Tuesday 05 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গুম হওয়া ৪ ছাত্রশিবির নেতার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:২০

ঢাকা: গুম হওয়া ৪ ছাত্রশিবির নেতাকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় হাটুতে গুলিকরে পঙ্গু করে দেওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে এসে ভুক্তভোগী ছাত্রশিবির নেতারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও সহকারী আইন সম্পাদক আমানুল্লাহ আদিব।

বিজ্ঞাপন

গুম হওয়া ইসলামী ছাত্রশিবিরের চার নেতা হলেন— মো. আবুজর গিফারী, ওমর আলী, মো. রুহুল আমিন ও ইস্রাফিল হোসেন।

তাদের মধ্যে মো. আবুজর গিফারী ২০১৫ সালে গুম হওয়ার সময় জয়পুরহাট জেলার ছাত্রশিবিরের সভাপতি এবং ওমর আলী একই জেলার ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

অপরদিকে মো. রুহুল আমিন ছাত্রশিবিরের যশোর জেলা পশ্চিম চৌগাছা উপজেলা সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন এবং ইস্রাফিল হোসেন একই থানার সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে ছাত্রশিবিরের আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসন আমলে ছাত্রশিবিরের ওপর সর্বোচ্চ বর্বরতা চালানো হয়। অভিযোগ দায়েরকারী চার শিবির নেতা এই বর্বরতার শিকার। পুলিশের বর্বর নির্যাতনের কারণে তাদের পা কেটে ফেলে কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে। ওই সময় রাত ৩টার দিকে আবুজর গিফারী ও ওমর আলীর পায়ে গুলি করে তাদের পা ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। একইভাবে রুহুল আমিন ও ইস্রাফিল হোসেনকে গভীর রাতে নির্জন স্থানে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ পড়ানো হয় এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় তাদের দুজনের দু’পায়ে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের দায়িত্ব পালন করার কারণে এই সহিংসতার শিকার হতে হয়েছে। এ রকম অসংখ্য নজির রয়েছে। আমরা সেগুলো ক্রমন্বয়ে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘জয়পুরহাটের ১২ জন এবং চৌগাছা থানার ৯ জন র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।’

ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগে যা বলা হয়েছে

ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, আবুজর গিফারী জয়পুরহাট জেলার তৎকালীন জেলা সভাপতি এবং ওমর আলী ছিলেন তৎকালীন জেলা সেক্রেটারী। ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর জেলা শাখার বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য জয়পুরহাট থেকে হানিফ বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আব্দুল্লাহপুর আসলে ৯ ডিসেম্বর সকাল ৬টার দিকে সাদা পোশাকে র‍্যাব পরিচয়ে দুজনকেই মাইক্রোবাসে উঠিয়ে উত্তরা র‍্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। ১৫ ডিসেম্বর সকাল ১১ টার দিকে তাদেরকে মাইক্রোবাসে করে হাত এবং চোখ বেঁধে রাজশাহী র‍্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১৫ ডিসেম্বর রাত এবং ১৬ ডিসেম্বর সারাদিন আবারো চালানো হয় অবর্ণনীয় নির্যাতন। ১৬ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে রাজশাহী থেকে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় পাঁচবিবি থানায় শিমলতলী এলাকায়। সেখান তাদের সঙ্গে বোমা ও অস্ত্র দিয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাদেরকে রাত ৪টার দিকে জয়পুরহাট র‍্যাব ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় আবারও শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্মম নির্যাতন। এরপর সকাল ১০টার দিকে অস্ত্র বোমাসহ সংবাদ সম্মেলন করেন জয়পুরহাট র‍্যাবের তৎকালীন মিডিয়া উয়িং। দুপুরে পাঁচবিবি থানার নিকট তাদের অস্ত্র মামলা দিয়ে হস্তান্তর করা হয়।

অতঃপর সেখানে রাত ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশ নির্যাতন চালায়। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তাদেরকে হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় আওলায় ইউনিয়নের একটি পরিত্যাক্ত জায়গায়। পুলিশ দুজনের হাটুতে গুলি করে পা ঝাঁঝরা করে দেয়। তাদেরকে স্থানীয় হসপিটালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে রেফার করে দেয়, সেখানেও তাদের চিকিৎসা না দিয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করে দেয়। সেখানে অপারেশন করে হ্রদরোগ ইন্সটিটিউটে রেফার করা হয়। দুইজনেরই প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায়, মাংস ৭৫ শতাংশ পঁচে যায়। পরে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ তে দুজনের অনুমতি সাপেক্ষে দুটি পা কেটে ফেলা হয়। হাসপাতাল থেকে রিলিজ হলে ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়পুরহাট কারাগারে পাঠানো হয়।

মো. রুহুল আমিন এবং ইস্রাফিল হোসেনের গুমের ঘটনা

মো.রুহুল আমিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের যশোর জেলা পশ্চিম চৌগাছা উপজেলা সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ইস্রাফিল হোসেন একই থানা সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০১৬ সালের ৩ আগষ্ট সাংগঠনিক কাজ শেষ করে রুহুল আমিন বাড়ি যাওয়ার পথে বন্দুলীতলা শফি মল্লিকের ইটভাটার মোড় থেকে চৌগাছা থানার ১ জন এস আই এবং ২ জন এ এস আই তাদের গ্রেফতার করে চৌগাছা থানায় নিয়ে যায়। ৪ আগস্ট তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে আবার চৌগাছা থানায় নিয়ে আসার পথে কয়ারপাড়া এলাকায় আসলে দুজনেরই দুই হাত পেছন মুড়ো করে হ্যান্ডকাপ পড়ানো হয় এবং চোখ বেঁধে ফেলা হয়। গভীর রাতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বন্দুলিতলার নির্জন মাঠে। সেখানে নিয়ে দুজনের হাটুতে পুলিশ গুলিকরে পা ঝাঁঝরা করে দেয়। সেখান থেকে তাদেরকে উপজেলা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই তাদের রেফার করা হয় যশোর সদর হসপিটালে। সেখানে দুই দিন চিকিৎসার পর কোনো উন্নতি না হওয়ায় তাদেরকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভর্তি হওয়ার সাতদিন পর পায়ে পঁচন ধরলে ডাক্তার পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দেয় এবং পা কেটে ফেলা হয়। ইত্যেমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করে যে বন্ধুক যুদ্ধে ২ শিবির নেতা আহত। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা রুজু করে ২ মাস চিকিৎসার পর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এইচআই

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ছাত্রশিবির

বিজ্ঞাপন

তরুণ-তরুণীদের প্রতিভার লড়াই
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:২১

একই দলে খেলবেন কোহলি-বাবর!
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৭

কমলাকে জেতাতে ভারতে বিশেষ পূজা
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৬

আরো

সম্পর্কিত খবর