Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাসিনার ঘনিষ্ঠরা পাচার করেছেন ২ লাখ কোটি টাকা: গভর্নর

সারাবাংলা ডেস্ক
২৮ অক্টোবর ২০২৪ ২০:২৮

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে যোগসাজশে দেশ থেকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা (প্রায় ১৭০০ কোটি মার্কিন ডলার) পাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এর মধ্যে এস আলম একাই প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা (প্রায় এক হাজার কোটি ডলার) পাচার করেছেন বলে অভিযোগ তার।

গভর্নর বলেন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দফতরের সাবেক কিছু কর্মকর্তা শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক দখল করতে সহায়তা করেছেন। এসব ব্যাংক দখল করে আনুমানিক দুই লাখ কোটি টাকা (এক হাজার ৬৭০ কোটি ডলার) বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন শেয়ারধারীদের ঋণ দেওয়া ও আমদানির অতিরিক্ত খরচ দেখানোর মতো পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাটের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, যেকোনো বৈশ্বিক মানদণ্ডে এটি সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে ব্যাপক ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা। এ ধরনের বিপুল পরিমাণে ব্যাংক ডাকাতি অন্য কোথাও হয়নি। রাষ্ট্রীয় মদতে ও গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতায় ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহীদের মাথায় বন্দুক না ঠেকালে এটা করা সম্ভব ছিল না।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক দখল করার পর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা অন্তত এক হাজার কোটি ডলার ‘বের করে নিয়েছেন’ ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে। তারা প্রতিদিনই নিজেদের জন্য ঋণ অনুমোদন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সাইফুল আলমের পক্ষে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন এমানুয়েল আরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গভর্নরের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। এস আলম গ্রুপ ও বাংলাদেশের আরও কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার সমন্বিত প্রচারণা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মূলনীতিরও ধার ধারছে না।হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সাড়া দেয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ডিজিএফআইয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, শেখ হাসিনা দুই দশক ধরে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু তার শাসনামলে ভোট কারচুপি, বিরোধীদের কারাগারে পাঠানো ও নির্যাতন করা এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আগস্টে তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন কিছু সদস্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হোটেলের মতো জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর অস্ত্রের মুখে তাদের শেয়ার এস আলমের কাছে বিক্রি করতে এবং তাদের পরিচালকের পদ ছাড়তে বলেন। একের পর এক ব্যাংকের ক্ষেত্রে তারা এটা করেছে।

একটি ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, জোর করে ব্যাংক দখলের প্রক্রিয়ায় তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ইসলামী ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৩ সালে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে জড়িত লোকেরা তার ওপর চাপ তৈরি করেছিলেন।

মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৭ সালে তিনি যখন ব্যাংকের পর্ষদ সভায় যাচ্ছিলেন, তখন তাকে একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুরো একটি দিন তাকে আটকে রেখে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

আহসান এইচ মনসুর সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ হাসিনার সময়ে দখল করা প্রায় ১২টি ব্যাংকের অবস্থা নিরীক্ষা করার পর বাংলাদেশ চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের পদক্ষেপ নেবে। এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেশে ও দেশের বাইরের আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে চান তারা।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এসব ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলোর শেয়ার ভালো মানের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে সেগুলোকে পুনঃঅর্থায়নের জন্য কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর খারাপ হয়ে পড়া সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন করারও পরিকল্পনা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, লোপাট হওয়া ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা দেশ থেকে যে অর্থ দুবাই, সিঙ্গাপুর বা অন্যান্য স্থানে পাচার করে নিজেদের আয়ত্তে রেখেছেন, তা উদ্ধারের চেষ্টায় আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে।

সারাবাংলা/টিআর

অর্থ পাচার আহসান এইচ মনসুর এস আলম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর