ভারতের বন্যা-আগ্রাসন প্রতিরোধ ও পানির ন্যায্য হিস্যা চেয়ে রিট
৫ নভেম্বর ২০২৪ ২০:১৯ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২৪ ২২:১৫
ঢাকা: ভারতের বন্যা-আগ্রাসন প্রতিরোধ ও আন্তঃদেশীয় নদীগুলোতে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের দাবিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (৫ নভেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এই রিট দায়ের করেন। রিটে পানি সম্পদ সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সচিব ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।
আবেদনটি খুব শিগগিরই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে শুনানি হবে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী। রিট পিটিশনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি আন্তঃদেশীয় নদী রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি নদী ভারতের উজান থেকে বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলে প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ভারত তার উজানের অবস্থিত নদীগুলোতে অবৈধভাবে বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণ করে নদীর পানি আটকে রাখছে এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে ভারতের ভেতরেই প্রবাহিত করছে। ফলে ওই নদীগুলোর বাংলাদেশের ভাটি অংশগুলো পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে এবং নাব্যতা/গভীরতা হারাচ্ছে।
এদিকে, ভারতীয় অংশের উজানের নদীগুলোতে যখন পানি অভারলোডেড হয়ে যায়, তখন ভারত সরকার সেই নদীগুলোর ওপর বাঁধ ও ব্যারেজগুলোর গেট খুলে দেয়। যার দরুণ বাংলাদেশের অংশের শুষ্ক নদীগুলোতে ব্যাপক পানি প্রবেশ করে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ প্রতিবছরই ভারত কর্তৃক এই কৃত্রিম বন্যার শিকার হয় এবং প্রতিবছর বাংলাদেশের বিস্তৃত অঞ্চল প্লাবিত হয় এবং বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের ঘরবাড়ি, ক্ষেতখামার, গবাদিপশু, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ধ্বংস হয়। ভারতের এই বন্যা আগ্রাসনে প্রতিবছর বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
রিটে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আন্তঃদেশীয় কোন নদীতে উজানের কোনো দেশ কোনো বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণ করতে পারে না। ভারত সরকার সব আন্তর্জাতিক আইনকানুনের তেয়াক্কা না করে উজানের নদীগুলোর উপর বাঁধ, ব্যারেজ নির্মাণ করছে এবং বাংলাদেশকে ক্রমাগত মরুভূমি বানানোর পরিকল্পনা করছে।
রিটে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার সবসময় ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে পানি সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার বাংলাদেশের ন্যায্য পানির হিস্যা দিতে আগ্রহী নয়। এমনকি তিস্তা পানি চুক্তি সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ বহু বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে নাটকীয় সংঘাতের (Dramatic Conflict) কারণে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করা যাচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে ভারত সরকার বাংলাদেশকে ন্যায্য পানির হিস্যা দিতে ইচ্ছুক নয়। ভারত সরকার উজানের নদীগুলোর ওপর ক্রমাগত বাঁধ, ব্যারেজ নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মরুভূমি বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রিট পিটিশনে আরও বলা হয়েছে যে, আন্তঃদেশীয় নদীগুলোর ক্ষেত্রে ভাটি অঞ্চলের দেশগুলোর ন্যায্য পানির হিস্যা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন আছে। ওই আইনের নাম ‘০২কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য নন-নেভিগেশনাল ইউজেস অফ ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার কোর্স, ১৯৯৭’, যা সংক্ষেপে জাতিসংঘের পানি প্রবাহ কনভেনশন নামে পরিচিত। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপের কারণে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সরকারগুলো এই আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশনে সই করতে পারেনি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে অবশ্যই জাতিসংঘের পানি প্রবাহের কনভেনশনে সই করতে হবে। ওই কনভেনশনে সই করে বাংলাদেশকে অবশ্যই ভারত কর্তৃক উজানের নদীগুলোতে অবৈধভাবে বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস (আইসিজে) বা আর্বিট্রেশন কাউন্সিলে মামলা দায়ের করতে হবে।
এ ছাড়া ভারত কর্তৃক উজানের নদীগুলোতে অবৈধভাবে বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণের কারণে বাংলাদেশে বর্তমান ও বিগত বছরগুলোতে যেসব ভয়াবহ বন্যা সংঘঠিত হয়েছে, এর জন্য ভারতের কাছে ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে।
এর আগে, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিবাদীরা যথাযথ ব্যাবস্থা না নেওয়ায় ওই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম
টপ নিউজ পানির ন্যায্য হিস্যা প্রতিরোধ বন্যা-আগ্রাসন ভারত রিট