গেন্ডারিয়ায় চাঞ্চল্যকর ২ অটোরিকশা চালক হত্যার রহস্য উদঘাটন
৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৪৭
ঢাকা: গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা এলাকায় দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ছালেহ উদ্দিন এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতাররা হলেন— জালাল সরদার ওরফে মাইকেল (২১), ফজলে রাব্বি ওরফে কালা (২৫) ও মো. ইমরান (৩০)।
উপকমিশনার বলেন, ‘গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ভিকটিম রিকশা চালক জিন্নাহ (৬০) গেন্ডারিয়ার জুরাইনের একটি গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশে বের হন। পোস্তগোলা থেকে অজ্ঞাতনামা দুজন যাত্রী নিয়ে ওই দিন দিবাগত রাত আনুমানিক তিন ঘটিকায় গেন্ডারিয়া আঞ্জুমান কবর স্থানের সামনে পোঁছালে ওই দুজন যাত্রী পেছন থেকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতরভাবে আঘাত করে। ভিকটিমের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অজ্ঞাতনামা দুজন যাত্রী পালিয়ে যায়। উপস্থিত লোকজন ভিকটিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভিকটিম জিন্নাহর ছেলে মো. ইউসুফ হোসেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেন্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।’
এই মামলার তদন্ত চলাকালীন গত ১৫ অক্টোবর রাত আড়াইটার দিকে গেন্ডারিয়ার দ্বীননাথ সেন রোডে কচিকাচা বিদ্যানিকেতন গলিতে রিকশা চালক আনোয়ার (৪০) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করে হত্যা করে আরও একটি অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ২১ অক্টোবর ভিকটিমের চাচাতো ভাই মো. মানিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেন্ডারিয়া থানায় আরও একটি হত্যা মামলা করা হয়।
দুটি মামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দুটি ঘটনারই মোডাস অপারেন্ডি (অপরাধের কৌশল) একই ধরনের। পুলিশ নিশ্চিত হয় একটি নির্দিষ্ট অপরাধী চক্র এই ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত। তদন্তকালে ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনাসহ সকল ধরনের তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় দুইজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় এই একই অপরাধী চক্র দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িত। তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় দুইজনের মধ্যে একজনের নাম জালাল সরদার ওরফে মাইকেল। পরবর্তী সময়ে গত ২৪ অক্টোবর ভোর সাড়ে পাঁচ ঘটিকায় পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জালাল দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। সে জানায়, আঞ্জুমান কবর স্থানের পাশে অটোরিকশা চালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় তার সাথে ফজলে রাব্বি কালাও ছিলো কিন্তু দ্বীননাথ সেন রোডে কচিকাচা বিদ্যানিকেতন গলিতে অটোরিকশা চালক আনোয়ারকে হত্যাসহ রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা সে একাই করেছে। সে আরও জানায়, এই ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি গেন্ডারিয়ার মো. ইমরান (৩০) নামে একজনের নিকট ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। ২৫ অক্টোবর রাত প্রায় দুই ঘটিকায় গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ ডিআইটি প্লট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত আনোয়ারের ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি মো. ইমরান এর হেফাজত থেকে উদ্ধার করে এবং ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা ক্রয়ের অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়।
গ্রেফতার জালাল সরদার ওরফে মাইকেল আঞ্জুমান কবর স্থানের সামনে অটোরিকশা ছিনতাই ও রিকশা চালক আনোয়ার হত্যার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ২৫ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে গেন্ডারিয়ার কবর স্থান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফজলে রাব্বি ওরফে কালাকে গ্রেফতার করা হয়। ওইদিন তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে ফজলে রাব্বি ওরফে কালা অটোরিকশা চালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে এবং জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় মাইকেলের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। গ্রেফতার মাইকেলও জিন্নাহ হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করে ৬ নভেম্বর বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। দুটি মামলারই সুষ্ঠু তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই