Saturday 26 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘টাকা ছাড়া একটি বাদাম নিল মানে আমার রিজিক নিয়ে গেল’

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০০

কক্সবাজার: ‘প্রতিটি বাদামে আমার পরিবারের রিজিক রয়েছে। সুতরাং কেউ টাকা না দিয়ে বা অনুমতি ছাড়া একটি বাদাম নিয়ে যাওয়া মানে আমার পরিবারের রিজিক নিয়ে যাওয়া। এটা সত্যিই কষ্টের। কেনার সামর্থ্য না থাকলে অন্তত বলে নিলে মনে শান্তি লাগে। যদিও অনেকে জিজ্ঞেস করে নেন। তার পরও এভাবে নিলে খারাপ লাগে’- কক্সবাজার কোর্টবিল্ডিং এলাকার বাদাম বিক্রেতা লিয়াকত হোসেন এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন।

বিজ্ঞাপন

চলার পথে টাকা না দিয়েই ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতার কাছ থেকে দুয়েকটা বাদাম নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের সঙ্গে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই কাজটি করার সময় অনেকে ন্যূনতম অনুমতি পর্যন্ত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না।

এই তালিকায় সমাজের অনেক ভালো অবস্থানের মানুষও রয়েছেন। বিষয়টি খুব তুচ্ছ এবং সাধারণ ঘটনা মনে হলেও এই ক্ষুদ্র এই ব্যবসায়ীদের কাছে এটি হতাশা ও কষ্টের। বিষয়টি নিয়ে কী কেউ কখনও ভেবে দেখেছে যে, এতে একজন বাদাম বিক্রেতার কীরকম বোধ হয়।

কক্সবাজার শহরের অন্তত ২০ জন বাদাম বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কম-বেশি প্রায় সব বাদাম বিক্রেতাই এই ভোগান্তির শিকার। অনেক সময় তাদের সারাদিনের লাভের অংশটাই চলে যায় লোকজনের ‘টোকানো’ অভ্যাসে। দুই-চারটা ঘটনা সহ্য করা গেলেও লাগাতর এমন অন্যায় মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। চোখের সামনেই তাদের সঙ্গে একের পর এক এমন অন্যায় হলেও প্রতিবাদ করার সাহস পায়না তারা।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বাদাম বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, কিছু লোকজন এমনিতেই বাদাম খাবে এই কথা মাথায় রেখেই বিচে বাদাম বিক্রি করতে নামেন। স্থানীয়দের পাশাপাশি অনেক পর্যটকও এই কাজ করেন।

হাসপাতাল সড়কের ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার হক খাচ্ছেন, তাকে আমি মাফ না করলে সে কখনও মাফ পাবে না। এই চিন্তা করে সবাইকে মাফ করে দিই। তবে অনেক সময় কষ্ট লাগে, যখন দেখি কেউ এক মুঠো বাদাম নিয়ে চলে যায়। দিন শেষে বাদাম বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। তার ওপর মানুষের ফাঁও খাওয়ার অভ্যাস।’

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে পাহাড়তলীর এক মসজিদের ইমাম মওলানা দিদারুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনোভাবেই কারও হক মেরে খাওয়া ঠিক না। খেলে তওবা করতে হবে। তবে তওবা কবুলের শর্ত আছে। আর তা হলো- যার হক নষ্ট করা হয়েছে তার পাওনা তাকে ফিরিয়ে দেওয়া। আর তা সম্ভব না হলে মাফ চেয়ে নেওয়া। তবে যারা না জেনে এই অপকর্ম করছে তাদের এখনই শোধরানো দরকার।’

ঘটনাটি খুব ছোট ও সাধারণ ভেবে সমাজের অনেকেই বুঝে বা না বুঝে এই কাজ করছে। এতে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এই অসুস্থ মানসিকতা দূর করে সুষ্ঠু-সুন্দর সমাজ বির্নিমাণের কথা বলছেন সচেতন মহল।

সারাবাংলা/এসডব্লিউআর/পিটিএম

টাকা ছাড়া বাদাম বাদাম বিক্রেতা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দেশে ফিরলেন মির্জা ফখরুল
২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০১:৩০

সম্পর্কিত খবর