শাহাদাতের শপথ রোববার, দায়িত্ব নেবেন মঙ্গলবার
২ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৩১ | আপডেট: ২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:২৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন রোববার (৩ নভেম্বর) শপথ নেবেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বের) তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। নতুন অভিভাবককে বরণে নগর ভবনে চলছে জোর প্রস্তুতি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিতর্কিত নির্বাচনে চসিকের মেয়র পদে শাহাদাতকে পরাজিত দেখিয়ে দলটির মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন রেজাউল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ছক উল্টে যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মেয়র পদ থেকে রেজাউলকে অপসারণ করে। এরপর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল শাহাদাতকে চসিকের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে রোববার সকাল ১১টায় শাহাদাতের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। তাকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শপথ নেয়ার পর মঙ্গলবার মাননীয় মেয়র চট্টগ্রামে আসবেন এবং সেদিনই দায়িত্ব নেবেন। মেয়র মহোদয় কার্যালয়ে এসে দায়িত্ব গ্রহণের পর নিয়ম অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে একটি পরিচিতি বৈঠক হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তাদের দিয়ে ২১ সদস্যের একটি পরিষদ গঠন করা হয়েছে। সেটার বিষয়ে মাননীয় মেয়রকে অবহিত করা হবে।’
শপথ নেয়ার জন্য শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে শাহাদাত হোসেন ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে শাহাদাত হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারি মারুফুল হক চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ‘মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামে ফিরে শাহাদাত হোসেন প্রথমে নগরীর জেলরোডে আমানত শাহ’র মাজার জিয়ারত করবেন। এরপর তিনি টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনে যাবেন। সেখানে ধর্মীয় কিছু আনুষ্ঠানিকতা সেরে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।’
এদিকে নতুন মেয়রকে বরণে নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনসহ আশপাশের এলাকা অনেকটা নতুন সাজে সেজেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিনন্দনের ব্যানারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা।
শপথের আগেই নগর ভবনে মেয়রের কার্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাজানো হয়েছে। সামনের সড়কটিও সংস্কার করে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এছাড়া শাহাদাত হোসেনের ব্যক্তিগত বাসভবন সংলগ্ন নগরীর বাদশা মিয়া সড়কটিও চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সংস্কার করছে।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠা এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোটে বিজয়ী দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা হয়েছিল। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছিল ৫২ হাজার ৪৮৯।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে রেজাউল করিমসহ নয়জনকে বিবাদী করে মামলা করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৯ আগস্ট দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর মধ্যে গত ১ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। আদালতের রায়ের সাতদিন পর গত ৮ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
সারাবাংলা/আরডি/এইচআই