ট্রাম্পের জয়ে হুমকির মুখে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীরা
৭ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০২ | আপডেট: ৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৯
ঢাকা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে দেশটিতে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীরা’ হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস।
তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারের কেন্দ্রে ছিল অভিবাসন বিরোধিতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ১১ মিলিয়ন বা সোয়া কোটি অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই তাদের জোর করে তাড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করবে। প্রয়োজনে সামরিক শক্তি ব্যবহার করবেন। এদের মধ্যে আমরাও আছি। কাগজপত্রবিহীন বাংলাদেশি অভিবাসীরা এই তালিকায় পড়বেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম সারাবাংলা ডটনেটের ‘সারাবাংলা সম্পাদকীয়’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করে। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সারাবাংলা ডটনেটের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সারাবাংলা সম্পাদকীয় অনুষ্ঠানের ‘মার্কিন নির্বাচন: ২০২৪’ পর্বটি প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান বার্তা সম্পাদক (সিএনই) রহমান মুস্তাফিজ।
অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস বলেন, সত্যি সত্যিই যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অভিবাসী খেদাও’ নীতি বাস্তবায়ন করেন, তাহলে আমরা বিপদে পড়ব। এর মধ্যে কেবল ১১ মিলিয়ন আনডক্যুমেন্টেড মানুষ না, আরও অনেক বেশি মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়কেব।
হাসান ফেরদৌস বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করলেন এভাবে— ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীর সঙ্গে তাদের পরিবারও যুক্ত। হয়তো কোনো পরিবারে মা-বাবা অবৈধ (আনডক্যুমেন্টেড) অভিবাসী। কিন্তু তার সন্তান জন্ম নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেই সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। সেখানকার পূর্ণ অধিকার তার রয়েছে। এখন ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীকে তাড়াতে হলে দেখা যাবে তাদের পরিবারের সদস্য আরও ১১ মিলিয়ন বা হয়তো তারও বেশি বৈধ (ডক্যুমেন্টেড) নাগরিক সমস্যায় পড়বেন। তারা সেখানে বড় হয়েছে, ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বসবাস করছে, চাকরি করছে, বাড়ি-গাড়ি করেছে। এমন অনেকেই হয়তো এই ‘অভিবাসী খেদাও’ নীতির মধ্যে পড়বেন, যেখানে বাংলাদেশিরাও রয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়কে ‘নাটকীয়’ অভিহিত করে হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘কমলা হ্যারিস ও ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় সমানে সমান ছিল। নানা জরিপে নানা তথ্য উঠে আসছিল। তবে সবকিছুকে ভুল প্রমাণ করে নাটকীয়ভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় হয়েছে। আমরা সবাই বলেছিলাম, লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি। অথচ ট্রাম্প বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় ও বাংলাদেশে এর প্রভাব নিয়ে মূল্যায়ন জানতে চান রহমান মুস্তাফিজ। জবাবে হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘নির্বাচনের আগে থেকেই আমরা বলে আসছি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় আমেরিকার জন্য দুঃসংবাদ। হোয়াইট হাউজের দুই কক্ষই রিপাবলিকদের নিয়ন্ত্রণ। সুপ্রিম কোর্টেও রিপাবলিকদের নিয়ন্ত্রণ বা রিপাবলকপন্থি বিচারকদের প্রাধান্য। ক্ষমতার চারটি ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বা দলীয় নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। একজন লোক, বিশেষ করে এমন একজন কর্তৃত্ববাদী লোকের হাতে এত ক্ষমতা মোটেও ভালো নয়। ফলে আমেরিকার গণতন্ত্র অনেটাই বিপদের মুখে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘প্রজেক্ট ২০২৫’-এর কথা উল্লেখ করে এই প্রবাসী সাংবাদিক বলেন, ট্রাম্প এই প্রজেক্টের কথা কখনো স্বীকার করেন না। কিন্তু তার সময়ের হোয়াইট হাউজের ৩০ থেকে ৩৫ জন সহকর্মী ও অত্যন্ত রক্ষণশীল থিংক ট্যাংক হেরিটেজ ফাউন্ডেশন মিলে সেই প্রকল্প তৈরি করেছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশ ও দেশের বাইরের সবারই উদ্বেগের কারণ আছে, আমিও উদ্বিগ্ন।’
সারাবাংলার সিএনই রহমান মুস্তাফিজ বলেন, ‘আপনি নাটকীয় বিজয় বলছেন। এর পেছনে কি ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রেট আমেরিকা স্লোগান কোনো ভূমিকা রাখেনি? যত গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবেই দেখি না কেন, একজন নারীকে কি প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা মেনে নিতে পারেননি? কমলা ভারতীয়, কৃষ্ণাঙ্গ— এসব ইস্যু কি কোনো ভূমিকা রাখেনি?’
জবাবে হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘না। কমলা হ্যারিস নারী, কালো বা দক্ষিণ এশীয় বলে তার পরাজয় হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছে, নারী প্রেসিডেন্টে তাদের আপত্তি নেই। এর আগে দেখেছি, হিলারি ক্লিনটন ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। তিনি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের চক্করে পড়ে পরাজিত হন। আমেরিকা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেই জিতে যাবেন, বিষয়টি এমন নয়। সর্বনিম্ন ২৭০টি ইলেক্ট্রোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে জিততে হলে। সে কারণে বেশি ভোট পেয়েও হিলারি নির্বাচিত হননি।’
‘এবার অবশ্য ভিন্ন কথা। ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট যেমন পেয়েছেন, মোট ভোটের হিসাবেও অনেক বেশি ভোট পেয়েছেন। এর একাধিক কারণ রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচার চালিয়েছেন চার বছর ধরে। বলা যায়, আগের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরদিন থেকে তিনি প্রচার শুরু করেছিলেন। সেখানে কমলা হ্যারিস মাত্র তিন মাস আগে প্রচার শুরু করেছেন। জো বাইডেন এই প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পরই কেবল তিনি এই প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। এটি একটি ফ্যাক্টর,’— বলেন হাসান ফেরদৌস।
তিনি আরও বলেন, ‘তার চেয়েও বড় কথা, কমলা হ্যারিস বর্তমান প্রেসিডেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এই মুহূর্তে জো বাইডের পক্ষে আমেরিকার মানুষের সমর্থন মাত্র ৪০ শতাংশ। আমেরিকার ৭২ শতাংশ মানুষ মনে করে, দেশ ভুল পথে চলছে। যে প্রেসিডেন্টর আমলে দেশের মানুষ মনে করে দেশ ভুল পথে চলছে, তারই ভাইস প্রেসিডেন্ট কী করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে? কোনো যুক্তিতেই এটা খাটে না।’মার্কি
ন জনগণের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার কারণেই ট্রাম্প জয় পেয়েছেন উল্লেখ করে হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা বিবেচনায় কমলা হ্যারিস নিজেকে বাইডেন প্রশাসন থেকে বিচ্ছন্ন করতে পারেননি। আমি কি কমলা হ্যারিসের নামে বাইডেনকেই আবার নির্বাচিত করছি? নাকি নতুন মুখ দেখতে চাই? মানুষ আসলে পরিবর্তন চায়। যেহেতু আগেরটি ব্যর্থ, তাই নতুন কাউকে আমি চাই। নির্বাচনে এ বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
অবৈধ অভিবাসী অভিবাসন কমলা হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ রহমান মুস্তাফিজ হাসান ফেরদৌস