যেভাবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলতে পারে ভারত
৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৫২ | আপডেট: ৩ নভেম্বর ২০২৪ ২০:১৩
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের চক্রের (২০২৩-২৫) পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানে বেশ দৃঢ় অবস্থানেই ছিল ভারত। কিন্তু কিউইদের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের পর শীর্ষস্থান খুইয়েছে ভারত। দুই যুগ পর ঘরের মাঠে ভারত হোয়াইটওয়াশের রেকর্ড গড়ায় জমে উঠেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের লড়াই। ভারতের সাথে আরো চারটা দল আছে লর্ডসের ফাইনালের দৌড়ে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার জন্য কার সামনে কী সমীকরণ, চলুন সেটাই দেখে নেওয়া যাক।
ভারত (ম্যাচ বাকি: ৫, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া)
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ভারতের ফাইনালে ওঠার সমীকরণ বেশ কঠিনই হয়ে পড়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে এক ম্যাচ হারলেই ঝুলে যাবে কোহলিদের ফাইনালের ভাগ্য। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিততে হবে ৫-০ অথবা ৪-০তে। এমনটা হলে ভারতের শতকরা পয়েন্ট দাঁড়াবে ৬৫%। সেক্ষেত্রে তাদের টপকে যাওয়ার সুযোগ থাকবে কেবল শ্রীলংকা অথবা দক্ষিণ আফ্রিকার।
কিন্তু এক ম্যাচ হারলেই বদলে যাবে হিসেব। অজিদের ৪-১ ব্যবধানে হারালে ভারতের শতকরা পয়েন্ট হবে ৬৪.১%। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা অথবা নিউজিল্যান্ডের সামনে সুযোগ থাকবে ভারতকে সরিয়ে শীর্ষ দুটি স্থানের একটি নেওয়ার। তবে সেটা তাদের বাকি ম্যাচগুলো জেতা সাপেক্ষে।
ভারতকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া যদি শ্রীলংকার বিপক্ষে তাদের আসন্ন সিরিজে ২-০ তে হারে, তবুও তারা শীর্ষস্থানেই থাকবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা (ম্যাচ বাকি :৪, প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা ও পাকিস্তান)
এই চক্রের অর্ধেকের বেশি সময় পয়েন্ট টেবিলের তলানির দিকে থাকলেও শেষদিকে এসে যেন জেগে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশকে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারিয়ে ভালোভাবেই আছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দৌড়ে। এই চক্রে প্রোটিয়াদের হাতে আছে আরো চার ম্যাচ। ঘরের মাঠে হতে যাওয়া এই চার টেস্টের সবগুলো জিতলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের ফাইনাল। দক্ষিণ আফ্রিকার শতকরা পয়েন্ট হবে তখন ৬৯.৪%।
চার ম্যাচের মধ্যে তিনটি জিতলেও ৬১% পয়েন্ট নিয়ে টিকে থাকতে পারবে প্রোটিয়ারা। তবে সেক্ষেত্রে বাকি দলগুলোর ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের।
নিউজিল্যান্ড (ম্যাচ বাকি: ৩, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড)
শ্রীলংকা সফরে ২-০ তে হেরে ফাইনালের স্বপ্ন অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। কিন্তু ভারতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে কিউইরা। তবে ইংল্যান্ডকে আসন্ন সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেও ফাইনালের লড়াই থেকে ছিটকে পড়তে পারে তারা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানের জয়ে টম ল্যাথামদের শতকরা পয়েন্ট হবে ৬৪.৩%, যেটা টপকে যাওয়ার সুযোগ থাকছে বাকি চার দলেরই। এক্ষেত্রে ইংলিশদের সিরিজে হারানোর পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের চাইতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলংকা সিরিজটা যেন ১-১ সমতায় শেষ হয়। এমনটা হলে দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা শ্রীলংকার কেউই নিউজিল্যান্ডকে সম্ভাব্য শতকরা পয়েন্টে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না।
কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ব্যবধানে সিরিজ না জিতলে শতকরা পয়েন্ট নেমে যাবে ৬০%-এর নিচে। তখন নিউজিল্যান্ডকে অপেক্ষায় থাকতে হবে অন্যান্য দলের ফলাফলের ওপর।
অস্ট্রেলিয়া (ম্যাচ বাকি: ৭, প্রতিপক্ষ ভারত ও শ্রীলংকা)
চলতি বছরের মার্চে সর্বশেষ টেস্ট খেলা অস্ট্রেলিয়া আছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। মূলত ভারতের ব্যর্থতাতে কোনো ম্যাচ না খেলেই উন্নতি অজিদের। বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের সামনে সমীকরণটা সহজ। বাকি থাকা সাত ম্যাচের পাঁচটিতে জিতলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল।
ভারতের বিপক্ষে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ৪-০ ব্যবধানে জিতে, শ্রীলংকার বিপক্ষে ২-০’তে হারলে অবশ্য প্যাট কামিন্সরা পিছিয়ে পড়বেন শতকরা পয়েন্টের হিসেবে। তখন মিলতে হবে আরো দুটি হিসেব; ইংল্যান্ডকে নিউজিল্যান্ডের হোয়াইটওয়াশ (৩-০) ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে শ্রীলংকার হোয়াইটওয়াশ (২-০)।
শ্রীলংকা (ম্যাচ বাকি: ৪, প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া)
ইংল্যান্ডে একটি ও ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি; টানা তিন জয়ে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে শ্রীলংকা। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ও ঘরের মাঠে অজিদের বিপক্ষে আছে দুটি করে ম্যাচ। এই চার ম্যাচের সবকয়টি জিতলে লংকানদের সম্ভাব্য শতকরা পয়েন্ট হবে ৬৯.২%। তখন অস্ট্রেলিয়াকে ৫-০ ব্যবধানে হারানো সাপেক্ষে লংকানদের টপকে যাওয়ার সুযোগ থাকবে কেবল ভারতের সামনে।
বাকি থাকা চার ম্যাচের তিনটিতে জিতলে ৬১% পয়েন্ট নিয়ে এই চক্রের মূল পর্ব শেষ করবে শ্রীলংকা, ফাইনালে যাওয়ার সুযোগও থাকবে, সেক্ষেত্রে অন্য দলগুলো যেন পয়েন্ট হারায় সেই আশাটাও করতে হবে শ্রীলংকাকে।
সারাবাংলা/জেটি/এফএম