কুবির মেডিকেল সেন্টারের আরেক নাম ‘প্যারাসিটামল সেন্টার’
২৯ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৪
অবব্যস্থাপনা ও জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মেডিকেল সেন্টার। এটি নামমাত্র। এখানে শিক্ষার্থীরা যে রোগ নিয়েই যাক, দেওয়া হয় শুধুই প্যারাসিটামল। বাকি ওষুধ কিনতে হয় বাইরের ফার্মেসি থেকে। শিক্ষার্থীদের কাছে মেডিকেল সেন্টারটি এখন ‘প্যারাসিটামল সেন্টার’ হিসেবে পরিচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ মেডিকেল সেন্টারে সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বসেন চিকিৎসকরা। বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও চিকিৎসকদের দেখা মেলে না। দুপুরের পরে কোনো শিক্ষার্থী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কেউ অসুস্থ হলে তাদের জন্য চিকিৎসা নেই। এতে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছয় হাজার ৯২৪ জন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র পাঁচ। একদিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসকের অভাব, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত ওষুধের দুষ্প্রাপ্যতা, নেই জরুরি চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাও— সব মিলিয়ে কুবির মেডিকেল সেন্টারটি চলছে শুধু নামেই। এখানে প্রেসক্রিপশন সেবা যাও পাওয়া যায়, সেটিও দিনে মাত্র চার ঘণ্টার জন্য।
প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার উত্তর পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার। এ চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঁচ জন চিকিৎসক, একজন সিনিয়র নার্স ও একজন সহকারী রেজিস্ট্রার দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৩ সালে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে শিক্ষার্থীদের সেবায় কিছু আধুনিক মেডিকেল সরঞ্জাম দেওয়া হয় এই সেন্টারে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি বেড, একটি এক্স-রে ভিউ বক্স, একটি ইসিজি মেশিন, একটি অপারেশন-সামগ্রী জীবাণুমুক্ত করার অটোক্লেভ মেশিন। অপারেটর ও পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এসব যন্ত্রপাতি আবার ব্যবহারও করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, প্রতিবছর মেডিকেল সেন্টারের জন্য ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ থাকে সরঞ্জামাদি কেনার জন্য। বাকি চার লাখ টাকা খরচ করা হয় ওষুধ কেনা বাবদ। মাসে ২৫ হাজার টাকা করে উত্তোলন করা হয় ওষুধ কিনতে। এ থেকে আবার ভ্যাট দিতে হয় তিন হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা। বাকি টাকায় কেনা হয় ১২ ধরনের ওষুধ। ধরন বা পরিমাণ কোনো দিন থেকেই এসব ওষুধ শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণের উপযোগী নয়। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যেসব রোগে ভোগেন, তার অধিকাংশ ওষুধই এখানে নেই।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, মেডিকেল সেন্টার শুধু নামমাত্র। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মেডিকেল সেন্টারকে প্যারাসিটামল সেন্টার নামেই জানেন। শিক্ষার্থীরা যে সমস্যা নিয়ে যান না কেন, তাদের শুধু প্যারাসিটামল সরবরাহ করা হয়। বাকি ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরের ফার্মেসি থেকে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে পাঁচজন চিকিৎসকের সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে বসার কথা এই মেডিকেল সেন্টারে। তবে সেই শিডিউলও চিকিৎসকরা মেনে চলেন না. দারা নিয়মিত মেডিকেল সেন্টারে বসেন না। এতে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ বাইরে থেকে কেনার ঝক্কি ও খরচ তো আছেই।
কুবি শিক্ষার্থী তানভীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক হল ও ক্যাম্পাসের আশপাশে বসবাস করে। বিভিন্ন সময় কেউ নিম্ন কিংবা উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, জ্বর-ঠান্ডা, কাশি, গ্যাস্ট্রিকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হলে মেডিকেল সেন্টারে যায়। সেখানে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সেবা না পেয়ে তাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সেবা নিতে হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আসলাম বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম চিকিৎসা সেবা দিতেও ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে মেডিকেল সেন্টারে গেলেও চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবার অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুবির ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান খান বলেন, ‘সরঞ্জাম ব্যবহার করতে অপারেটর লাগবে। চিকিৎসক সংকট রয়েছে। ওষুধের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট নেই। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে দুজন করে চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট ও অফিস সহায়ক নিয়োগের জন্য আমরা আবেদন করেছি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা এখানে চাকরি করার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে প্র্যাকটিস করেন। তাদের রিফর্ম করা যাবে না, বেশি চাপ দিলে তারা চাকরি ছেড়ে চলে যাবেন। এ ক্ষেত্রে আরও চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, ওষুধের পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
সারাবাংলা/এসআর
কুবি কুবি মেডিকেল সেন্টার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার