রংপুরে সারজিস-হাসনাত, জাপার বিক্ষোভ
২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:০৯ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৪৪
রংপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের আসার খবরে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর মহানগরীতে এই বিক্ষোভ মিছিল করেন জাতীয় পার্টিসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নেতৃত্বে মিছিলটি নগরির সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়। পায়রা চত্বর, প্রেস ক্লাব, বেতপট্টি, সুপার মার্কেট থেকে শুরু হয়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করতে রংপুরে যাবেন এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে গতরাত (২৫ অক্টোবর) থেকেই জাতীয় পার্টিসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষনিক একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরবর্তীতে শনিবারেও (২৬ অক্টোবর) বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় পার্টি।
সমাবেশে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ’সারজিস ও হাসনাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই, দ্বন্দ্বও নেই। দলের বিপক্ষে তাদের অবস্থানের কারণে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মুখপাত্র হিসেবে আমি এ ঘোষণা দিয়েছি। এখন আমাদের ঘোষণাকে উপেক্ষা করে তারা রংপুর আসবে। আমরা এখানে গভীর ষড়যন্ত্রের আলামত পাচ্ছি। তারা রংপুরে আসার ঘোষণা দিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা পুলিশের ছত্রছায়ায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ (২৬ অক্টোবর) পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) রংপুরে এসেছেন। সারা জেলার পুলিশ থাকবে আইজিপির কর্মসূচিতে। এ সময় জাতীয় পার্টির ব্যানারে কোনো নৈরাজ্যকারী যেন সুযোগ নিয়ে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য দলের চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাদের সজাগ থাকতে বলেছেন। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো সাংগঠনিক শক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে জাতীয় পার্টির।’
পুলিশের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘দেশে কারা পুলিশের নিরাপত্তা পাবে, পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে কারা চলাচল করবে তার একটা আইন আছে। সারজিস ও হাসনাত পুলিশি নিরাপত্তা পাওয়ার মতো যোগ্য কোনো ব্যক্তি না হলেও আইজিপির সঙ্গে রংপুরে তাদের আগমন উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করছি।’
এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক, রংপুর জেলা জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিমসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরে রংপুর সফরে আসেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন আইজিপি। হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম পুলিশপ্রধানের সঙ্গে সফরসঙ্গী হয়েছেন এই সফরে। এই সংবাদেই গতকাল রাতে এবং আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর মহানগরীতে এই বিক্ষোভ মিছিল করেন জাতীয় পার্টিসহ দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, সংস্কার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে যেন জাতীয় পার্টিকে ডাকা না হয় এমন দাবি জানান হাসনাত-সারজিস। এরপরই গত ১৪ অক্টোবর রংপুরে জাতীয় পার্টির এক সভা থেকে এই দুই সমন্বয়ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টি। পার্টির পক্ষ থেকে দলটির কো চেয়ারম্যান ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতৃৃবৃন্দ বিক্ষোভ মিছিল করে এবং পাল্টা কর্মসূচ ঘোষণা করে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে শনিবার রংপুর যাচ্ছেন তারা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও পুলিশপ্রধানের সঙ্গে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে এই দুই সমন্বয়কের। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ জানান, আজ শনিবার রংপুর এসেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সমন্বয়ক সারজিস আলম। তারা বিকেল ৪টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
বিক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। এই দলটি নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’
সারাবাংলা/এসডব্লিউআর