Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এ দেশ ফিলিস্তিন-কাশ্মির হোক, সেটা আমরা চাই না’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৪০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী লেনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ ও হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম’।

বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় রাসেল আহমেদসহ আরও কয়েকজন সংগঠক বক্তব্য রাখেন। এতে কয়েক শ শিক্ষার্থী যোগ দেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে মঙ্গলবার ফেসবুকের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে হাজারী লেনে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামলাতে গেলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনা ঘটে। আহত হন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ১২ সদস্য। রাতে যৌথবাহিনী হাজারী লেনে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ৮০ জনকে আটক করে। তবে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে ৮২ জনকে আটকের তথ্য দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় সনাতন ধর্মবিশ্বাসী সংগঠন আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সমর্থকরা জড়িত বলে জানিয়েছে।

এর প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে চবি শিক্ষক শহীদুল হক বলেন, ‘একটি উগ্রবাদী সংগঠন আমাদের এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। আমরা চাই না, বাংলাদেশ ফিলিস্তিন হোক। আমরা চাই না, বাংলাদেশ কাশ্মির হোক। আমরা চাই না, বাংলাদেশ মিয়ানমার হোক। এ দেশের কোটি কোটি মুসলমান, আমরা শান্তিপ্রিয়। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। এ কারণে আমরা ছোটবেলায় হিন্দু শিক্ষকের কাছে যেমন পড়েছি, একইসঙ্গে হিন্দু ভাইয়েরা মুসলমান শিক্ষকের কাছে পড়েছে। কখনোই সাম্প্রদায়িক উসকানি দিইনি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘একটি ছেলে ফেসবুকে ইসকনের বিষয়ে একটি পোস্ট দিয়েছে। সে ক্ষমাও চেয়েছে। তারপরও তার দোকানে হামলা করেছে, আক্রমণ করেছে, ভাঙচুর করেছে। এগুলো কীসের নমুনা? তোমরা কি আমাদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বানাতে চাও? তোমরা কি আমাদের মিয়ানমার বানাতে চাও? তোমরা কি আমাদের কাশ্মীর বানাতে চাও? স্পষ্ট করে একটা কথা বলতে চাই— এ দেশের কোটি কোটি ছাত্র-জনতা থাকতে এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’

সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘কিছু উগ্রবাদী সংগঠন আওয়ামী লীগের দালাল হয়ে, আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে আমাদের দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। আমাদের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমরা যখন আওয়ামী ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলাম, তখন এই সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করেছিল। তাদের ওপর উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠন হামলা করেছে। হুঁশিয়ার করে দিতে চাই— আমাদের এই দেশকে যদি অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হয়, সেই ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দেবো। ষড়যন্ত্রকারীদের ঠাঁই এ বাংলার মাটিতে হবে না। যেদিকে পা বাড়াবেন, সেই পা আমরা ভেঙে দেবো।’

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান— সবাই মিলেমিশে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়েছি। আওয়ামী লীগ হিন্দু, মুসলিম— প্রতিটি ধর্মকেই রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু আমরা বলি, আমরা সবাই এ বাংলাদেশের নাগরিক। আপনাদের অন্ধ চোখ আপনারা খুলুন। কারও রাজনীতির হাতিয়ার আপনারা হবেন না। আমাদের নতুন বাংলাদেশ ভারত-আমেরিকা গঠন করে দেয়নি, হাজার-হাজার ছাত্র-জনতার রক্তে নতুন বাংলাদেশ হয়েছে। সুতরাং এ বাংলাদেশকে নিয়ে কেউ উগ্রবাদি কর্মকাণ্ড করলে ছাত্র-জনতা সেটা সহ্য করবে না।’

হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সভা-সমাবেশ করা সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমরা দেখেছি, ইসকন কিংবা এ ধরনের সংগঠন যখন সমাবেশ করে, তাদের পেছনে অনেক আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ কিংবা তাদের দোসরেরা থাকে। তাদের নিয়ে সতর্ক হবার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের সব যৌক্তিক দাবিতে আমাদের সমর্থন থাকবে।’

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘ভারতের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান, আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, ভারত যাদের বাবার বাড়ি বাংলা ছাড় তাড়াতাড়ি, দিল্লি না ঢাকা/ ঢাকা ঢাকা ঢাকা, উগ্রবাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না— এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর