নির্বাচনের আগের রাতে আমেরিকায় হতাশা বনাম আশার বার্তা
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৪৭ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:২৩
২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শেষের দিকে পৌঁছেছে, আর আমেরিকার ভোটারদের সামনে দাঁড়িয়েছে এক ভাগ্যনির্ধারণী রাত। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন দুই বিপরীত চিত্র।
এই নির্বাচনে ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন, যেখানে উভয় পক্ষই আশঙ্কা করছে, তাদের প্রার্থী হেরে গেলে দেশের ভবিষ্যৎ বদলে যেতে পারে। নির্বাচনটি যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি গোটা বিশ্বের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রূপ নিয়েছে।
ট্রাম্প তার প্রচারণার শেষ দিনগুলিতে প্রচারণার উদ্দেশ্যে রাজ্যগুলোতে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। সোমবার (৪ নভেম্বর) তিনি নর্থ ক্যারোলিনা এবং পেনসিলভেনিয়া সফরে গিয়েছেন এবং রাতের শেষ সভাটি মিশিগানে করবেন। অন্যদিকে, কমলাও সোমবার (৪নভেম্বর) পেনসিলভেনিয়ায় প্রচারণা করে ফিলাডেলফিয়ায় লেডি গাগা ও অপরাহ উইনফ্রের সাথে একটি সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।
আরও পড়ুন- কমলা বনাম ট্রাম্প— পররাষ্ট্রনীতি বদলাবে বাংলাদেশের জন্য?
ট্রাম্পিজমের অবসান নাকি চরম এক নতুন যুগের সূচনা?
বর্তমান সময়ের অন্যতম বিতর্কিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাবময় উপস্থিতির কারণে এই নির্বাচন এক নতুন মাত্রা নিয়েছে। তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে অবাধ শক্তিমান শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রাম্পের প্রচারণা আধুনিক সময়ের সবচেয়ে কর্তৃত্ববাদী মঞ্চ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারে অভিবাসী বিতাড়নের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা প্রয়োগ করতে গেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সম্ভবত সামরিক বাহিনীরও সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হতে পারে, যা নাগরিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তিনি তার রাজনৈতিক বিরোধীদের গোপন শত্রু আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছেন, যা ইতিহাসের নিন্দিত শাসকদের ভাষার সাথে মিলে যায়।
প্রাক্তন এই প্রেসিডেন্ট কাজ করতে চাচ্ছেন একটি নতুন অর্থনৈতিক রূপান্তরের মাধ্যমে, যেখানে তিনি বলছেন কর্মসংস্থান আমেরিকানদের জন্য হবে। যদিও তার শুল্কপ্রবণতা অর্থনীতিকে পেছনে ঠেলে দিতে পারে। তিনি তার প্রশাসনকালে বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন করে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করার পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছেন, যার মাধ্যমে তার অপরাধমূলক মামলাগুলোকে অপসারণের লক্ষ্য রয়েছে।
ট্রাম্প তার প্রায় এক দশকের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। তিনি রিপাবলিকান পার্টির ভেতরে ভিন্নমতকে দমন করেছেন এবং তার সমর্থকদের সাথে গভীর বন্ধন তৈরি করেছেন, যারা মনে করেন তিনি তাদের কথা বলেন।
অন্যদিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবার ট্রাম্প যুগের সমাপ্তির সুযোগ পেয়েছেন এবং রিপাবলিকান পার্টিকে পরপর দ্বিতীয়বার পরাজয়ের মুখোমুখি করতে পারেন, যারা সংবিধান ও আইনের শাসনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের মিথ্যা এবং হুমকির পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
কমলা মার্কিন ভোটারদের আইনের শাসন রক্ষা এবং মানুষের জীবনমান উন্নত করতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তার প্রস্তাবগুলো ট্রাম্পের মতো ব্যাপক নয়। তিনি সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যসেবার মূল্য কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইতিহাসের ইঙ্গিত
যদি নির্বাচিনে ট্রাম্প বিজয়ী হন, তবে তিনি হবেন কেবল দ্বিতীয় পরাজিত প্রেসিডেন্ট যিনি দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। ২০২০ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেষ্টার পর, তিনি অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়েছেন এবং এই বছর তার জীবনের দুটি হত্যাচেষ্টার হাত থেকে বাঁচতে সক্ষম হয়েছেন।
অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস ২৫০ বছরের পুরুষ রাষ্ট্রপতিদের ইতিহাস ভেঙে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। তিনি জুলাই মাসে জো বাইডেনের নির্বাচন প্রচারণার ধাক্কা সামাল দিতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে পুনঃসংগঠিত করেছিলেন।
জাতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সুইং রাজ্যে জরিপগুলোতে কোনো নির্দিষ্ট নেতা নেই, যা দেশের অভ্যন্তরীণ বিভক্তির চিত্র তুলে ধরছে। তবে সম্ভবনা রয়েছে যে একজন প্রার্থী পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান, উইসকনসিন, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, নেভাদা এবং অ্যারিজোনায় দেরিতে সুবিধা পেতে সক্ষম হয়েছে এবং বড় ব্যবধানে বিজয়ী হতে পারে।
ডেমোক্র্যাটরা নারী ভোটারদের মধ্যে শক্তিশালী প্রাথমিক ভোট প্রদান দেখে উৎসাহিত হয়েছে, যেখানে গর্ভপাতের অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমলা ঐতিহ্যবাহী ডেমোক্র্যাটিক জোটের ফাটল মেরামত করার চেষ্টা করছেন, যা বিশেষত কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ এবং লাতিনো ভোটারদের আকৃষ্ট করেছে।
ট্রাম্প খাদ্য ও আবাসনের উচ্চ মূল্য নিয়ে ক্লান্ত ভোটারদের উপর নির্ভর করছেন এবং দক্ষিণ সীমান্তে সংকট তুলে ধরতে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। বাইডেন প্রশাসন প্রতিটি সমস্যার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে এবং কার্যকর সমাধান দিতে অসফল হয়েছে।
সারাবাংলা/এনজে