‘দেশের ৪ খাত সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত’
৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৫১
ঢাকা: দেশের চার খাতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এগুলো হলো- ব্যাংক খাত, জ্বালানি খাত, ভৌত অবকাঠামো এবং আইসিটি খাত। এসব খাতের প্রকল্পগুলোতে অতিমূল্যায়ন, অনিয়ম, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তৈরি এবং বড় বড় চুরির ঘটনা ঘটেছে ।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে মত বিনিময় সভায় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের নাজিয়া-সালমা সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ড. সেলিম রায়হান, ড. নিলর্মী, ড. এনামুল হক, ম. তামিমসহ অন্যান্য সদস্যরা।
ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, স্বৈরাচারী রাজনীতি অনাচারী অর্থনীতির সৃষ্টি করেছে, নাকি অনাচারি অর্থনীতি স্বৈরাচারী রাজনীতির জন্ম দিয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। স্বৈরাচারী রাজনীতির অবসম্ভাবী পরিণতি হচ্ছে আজকের বিকলাঙ্গ অর্থনীতি। বড় বড় প্রকল্পের নামে শ্বেত হস্তিতে পরিণত হয়েছে। পার্কটেক পার্কসনহ বিভিন্ন প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা এবং ফলাফল কী হবে সেসব বিবেচনা করা হয়নি।
তিনি জানান, শ্বেতপত্র কমিটি যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সেগুলো হলো-বর্তমান আর্থিক খাতের দূরাবস্থা ও অনাচার মেরামতে কোথায় কোথায় সংস্কার জরুরি, মধ্য মেয়াদে নতুন কী ধরনের পরিকল্পনা দরকার, এলডিসি উত্তরণের প্রভাব, এলডিজি বাস্তবায়নের ঘাটতি, তথ্যেও রাজনীতিকীকরণ কীভাবে করা হয়েছে এবং স্বল্প মেয়াদে আগামী বাজেটে কী কী বিষয় গুরুত্ব দেওয়া দরকার। যেমন- কর ট্যারিফ, ব্যয়, দায়দেনা পরিশোধ ইত্যাদি বিষয়ে তুলে ধরা হবে। টাকা পাচারের বিষয়টি তুলে ধরা হবে।
দেবপ্রিয় বলেন, এদেশে গত ১৫ বছরে উর্দি পড়া এবং উর্দি ছাড়া সব ধরনের আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী মিলে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। ফলে নানা অপরাধ হয়েছে। এর দায় চেপেছে জনগণের কাঁধে। সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছিল উন্নয়নের বয়ান। ফলে স্বৈরাচারী রাজনীতির প্রয়োজন পড়েছিল। এখন সেটি ভাঙার জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগ কীভাবে কাজে লাগানো যাবে সেসব বিষয় তুলে ধরা হবে। ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, রাজনৈতিক সংস্কার, জবাবদিহি নির্ভর করছে চলমান অর্থনৈতিতে সরকারের কতটুকু প্রভাব আছে এবং জনগণের কতটুকু সস্তুষ্টি থাকবে তার ওপর। তবে আমরা দেখছি ইতিবাচক সংস্কার পদ্ধতির উদ্যোগ আছে।
ড. জাহিদ হোসেন হোসেন বলেন, পুরনো ভ্রান্তি থেকে নতুন ভুল যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তথ্যেও সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে পদ্ধতির ত্রুটির পাশাপাশি কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা এবং সরকারের হস্তক্ষেপও ছিল। তবে এক্ষেত্রে অতিসরলীকরণের সুযোগ নেই।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সরকারের রাজনৈতিক বৈধতার প্রশ্ন বিশেষভাবে তৈরি হয়। কেননা তখন ১৫৫টি আসন ছিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। তখন থেকেই মূল প্রকল্প নির্ভর দুর্নীতিটা বেড়ে যেতে থাকে। পাশাপাশি দুর্নীতির নানা রুপ আমরা দেখতে পাই। চামচামির পুঁজিবাদ তৈরি হয়। ব্যবসায়ী,সামরিক ও বেসামরিক আমলারা সমন্বিতভাবে উন্নয়নের বয়ান তৈরি করেছে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর প্রথম কথা হলো অস্বচ্ছতা। এগুলো ডিপিপি, টিপিপি এবং চুক্তির বিষয়গুলো কেউ দেখে না। ঋণ নির্ভর প্রকল্পগুলোতেও স্বচ্ছতা ছিল না। বিনিয়োগ করার আগে ভাবা হয়নি প্রকল্পগুলোর ফলাফল কী হবে।
ড. নিলর্মী বলেন, দিন শেষে শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে কী ঘটছে। আমরা আমাদের পরিবারের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভেবে থাকি। এসব খাতের অবস্থা সম্পর্কে এবং প্রবণতা সম্পর্কে শ্বেতপত্রে তুলে ধরা হবে।
ম. তামিম বলেন, শ্বেতপত্রে দুর্নীতি ও চুরির ঘটনা প্রক্রিয়া কোথায় এবং কেমন হয়েছে সেগুলো তুলে ধরা হবে। যারা দুর্নীতি করেও পুরস্কার হিসেবে ব্যাংক, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছেন সেগুলোর বিষয়ও ইঙ্গিত থাকবে। তবে এটুকু বলা যায় গত ১৫ বছরে প্রকল্পে যেসব দুর্নীতি হয়েছে সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে হয়নি।
সারাবাংলা/জেজে/ইআ