কুয়াশায় প্রকৃতি সাজিয়ে শিশির বলছে— শীত এসে গেছে
২৮ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০০
রংপুর: বিদায় নিয়েছে মৌসুমি বায়ু। সঙ্গে সঙ্গে হিমালয়ের কোল ঘেঁষা উত্তরের জনপদে শুরু হয়েছে শীতের আগমনী বার্তা। কুয়াশায় মোড়া সকাল আর হিম বাতাসে শীতল হয়ে উঠছে উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি। গাছের পাতায় জমাট বাঁধা শিশির ঝিলিক ও ধান ক্ষেতে সূর্যের লুকোচুরি প্রকৃতির শীতকে স্পষ্ট করে তুলছে।
রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় কুয়াশার তীব্রতা বাড়ছে প্রতিদিন। তাপমাত্রা দিন দিন কমছে, সেইসঙ্গে কমছে সূর্যের প্রখরতাও। ভোরবেলা শীতল বাতাস আর ঠান্ডা শিহরণ যেন শীতের আগমনীর পূর্বাভাস দিচ্ছে। প্রকৃতি বলছে শীত চলে এসেছে।
হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় দেশের শীতপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের জেলাগুলো। তাই এই জেলাগুলোতে একটু আগেভাগেই আসে শীত। মাঠে-প্রান্তরে, প্রকৃতিতে বাড়তে থাকে শীতের অনুভূতি। ষড়ঋতুর নিয়ম মেনে আসা এ শীত অনেকের কাছে আনন্দ-উদযাপনের। আবার অনেকের কাছে আনন্দের প্রতীক। নতুন ধানের ঘ্রাণে মুখরিত মাঠ, শীতের পিঠা আর নতুন কাপড়ের উৎসব— সবকিছুই শীতের আমেজকে বাড়িয়ে তোলে।
নবান্ন উৎসব এবং শীত নিয়ে রংপুরের চতরা ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হারুন অর রশীদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। এখন হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ভালোভাবে অনুভূত হয়। সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশা শুরু হয়। রাত ১০টার পর থেকে কুয়াশা বাড়তে থাকে। তারপর একটু ঠান্ডা পড়ে। ভোরের দিকে বেশ ঠান্ডা থাকে।’
তবে কিছু মানুষের কাছে শীত নিয়ে আসে শঙ্কা। গরিব মানুষের জীবনে শীত নেমে আসে নিদারুণ কষ্ট হয়ে। দরিদ্রদের কাছে শীত মানে কষ্টের নতুন অধ্যায়। কনকনে ঠান্ডা বাতাস আর উষ্ণ পোশাকের অভাবে শীত নেমে আসে তাদের জীবনে এক ভয়াবহ দুর্ভোগ হয়ে।
তাদেরই একজন নগরীর বাবুপাড়া রেলবস্তির বাসিন্দা সিমা বেগম। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’ জীবনে কনকনে ঠান্ডা বাতাস আর উষ্ণ পোশাকের অভাবে কেটে গেছে কত রাত। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘শীত আমাদের মতো গরিবের জীবনে আসে অভিশাপ হয়ে। সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাই না। ছেঁড়াফাটা কাথা-কম্বলই ভরসা।
’শহরতলির রিকশাচালক আকবর আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জারত কি হামারহেরে শান্তি আছে রে বাবা (শীতে কি আমাদের শান্তি আছে বাবা)। ট্যাকাওয়ালার মানুষহেরে জারত সুক (টাকা পয়সা আছে যাদের তারা শীত উদযাপন করবে)। হামার মতো গরিব মাইনষের কাছত জার যমের মতো (আমাদের মতো গরিবের কাছে শীত ভয়াবহ দুর্ভোগের নাম)।’
তিনি জানান, শীতে রিকশা নিয়ে বের হলে হাত-পা প্রচণ্ড ঠান্ডা হয়ে যায়। শীতকালে এত কুয়াশা হয় যে, সামনের জিনিসপত্রও দেখা যায় না। রাতের ঠান্ডা বাতাসে শরীর একদম কেঁপে ওঠে।
বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের জেলাগুলোতে বিগত কয়েক বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী গরিব মানুষ শীতের কষ্টে দিনাতিপাত করে আসছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় প্রচণ্ড শীতে। শহর ও গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থা শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও তা যে যথেষ্ট নয় বলে সিমা বেগম ও আকবর আলীর কথাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তাই আসন্ন শীতে গরিব, অসহায়, দুঃখী মানুষকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পাড়া-মহল্লায় নতুন বা পুরোনো কিছু শীতবস্ত্র বিতরণের অনুরোধ জানান ভুক্তভোগীরা। তবে এবার শীতের প্রভাব ধীরে ধীরেই বাড়তে থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন স্থানীয় আবহাওয়াবিদরা।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে রংপুর বিভাগে ১৮ ডিগ্রি থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা সেটা হয়তো আরও কিছুটা নেমে আসার সম্ভাবনা আছে।
সারাবাংলা/পিটিএম