কারিগরি শিক্ষার আধুনিকায়নে কমিটি গঠনের আহ্বান ড. দেবপ্রিয়’র
২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৩
ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কারিগরি শিক্ষার আধুনিকায়নে একটি কমিটির গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, দেশকে আরেক ধাপে উন্নীত করতে একমাত্র শক্তিই হচ্ছে মানসম্মত কারিগরি শিক্ষা। এই কারিগরি শিক্ষা আগামী দিনের উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার। তাই একে আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে হবে।
শনিবার (২ নভেম্বার) সিপিডির জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কিআইবি) মিলনায়নে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন উপলক্ষ্যে ‘যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থাণীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেইসঙ্গে একাটি সামাজিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (ইএসডিও) সম্মেলন আয়োজনে সহায়তা দিয়েছে।
আলোচনায় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ মতিন চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রফিক উল্ল্যাহ। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, কারিগারি শিক্ষা বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদুর রহমান, বিকাশের ভাইস প্রেসিডেন্ট নভেরা আয়শা, পোশাক খাতের তরুণ উদ্যোক্তো আবরার হোসেন এবং ড. রুবিনা হাসান। এছাড়া, ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. শহিদুজ্জামান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি মার্গারেটও বক্তৃতা করেন। আর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিাসার্চ ফেলো ড. তোফিকুল ইসলাম খান।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতি করতে না পারলে সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আবার শিক্ষা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়নও যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারবে না। কারিগরি শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কেননা বর্তমানের শিক্ষা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সচিব রহুল আমিন বলেন, ‘কর্মসংস্থান আমাদের সবচেয়ে বড় ইস্যু। প্রত্যেকের আগ্রহ বাড়াতে হবে। অনেক ট্রেনিংয়ে শিক্ষার্থী নেই। সিরিয়াসনেস বাড়াতে হবে। কেননা বর্তমানে টেকনোলজি এত দ্রুত চেঞ্জ হচ্ছে, যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ফলে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কারিকুলামও পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে যারা প্রশিক্ষণ নেবেন তাদেরও আগ্রহ যেমন দরকার, যারা প্রশিক্ষণ দেবেন তাদেরও আগ্রহ থাকতে হবে।’
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো বিদ্যমান সেগুলো সমাধান না করে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা কোনো সমাধান নয়। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাত্র ১৮-২০ শতাংশ শিক্ষক দিয়ে কীভাবে চলে। যেখানে চলমান প্রাতিষ্ঠানগুলোতেই ৮০ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য সেখানে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে লাভ কী।’
সিপিডির গবেষণয়ায় দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রাংশ শতভাগ নেই। যেগুলো আছে সবক্ষেত্রে ব্যবহার দেখানো হয় না এবং অকেজো হলে নবায়ন হয় না। ল্যাবের সংখ্যা অপ্রতুল এবং কারিগরি শিক্ষায় যে ল্যাবগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা হয় না। কম্পিউটার ল্যাবে অধিকাংশ কম্পিউটার নষ্ট পড়ে থাকে। ভালো ওয়াশরুম নেই, পর্যাপ্ত খাবার পানি নেই। ন্যূনতম উপস্থিতি বিষয়ে বাধ্যকতা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে আসে না। আবার এদের অনেকে নিম্ন আয়ের ও পাশাপাশি চাকরি করে বলে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা কিছুই বলে না।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, পঞ্চগড় ও সুনামগঞ্জে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট না থাকায় স্থানীয় যুব-নারী-পুরুষ কারিগরি বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টেকনিক্যাল স্কুল কলেজগুলোর যে মেয়াদে শিক্ষা কার্যক্রম চলে সেখান থেকে সার্বিক জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ নেই। শিক্ষা কার্যক্রম ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় মানুষের, বিশেষ করে অভিভাবকদের অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত থাকায় এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত সম্ভব হচ্ছে না।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম