সংবিধান সংস্কার কমিশন অংশীজনদের মতামত নেবে: ড. আলী রীয়াজ

ঢাকা: সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ তৈরির জন্য বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত ও প্রস্তাব গ্রহণ করবে। পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের মতামত ও প্রস্তাব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে। আর তা মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) থেকে ওয়েবসাইটে কার্যকর হবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই ঠিকানা জানিয়ে দেওয়া হবে।

রোববার (৩ নভেম্বর) বিকেলে সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান ড. আলী রীয়াজ।

লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তাদের আত্মদান এবং গত ১৬ বছর ধরে কোটি কোটি মানুষের সংগ্রামের ফলে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটেছে। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার গত ৬ অক্টোবর সংবিধান সংস্কার কমিশন নিয়োগ দেন। এই কমিশনকে জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে দেশের বিরাজমান সংবিধান পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

কমিশন সেই বিবেচনায় সংস্কারের পরিধি এবং উদ্দেশ্য নিম্নোক্তভাবে নির্ধারণ করেছে। ‘সংস্কার’ এর অন্তর্ভুক্ত হবে বর্তমান সংবিধান পর্যালোচনাসহ জনআকাঙ্খার প্রতিফলনের লক্ষ্যে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, পুনর্বিন্যাস এবং পুনর্লিখন।

সাংবিধানিক সংস্কারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলী রীয়াজ বলেন,

ক. দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রতিশ্রুত উদ্দেশ্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এবং ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আলোকে বৈষম্যহীন জনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।

খ. ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জনআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানো।

গ. রাজনীতি এবং রাষ্ট্রপরিচালনায় সর্বস্তরে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা।

ঘ. ভবিষ্যতে যে কোনও ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার উত্থান রোধ।

ঙ. রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ- নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন।

চ. রাষ্ট্র ক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকেন্দ্রিকরণ ও পর্যাপ্ত ক্ষমতায়ন।

ছ. রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক এবং আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্বশাসন নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন সংস্কারের সুপারিশ তৈরির জন্য বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত ও প্রস্তাব গ্রহণ করবে। পাশাপাশি কমিশন সাধারণ নাগরিকদের মতামত ও প্রস্তাব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে। মঙ্গলবার থেকে এই ওয়েবসাইট কার্যকর হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ করব লিখিত মতামত এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর জন্য। সরকার বিভিন্ন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। ফলে কমিশনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবে না। কিন্তু তাদের দেওয়া প্রতিটি লিখিত প্রস্তাব ও মতামত কমিশন নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করবে এবং কমিশনের সুপারিশে তার যথাসাধ্য প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট থাকবে।

কমিশন এই পর্যায়ে সংবিধান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, সিভিল সোসাইটির সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, পেশাজীবী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি, তরুণ চিন্তাবিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং তাদের কাছে থেকে লিখিত প্রস্তাব আহ্বান করবে। এ ছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। আমরা আশা করছি যে, আগামী সপ্তাহ থেকেই অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে সক্ষম হবো।

যেসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা দল জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের সময় সক্রিয়ভাবে হত্যাকান্ডে যুক্ত থেকেছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে ও নিপীড়নকে সমর্থন করেছে, ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমকে বৈধতা প্রদানে সাহায্য করেছে কমিশন সেইসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার প্রস্তাবের সুপারিশ তৈরিতে যুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

এ সময় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রধান আলী রীয়াজ ছাড়াও কমিশনের সদস্য সুমাইয়া খায়ের, ইমরান সিদ্দিক, মোহাম্মদ ইকরামুল হক, শরীফ ভূঁইয়া, এম মঈন আলম ফিরোজী, ফিরোজ আহমেদ, মুসতাইন বিল্লাহ ‍এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমপি