চট্টগ্রাম ফিরে নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত শাহাদাত
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে সদ্য শপথ নেওয়ার পর চট্টগ্রাম ফিরে হাজার নেতাকর্মীর উষ্ণ সংবর্ধনা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ডা. শাহাদাত হোসেন।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছান তিনি। এ সময় হাজার হাজার মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছা ও স্লোগানে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন এ নগরপিতাকে।
এদিন সকাল ১১টা থেকে নগরীর পুরাতন স্টেশন চত্বরে লোক সমাগম হতে থাকে এবং দুপুর ১২টার পর তা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দলে দলে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হন।
১২টা ৫০ মিনিটে চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন সমাবেশস্থলে গিয়ে পৌঁছান। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের ‘বীর চট্টলার মাটি, শাহাদাত ভাইয়ের ঘাঁটি, শাহাদাতের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, নগর পিতা হিসেবে নয় আমি ৭০ লাখ মানুষের নগরসেবক হিসেবে থাকতে চাই। সকল বর্ণ, ধর্ম, জাতির নাগরিক যারা এ চট্টগ্রাম শহরে বাস করছে তাদের পাশে থেকে আমি কাজ করে যেতে চাই। আমি আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আমি আপনাদের ঋণ কখনও শোধ করতে পারব না।
তিনি বলেন, আমি মহানগরে গত ১৮ বছর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। গত ১৮ বছর আপনারা বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেননি। পরিবারের খোঁজ নিতে পারেন নি। অনাহারে দিন কাটিয়েছেন। এ অসহায়ত্ব আমি দেখেছি। সারা বাংলাদেশে ৬০০ এর অধিক বিএনপি নেতাকর্মী গুম হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এক লাখ মামলায় ৬০ লাখ মানুষ আসামি হয়েছে। তবুও আপনারা বিএনপির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।
চসিক মেয়র বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইসিটি মামলা দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হনন করা হয়েছিল। তবুও গণমাধ্যম বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলার খবর ছাপিয়েছে। গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই।
শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি আপনাদের সন্তান। এ শহর আমার একার নয়। এ শহর ৭০ লাখ মানুষের। চট্টগ্রামকে সুন্দর শহর গড়ে তুলতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি গড়ে তুলব এ শহরকে। আমাকে একটু সময় দিন। আমার দেওয়া কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।
এদিকে চসিক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে মেয়র শাহাদাত হোসেন নগরীর জেল রোডে অবস্থিত হযরত আমানত শাহ এবং হযরত বদর শাহ’র মাজারে গিয়ে জেয়ারত করবেন। সেখান থেকে তিনি নগরীর লালদিঘীর পাড়ের চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের গিয়ে সম্মেলন কক্ষে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
মতবিনিময় শেষে বিকেল ৫টায় মেয়র একইস্থানে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এরপর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠা এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে তিন লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোটে বিজয়ী দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা হয়েছিল। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছিল ৫২ হাজার ৪৮৯।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে রেজাউল করিমসহ নয়জনকে বিবাদী করে মামলা করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকার ১৯ আগস্ট তাকে অপসারণ করে। এর মধ্যে গত ১ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন আদালত।
২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইন অনুযায়ী, প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ। সে হিসেবে ২০২৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি অক্টোবরে শপথ নিলে শাহাদাত হোসেনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ হবে ১৬ মাস। যদি পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে তিন মাস আগে তাকে পদ ছাড়তে হবে। সেক্ষেত্রে মেয়াদ হবে ১৩ মাস।
সারাবাংলা/আইসি/ইআ