাপ ও নিম্নচাপ সেপ্টেম্বরের বাড়তি বৃষ্টিপাতের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

মৌসুমি বায়ুর পাশাপাশি এ বছর যে তীব্র গরম পড়েছিল, বাড়তি বৃষ্টিপাতে তারও প্রভাব দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাতিমা আক্তার।

সারাবাংলাকে ড. ফাতিমা বলেন, মৌসুমি বায়ু এই সময়টাতে যথেষ্টই সক্রিয় থাকে। তার ওপর এ বছর যে তীব্র গরম পড়েছে, এ ধরনের আবহাওয়া লঘুচাপ তৈরির জন্য সহায়ক। আর লঘুচাপ তৈরি হলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট যে সঞ্চালনশীল মেঘমালা, তারও গতিও লঘুচাপের দিকেই থাকে। এ রকম পরিস্থিতিতে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেপ্টেম্বরে সেটিই হয়েছে।

অবিরাম বৃষ্টিতেও থেমে থাকার সুযোগ নেই, কাজের জন্য ছুটতে হবেই। ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তোলা। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

তাপমাত্রাও থাকবে বাড়তি অক্টোবরে

দেশের পাঁচ বিভাগেই স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়তি বৃষ্টিপাত হলেও গড় তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সৈয়দপুরে— ২১ সেপ্টেম্বর সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ মাসে সার্বিকভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। অন্যদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সার্বিকভাবে সেপ্টেম্বরে সারা দেশের গড় তাপমাত্রাও ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

ঢাবির সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাতিমা বাড়তি তাপমাত্রার সঙ্গে বৃষ্টিপাতের যে সম্পর্কের কথা বললেন, আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসেও রয়েছে তার প্রভাব। তাতে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। তবে দিন ও রাতের কমতে থাকা এই তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকতে পারে। বাড়তি এই তাপমাত্রার প্রভাবে সাগরে লঘু ও নিম্নচাপ তৈরি এবং তা থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তি বৃষ্টি হতে পারে অক্টোবর মাসে।

ঘূর্ণিঝড়-বন্যার আশঙ্কাও থাকছে

অক্টোবর মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে এ মাসে এক থেকে তিনটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে একটি লঘুচাপ রূপ নিতে পারে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়েও।

বজ্রপাতের আশঙ্কাও থাকছে এ মাসে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিন দিন মাঝারি থেকে তীব্র পর্যায়ের বজ্রঝড় হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে।

অক্টোবরে বাড়তি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, অক্টোবরে দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীকেত স্বাভাবিক প্রবাহ থাকতে পারে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের পার্বত্য অববাহিকায় কিছু কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।

গোড়ায় উষ্ণতা

ঢাবি আবহাওয়াবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. ড. ফাতিমা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, জলবায়ু সবসময় পরিবর্তনশীল। এখন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্রমবর্ধমান একটি সময় আমরা পার করছি। প্রতি বছরই তাপমাত্রা আগের বছরের চেয়ে বেশি হচ্ছে। তাপমাত্রায় নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। উষ্ণায়নের এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতা স্থায়ী হলে অতি বৃষ্টি, খরা, এমনকি ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলোর (হ্যাজার্ড) প্রবণতা বাড়তে থাকবে। উষ্ণ তাপমাত্রায় এ ধরনের আবহাওয়া ও জলবায়ুগত ‘হ্যাজার্ড’ বাড়ে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

ড. ফাতিমার এই ব্যাখ্যায় সামনের সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আরও বেশিই দেখা যাচ্ছে। কারণ বিশ্বব্যাপীই তাপমাত্রা প্রতি বছর বাড়ছে। প্রতি বছরই উষ্ণতায় ভেঙে দিচ্ছে আগের বছরের রেকর্ড। বৈশ্বিক জলবায়ু গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস গত সেপ্টেম্বরে জানিয়েছে, এ বছরের গ্রীষ্মকাল তাপমাত্রায় আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ের দীর্ঘমেয়াদি গড়ের তুলনায় এ বছরের গ্রীষ্মের গড় তাপমাত্রা ছিল ১ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এ বছরের সারা বছরের তাপমাত্রাও আগের সব বছরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।

কেবল বৈশ্বিক হিসাব নয়, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের পরিসংখ্যানও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথাই বলছে। সেপ্টেম্বর মাসের তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি ছিল, সে কথা আগেই বলা হয়েছে। একই প্রবণতা ছিল আগস্ট মাসেও। ওই মাসে সারা দেশের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ড. ফাতিমা বলেন, নিম্ন অক্ষাংশের দিকে আমাদের ভৌগলিক যে অবস্থান, সেদিক থেকে আমরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায়। পশ্চিমাদের মতো শীতল এলাকার বিপরীতে আমাদের এলাকায় আবহাওয়াগত বিপর্যয়গুলো অনেক দ্রুত তৈরি হয় এবং আঘাত করে। তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো না গেলে অতি বৃষ্টি, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়— সবকিছুর পরিমাণই বাড়বে।

সারাবাংলা/টিআর

আবহাওয়া অধিদফতর গড় বৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপ বন্যা বৃষ্টি বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ু লঘুচাপ

বিজ্ঞাপন

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর