কর কমালে দাম কমবে ইন্টারনেটের
২৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:২২ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৩৫
ঢাকা: দেশে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমাতে হবে। ব্রডব্যান্ডের দাম কিছুটা সহনীয় থাকলেও মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে কর কমালেই গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো যাবে। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
রোববার (২৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিশিয়েশন আয়োজিত ‘ব্যান্ডউইথ ও ইন্টারনেটের বৈষম্যমূলক বাজার ব্যবস্থাপনা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিশিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ব্যান্ডউইথ বাজারে আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈষম্যের বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সদস্য রানা ইসলাম।
রানা ইসলাম বলেন, ব্যান্ডউইথ ও ইন্টারনেটে বৈষম্যমূলক ট্যারিফের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ছে। একইসঙ্গে দেশীয় ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃত থাকায় প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজার হারাচ্ছে দেশ। ট্যারিফের কারণেও ক্ষতি হচ্ছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। তাই ইন্টারনেট আরও সুলভ করতে এসব বৈষম্য নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসির পরিচালক রেজাউর রহমান বলেন, ব্যান্ডউইথ ও ইন্টারনেটে যে বৈষম্য রয়েছে,তা দূর করার চেষ্টা হচ্ছে। টেলকম সেবা জাতে জনগণের দোড়গোড়ায় পৌছায় সেই দাম নির্ধারণ করতে সরকার কাজ করবে। এক দেশ এক রেট ৫০০ টাকা নির্ধারণের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে যাতে কম দামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌছানো যায়, তা বোঝানো হয়েছে। তবে এখন সময় হয়েছে এই রেট পুর্নবিবেচনা করার। আমরা এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছি৷ আশা করছি এই ক্ষেত্রে আমরা ভালো জায়গায় পৌঁছাতে পারবো৷
বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, তথ্য প্রযুক্তির বাজার এখনও সংকীর্ণ। সাধারণ মানুষের জন্যে আমরা পর্যাপ্ত সেবা তৈরি করতে পারিনি। আমরা কন্টেন্ট তৈরি করতে পারিনি। মার্কেট লিমিটেড (নির্দিষ্ট) হওয়ার কারণ ইন্টারনেটের দাম। মানুষ পর্যাপ্ত ডাটা না পেলে মার্কেট বড় হবেনা। যেকোনো মূল্যে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমাতে হবে, নতুবা আমরা খুব বেশি এগুতে পারবোনা।
আইএসপিএবি’র সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, আমরা সব জায়গা থেকে একই রেটে ব্যান্ডউইথ কিনতে পারিনা। সিডিএন না থাকার কারণে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি যাতে আরও কমমূল্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবো। সেজন্য বিটিআরসিকে স্বাধীনতা দিতে হবে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাব্বির বলেন, রেভিনিউ শেয়ারিং সবার ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত। রেভিনিউ শেয়ারিং সবার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ করে দেওয়া উচিত। মূল্য নির্ধারণ সবার ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত।
সভাপতির বক্তব্যে অবিলম্বে ইন্টারনেট খাতের বৈষম্য দূর করতে বিটিআরসিকে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্গম এলাকায় মুষ্টিমেয় কিছু মানুষকে ইন্টারনেট দেওয়ার নামে এসওএফ ফান্ড থেকে টাকা দিয়ে টাওয়ার নির্মাণ করার চেয়ে গ্রামে-গঞ্জে সুলভ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানো এবং গ্রাহকদের সচেনতায় এই অর্থ ব্যয় করার দাবি জানাই।
আইআইজিবি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মক্তবুর রহমান বলেন, ‘বিটিআরসি’র নীতিমালা খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, ইন্টারনেট যে নেটওয়ার্ক ইকো সিস্টেম আছে সেখানে মোবাইল অপারেটর ও আইএসপি উভয়েই আইএসপি। এটি একটি দ্বৈত নীতিমালা। একইভাবে দুই সরকারি আইআইজি প্রতিষ্ঠান যেভাবে রেভিনিউ শেয়ার করে তার সঙ্গে বেসরকারিদের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫০০ টাকায় যে ইন্টারনেট দেওয়া হয়, এমনটা সারাবিশ্বে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কন্টেন্ট বা সিডিএন’র ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ বিক্রি করে মোবাইল অপারেটর, কিন্তু আইএসপি সিএনএন বিক্রি করতে পারে না। বিনা মূল্যে ভ্যালুঅ্যাডেড সেবা হিসাবে গ্রাহককে দিয়ে থাকে। এই দিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আর্থ কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল হোসেন, বাজার বিশ্লেষক কাজী আব্দুল হান্নান, প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের প্রমুখ।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমপি