Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যেভাবে কাজ করে ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ পদ্ধতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৪৫

শিল্পীর চিত্রে ইলেকটোরাল কলেজে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৃশ্য

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে নয়, বরং ইলেক্টোরাল কলেজ নামে পরিচিত একটি পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। ১৮০০ শতাব্দীর শেষ দিকে অ্যালেকজান্ডার হ্যামিল্টন ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি চালু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়া অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো সরাসরি জনগণের ভোটের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে না। এর পরিবর্তে, ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে একটি নির্বাচকমণ্ডলী বা ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নির্বাচিত করেন। ইলেকটোরাল কলেজের এই সদস্যরাই শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন।

বিজ্ঞাপন

ইলেকটোরাল কলেজে মোট ৫৩৮টি ভোট রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হতে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ভোট পেতে হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যা ও প্রতিনিধি সংখ্যা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট বরাদ্দ থাকে।

‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে?

ইলেক্টোরাল কলেজের মূল কাঠামোতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট থাকে, যা সেই অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।

নির্বাচনের দিন জনগণ প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ভোট প্রদান করেন, তবে এটি সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নয় বরং অঙ্গরাজ্যের প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ ভোট পাওয়া প্রার্থী ঐ রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট পান। অর্থাৎ, অঙ্গরাজ্যে জয়ী প্রার্থী রাজ্যের পুরো ইলেক্টোরাল ভোট যখন পেয়ে যান তখন এই প্রক্রিয়াটিকে ‘উইনার-টেকস-অল’ বলে।

জনসংখ্যার ভিত্তিক ইলেক্টোরাল ভোটের বণ্টন

প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইলেক্টোরাল ভোট বণ্টন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো বৃহৎ জনসংখ্যার রাজ্যে ৫৪টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে, যেখানে আলাস্কা বা ওয়াইওমিংয়ের মতো ক্ষুদ্র জনসংখ্যার রাজ্যগুলোতে রয়েছে মাত্র ৩টি ইলেক্টোরাল ভোট। এর ফলে জনসংখ্যা বেশি থাকা রাজ্যগুলোতে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রচারণা চালান।

জনগণের সরাসরি ভোটে জয়ী হয়েও কেন প্রার্থী হেরে যান?

ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির এই কাঠামোই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমন অবস্থার জন্ম দেয় যেখানে একজন প্রার্থী দেশের জনগণের অধিক ভোট পেয়ে থাকলেও, ইলেক্টোরাল ভোটে হেরে যেতে পারেন। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প জনসমর্থনে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেছিলেন, কারণ ইলেক্টোরাল ভোটে তিনি জয়লাভ করেন।

বিজ্ঞাপন

কেন ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল?

১৭৮৭ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রচিত হয়, তখন জাতীয় পর্যায়ে জনগণের সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছিল। সংবিধান রচয়িতাদের মতে, সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় রাজ্যগুলোতে প্রভাবশালী প্রার্থীরা সুবিধা পেতেন, আর ছোট রাজ্যগুলো যথেষ্ট গুরুত্ব পেত না। তাই ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি পদ্ধতি তৈরি করা হয়, যা ছোট রাজ্যগুলোকেও নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ দেয়।

সুইং স্টেট এবং নির্বাচনের নির্ণায়ক

ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থায় কিছু রাজ্য সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত, যেখানে কোন দলের প্রতি জনগণের সমর্থন স্থির নয়। এই রাজ্যগুলোতেই নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায় এবং প্রার্থীরা প্রচারণার জন্য এই রাজ্যগুলোতে প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় করেন। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, পেনসিলভেনিয়া ও মিশিগানের মতো রাজ্যগুলো সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত এবং এখানকার ফলাফলই মূলত নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারণে মূল ভূমিকা রাখে।

ইলেক্টোরাল কলেজের ভালো-মন্দ

ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। ছোট রাজ্যগুলোতে গুরুত্ব পাওয়ার ফলে প্রার্থীরা গোটা দেশ ঘুরে প্রচারণা চালানোর সুযোগ পান এবং জাতীয়ভাবে নির্বাচনের প্রচারণা সহজতর হয়। তবে এতে জনগণের সরাসরি ভোটের গুরুত্ব কিছুটা হ্রাস পায় এবং শুধু সুইং স্টেটগুলোতেই নির্বাচনী প্রতিযোগিতা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, যার ফলে অন্যান্য রাজ্যের ভোটাররা মনে করেন তাদের ব্যক্তিগত ভোটের গুরুত্ব কম।

‘ফেইথলেস’ নির্বাচক এবং তাদের প্রভাব

ইলেক্টোরাল কলেজে নির্বাচকদের সাধারণত সেই প্রার্থীকেই ভোট দিতে হয় যিনি জনগণের সরাসরি ভোটে জয়ী হয়েছেন, তবে কিছু অঙ্গরাজ্যে নির্বাচকদের নিজের পছন্দমতো ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। এই ধরনের নির্বাচককে ‘ফেইথলেস’ বা অবিশ্বাসী নির্বাচক বলা হয়। যদিও এ ধরনের ঘটনা খুব বিরল, তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে সাতটি ইলেক্টোরাল ভোটে এমন ঘটনা ঘটেছিল। অনেক রাজ্যে ফেইথলেস নির্বাচকদের জন্য জরিমানা বা আইনি ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে।

ইলেক্টোরাল ভোটে টাই বা সমতা হলে করণীয়

ইলেক্টোরাল কলেজে ভোটের মাধ্যমে কোনও প্রার্থী যদি নির্দিষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, তবে মার্কিন কংগ্রেসের হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভস ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। ইতিহাসে মাত্র একবার, ১৮২৪ সালে, ইলেক্টোরাল ভোটে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় হাউজ এই দায়িত্ব পালন করেছিল।

অতীত নির্বাচনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ

২০১৬: রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হন, যদিও তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ কম ভোট পেয়েছিলেন।

২০০০: রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ ২৭১টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হন, যদিও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর প্রায় পাঁচ লক্ষের বেশি ভোট পেয়েছিলেন।

১৮৭৬: রাদারফোর্ড বি. হেইজ ১৮৫টি ইলেকটোরাল ভোটে প্রেসিডেন্ট হন, কিন্তু ডেমোক্র্যাট প্রার্থী স্যামুয়েল জে টিলডেন দুই লক্ষাধিক বেশি জনসমর্থন পেয়েছিলেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক থাকলেও এই পদ্ধতিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে নির্দিষ্ট কাঠামোতে পরিচালিত করে। এটি জনমতের প্রাধান্য যেমন ধরে রাখে, তেমনি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গুরুত্বকেও সমানভাবে প্রতিফলিত করে।

সারাবাংলা/এনজে

ইলেক্টোরাল কলেজ নির্বাচন পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর