কাজে লাগেনি কোনো হিসাব, অজেয় ট্রাম্প
৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৩
দীর্ঘ নির্বাচনি প্রচার আর নানা হিসাব-নিকাশ পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস থাকলে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করেছেন সহজেই। তিন অঙ্গরাজ্যের ফল ঘোষণা বাকি থাকতেই ২৭৭টি ইলেকটোরাল কলেজ নিশ্চিত করে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজের দরজায় এখন ট্রাম্প।
দ্য গার্ডিয়ানের খবর বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ৪৭টি রাজ্যের ফলাফলে ২৭৭টি ইলেকটোরাল কলেজ পেয়ে জয়ের বন্দরে তরী ভিড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ পর্যন্ত কমলার ঝুলিতে ইলেকটোরাল কলেজ ২২৪টি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজের মধ্যে কোনো প্রার্থী ২৭০টি অর্জন করতে পারলেই জয় নিশ্চত হয়।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দিনভর ভোট গ্রহণের পর স্থানীয় সময় মধ্যরাত থেকে ফলাফলের গ্রাফ ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকে পড়তে শুরু করে। ট্রাম্প অবশ্য ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ নিশ্চিত হওয়ার অপেক্ষায় থাকেননি। ২২০টি ইলেকটোরাল কলেজ নিশ্চিত হওয়ার পর বাকি রাজ্যগুলোতেও এগিয়ে থাকায় নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেন।
ফ্লোরিডায় এক ওয়াচ পার্টিতে হাজির হয়ে ট্রাম্প ‘এক অসাধারণ বিজয়’ পেয়েছেন ঘোষণা করে বলেন, এটি হবে আমেরিকার স্বর্ণযুগ। এটি আমেরিকার মানুষের জন্য একটি অসাধারণ বিজয়, যা আমাদের আবার আমেরিকাকে মহান করতে সাহায্য করবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এ জয়কে ‘রাজনৈতিক বিজয়’ বলে মন্তব্য করে আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করায় ভোটারদের ধন্যবাদ জানান। তার বক্তব্যর সময় পাম বিচের জড়ো হওয়া জনতারা ‘আমেরিকা’, ‘আমেরিকা’, ‘আমেরিকা’ বলে উল্লাস করতে থাকে।
এ সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জে ডি ভ্যান্স। বক্তব্যের একপর্যায়ের ট্রাম্প স্ত্রী মেলানিয়াকেও ধন্যবাদ জানান।
এই জয়ের ফলে ট্রাম্প এক নতুন ইতিহাস গড়লেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে জয় পেয়ে প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তিনি। ২০২০ সালের নির্বাচনে আবার তাকে হারতে হয়েছিল জো বাইডেনের কাছে। এবার কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলেন ট্রাম্প।
২০২০ সালের ওই নির্বাচনের পর ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পতন প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করা হয়েছিল। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চরম বিশৃঙ্খলা এবং অনেক রিপাবলিকান সদস্যের বিরোধিতা, এমনকি তার নিজের দলের সমর্থকদের একাংশের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল। কিন্তু আজ তিনি এবং তার অনুসারীদের সমর্থনে ফের হোয়াইট হাউজে ফিরতে চলেছেন।
মার্কিন রিপাবলিকান নেতারা ও তার অনুগতরা ট্রাম্পকে পুনরায় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ফিরিয়ে আনেন, বিশেষ করে কেভিন ম্যাককার্থির মতো রিপাবলিকান নেতারা। এরপর ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করে তার রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছিল।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ট্রাম্প তার প্রচার শুরুর পর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন– আইনি মামলা, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং ব্যক্তিগত বিতর্ক ছিল তার সঙ্গী। প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্তও হয়েছেন। এর মধ্যে নির্বাচন ঘিরে পরিচালিত বেশির ভাগ জনমত জরিপে ছিল কমলা হ্যারিসের জয়জয়কার। কিন্তু সবকিছুকে ছপিয়ে ক্রমাগত জনমতকে নিজের পক্ষে এনেছেন ট্রাম্প। শেষ পর্যন্ত জয়ও এলো তার ঘরে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক বাধা ও আইনি ঝুঁকি পেরিয়ে এ অবস্থানে পৌঁছানো ট্রাম্পের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বিরল অর্জন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রত্যাবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ও রিপাবলিকান পার্টির ভবিষ্যত নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এবারের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়াও গ্রিন পার্টির জিল স্টেইন, লিবারটারিয়ান পার্টির চেইস অলিভার, স্বতন্ত্র প্রার্থী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র (নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেও এখনো বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যের ব্যালটে তার নাম রয়েছে) ও করনেল ওয়েস্ট (স্বতন্ত্র) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
সারাবাংলা/এইচআই/টিআর
৪৭তম প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যরিস ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নির্বাচন