Monday 28 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ধস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৪৫

ফাইল ছবি: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)

ঢাকা: চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ধস নেমেছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার নেমে এসেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। তিন মাস কেটে গেলেও অনেক মন্ত্রণালয় এখনো কাজই শুরু করতে পারেনি। বাকিগুলো এডিপির কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও নেই। সংশ্লিষ্টদের মতে, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থছাড়ে ধীরগতি এবং প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার (২৮ অক্টোবর) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমইডি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাদ্দের হিসাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া বেশিরভাগই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অর্থ ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ২১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা মোট এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যদি এডিপিতে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর আগে, কোনো অর্থবছরে জুলাই-আগস্ট মাসে এত কম অর্থ ব্যয় হয়নি।

চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন হার এডিপির ইতিহাসের সর্বনিম্ন রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। আইএমইডির ওয়েবসাইটে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত জুলাই-সেপ্টেম্বরের তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে কোনো অর্থবছরই এডিপি বাস্তবায়ন হার সাড়ে ৬ শতাংশের কম ছিল না। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) বাস্তবায়ন হার ছিল ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ।

গত ১৩ অর্থবছরের তিন মাসের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের মতো এত কম এডিপি বাস্তবায়ন আগে কখনো হয়নি। ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। ওই অর্থবছর একই সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সেই হিসেবেও দুই শতাংশ কম বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি অর্থবছরে।

বিজ্ঞাপন

২০১৫-১৬ অর্থবছর ছাড়া অন্য কোনোবছর এডিপি বাস্তবায়ন হার ৭ শতাংশের নিচে নামেনি। সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়ন হার ছিল ২০১২-১৩ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল বরাদ্দের ১৩ শতাংশ। এছাড়া, বাকি অর্থবছরগুলোর বেশিরভাগ সময়েই ৮ শতাংশের ওপরে বাস্তবায়ন হয়েছে।

সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়ন হারের সঙ্গে মাসের হিসাবে চলতি অর্থবছরের মে মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। তথ্যানুযায়ী, শুধু সেপ্টেম্বর মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ৬ হাজার ৭২ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সময় বাস্তবায়নের হার ২ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে খরচ হয় ১০ হাজার ৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় বাস্তবায়ন হার কমেছে এক শতাংশেরও বেশি। আগের বছরগুলোতেও একইসময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল তিন শতাংশের বেশি।

এদিকে, অর্থবছরের তিন মাস কেটে গেলেও খরচের খাতা খুলতে পারেনি তিনটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই তিনটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এক টাকাও খরচ করতে পারেনি তারা।

তবে খরচের খাত খুললেও তিন মাসে এক শতাংশও এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারেনি ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে- পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়,সুরক্ষা সেবা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়। এগুলো তাদের মোট বরাদ্দের ১ শতাংশও খরচ করতে পারেনি।

চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তারা তিন মাসে বাস্তবায়ন করেছে বরাদ্দের ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ। এ ছাড়া বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, লেজিসলেটি ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

শতাংশের হিসাবে বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকলেও টাকা খরচে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটির ২৩১ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৪২ হাজার ৯৫৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ১৩৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থান বিদ্যুৎ বিভাগ খরচ করেছে ২ হাজার ৭৩৩ কোটি ৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

আইএমইডির কর্মকর্তাদের ভাষ্য, অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত প্রস্তুতিমূলক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মককর্তারা। এ কারণে অর্থবছরের শুরুতে এডিপি বাস্তবায়ন হার কম থাকে। এ ছাড়া অর্থবছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পরিবর্তনের ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়ে। পাশাপাশি বর্তমানে প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে অর্থছাড় করা হচ্ছে। যার প্রভাবে পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

এডিপি বাস্তবায়ন টপ নিউজ ধস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘চট্টগ্রামে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব’
২৮ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৪২

সম্পর্কিত খবর