সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত: প্রশাসনিক বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবি
৬ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৫৯ | আপডেট: ৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:১৩
কক্সবাজার: প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল প্রতি বছর নভেম্বর থেকে পুরোদমে শুরু হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। সম্প্রতি সরকারের গৃহিত উদ্যোগ ও প্রশাসনিক বিধিনিষেধের জটিলতার কবলে সেটা শুরু করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া কবে নাগাদ জাহাজ চলাচল শুরু হবে সেটাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রাণলয়ের সভায় সেন্টমার্টিনের বিষয়ে নানাবিধ নিষেধ আরোপ করে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অসমা শাহীনের সই করা একটি পরিপত্র জারি করে।
পরিপত্রে উল্লেখিত পাঁচটি বিষয় হলো- সেন্টমার্টিনে নৌযান চলাচলের বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণ করে অনুমতি প্রদান করবে। নভেম্বর মাসে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে দিনে ফিরে আসতে হবে, রত্রিযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপন করা যাবে। পর্যটকের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে রাতে আলো জ্বালানো যাবেনা, শব্দ দূষণ সৃষ্টি করা যাবে না। বার-বি-কিউ পার্টি করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহি জাহাজ মালিকেদের সংগঠন সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের প্রথম দিন থেকে সেনটমার্টিন দ্বীপে পর্যটনবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়ে আসছে। এবারও তিনটি জাহাজ চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। এরমধ্যে সাড়ে ৩০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার কেয়ারী সিনবাদ, সাড়ে ৭০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার কর্ণফুলী, সাড়ে ৮০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার বার আউলিয়া জাহাজ প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সম্মতি এখনও পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের সম্মতির ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। ফলে সম্মতি না পেলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিতে পারছেন না। কবে থেকে এই অনুমতি পাওয়া যাবে সেটাও নিশ্চিত করা বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে আলাপ করা সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য ইতোমধ্যে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় অনুমতি দিয়েছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে জাহাজ চলাচলের কথা রয়েছে। কিন্তু সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিতকরণের সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াগত বিষয়টি সম্পাদনে কাজ চলছে। এটি চূড়ান্ত হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে দ্রুততম সময়ে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হবে।
এদিকে প্রশাসনিক বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় জাহাজ চলাচলের অনুমতির বিষয়টি আটকে গেছে বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
একাধিক জাহাজ মালিক পক্ষের প্রতিনিধিরা জানান, মূলত সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক না যাওয়া এবং নভেম্বরে যাওয়া পর্যটকরা রাতযাপন করতে না পারার বিষয়টিকে বাস্তবায়ন করা নিয়ে জটিলতাটি তৈরি হয়েছে। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ বিষয়ে একটি অ্যাপের আদলে ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এটি ব্যবহার করে বিষয়টি জাহাজ মালিকদের পক্ষে বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু জাহাজ মালিকরা এই দায়িত্ব নিতে রাজী নন।
এছাড়া এটি জাহাজ মালিকরা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। দুই হাজারের বেশি পর্যটক না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি এখনও পর্যটন সংশ্লিষ্ট কেউ গ্রহণ করেনি। এরা ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বীপের মানুষ গণহারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এটা জাহাজ কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিলে উল্টো দ্বীপবাসীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা ক্ষুব্ধ হবেন।
সেন্টমার্টিনে দুই হাজারের বেশি পর্যটন না যাওয়া, দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াত সীমিতকরণ ও পর্যটকদের রাতযাপন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সেন্টমার্টিন’স দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা-উন্নয়ন জোট নামের এক সংগঠন ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। সেন্টমার্টিন সংশ্লিষ্ট ১৩ সংগঠনের জোট এটি। যেখানে রয়েছে ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার, হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন্স, সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, রেস্টুরেন্ট ওনার্স এসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন্স, বাংলাদেশ স্লিপার এসি বাস মালিক সমিতি, সেন্টমার্টিন বাজার দোকান ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, বোট মালিক সমিতি, স্পিড বোট মালিক সমিতি, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব সেন্টমার্টিন্স, সেন্টমার্টিন মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি, সেন্টমার্টিন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সেন্টমার্টিনের শিক্ষার্থী, সেন্টমার্টিন অটোরিক্সা মিনি টমটম ভ্যান মালিক সমবায় সমিতি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের রাতযাপন নিষিদ্ধ এবং ভ্রমণ সীমিতকরণের কারণে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিন লাখের বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাই পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করে পর্যটক যাতায়ত অব্যাহত রাখতে সুপরিকল্পিত সংস্কারের দাবি তুলে দ্বীপবাসি ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
সারাবাংলা/এনজে