‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাজনীতির কাছে জিম্মি ছিল প্রশাসন’
৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৩
ঢাকা: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাজনীতির কাছে প্রশাসন জিম্মি থাকায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন সরকারের সচিব ও সিনিয়র সচিবরা। শ্বেতপত্র কমিটির কাছে তারা জানিয়েছেন, ওই সময় কেউ কেউ এ অবস্থার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কাজকরতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে পেশাদার সমিতিগুলোও জিম্মি ছিল রাজনৈতিকভাবে। এসব সমিতির নেতারাও অতিরাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার কারণে দলগত বা সমিতির পক্ষেও কিছু করতে পারেননি।
রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকারের সচিব ও সিনিয়র সচিবদের সঙ্গে শ্বেতপত্র কমিটির বৈঠক হয়েছে। তারা কমিটির কাছে বলেছেন, কিছু সুবিধাভোগী আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের ত্রিমুখী তৎপরতার কারণে টেকসই উন্নয়নের জন্য ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি।
রোববারের বৈঠকে শ্বেতপত্র কমিটির ১১ সদস্যের সবাই শারীরিকভাবে ও অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। সরকারের উচ্চপদস্থ ৮৫ কর্মকর্তা বৈঠকে অংশ নেন। এর মধ্যে ৩২ জনই সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদার।
ব্রিফিংয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত ১৫ বছর ধরে উন্নয়ন প্রকল্পে লুটপাট প্রক্রিয়া চলছিল। ওই সময় আমলারা তাদের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছেন। প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ঠিকমতো করা হতো না। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও।
শ্বেতপত্র কমিটির বৈঠকে অংশ নিয়ে সচিবরা বলেন, সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় অনেক প্রকল্পকেই টেকসই দেখানো হতো। পরে দেখা যেত, সেগুলো টেকসই হয়নি। অনেক সময় জমি অধিগ্রহণ করা হবে বলে আগেই জমি কিনে রেখে তিন গুণ দাম নেওয়া হয়েছে।
সচিবদের এসব কথা তুলে ধরে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বৈঠকে আমলারা জানিয়েছেন যে রাজনীতিকীকরণের মাধ্যমে পেশাগতভাবে আমলাতন্ত্রকে ভঙ্গুর করা হয়েছে। হাইটেক পার্ক, কর্ণফুলী টানেল, জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, কর আহরণ, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা, ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত করা ও আগামীতে তাদের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে সচিবরা আরও বলেন, পেশাগত উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা খুবই দরকার। উন্নয়নের জন্য প্রশাসনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে স্বাধীনতা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বলেন, সঠিকভাবে কাজ করতে আমলাদের ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়, সদিচ্ছা ও সক্ষমতার ঘাটতি আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. দেবপ্রিয় বলেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পুরোপুরি শেষ না করেও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আইএমইডির সক্ষমতার ঘাটতি থাকলেও তারা বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেসব প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোও কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আইএমইডির সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের ক্ষমতায়নও করতে হবে। সেই সঙ্গে আইএমইডিকে সুরক্ষাও দিতে হবে।
ব্রিফিংয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আইএমইডি অনেক সময় খুব ভালো কিছু প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। কিন্তু তার জন্য আবার তাদের রোষানলেও পড়তে হয়েছে। অনেক সময় সিনিয়র আমলারা জুনিয়র আমলাদের চাপ দিতেন। অনেক আমলার মধ্যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা যুক্ত হয়েছিল। এখন নানা সংস্কার হচ্ছে। ফলে মূল কাঠামো শক্তিশালী হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
কমিটির আরেক সদস্য ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশের রাজনীতি ঠিক না থাকলে আমলাতন্ত্র ঠিক হবে না। রাজনীতি ঠিক করা হলে তখন আমলাতন্ত্রও ঠিক হবে।
সারাবাংলা/জেজে/ইআ/টিআর